রাজনৈতিক কর্মসূচী, জনগণের ভোগান্তি
১২ নভেম্বর ২০২২শুক্রবার আওয়ামী যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত মহাসমাবেশে সড়ক বন্ধ, যানবাহন সংকট, যানজট সব মিলিয়ে ছুটির দিনে রাজধানীতে বের হওয়া মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন৷ অন্যদিকে, শনিবার ফরিদপুরে বিএনপি’র সমাবেশের একদিন আগে থেকে আট জেলায় চলছে পরিবহণ ধর্মঘট৷ ভোগান্তি প্রহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে৷ জনগণের স্বার্থে নাকি রাজনীতি! তাহলে জনগণের সবক্ষেত্রে ভোগান্তি কেনো!
ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের এখানে রাজনীতির দু’টি ধারা- একটি সমাজ পরিবর্তনের, আরেকটি ক্ষমতা কেন্দ্রিক৷ ১৯৪৭, ১৯৬৯, ১৯৭১ সালে আমরা সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতি দেখেছি৷ এখন যেটা হচ্ছে সেটা ক্ষমতা কেন্দ্রিক৷ দুই দল যে রাজপথে আছে, তাদের একটি দল ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, আরেকটি দল ক্ষমতায় আসতে চায়৷ ফলে তাদের উভয়ের আদর্শ একই৷ এখন যদি শিক্ষিত-সচেতন মানুষ সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতিতে মনোযোগ দেয় তাহলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে৷’’
শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের মহাসমাবেশের কারণে ঢাকার বেশকিছু সড়কের যান চলাচল বন্ধ ছিল৷ যেসব সড়কে যান চলাচল করেছে সেখানেও ছিল সমাবেশগামী বাড়তি গাড়ির চাপ৷ সকাল থেকে মিছিল-শোডাউন নিয়ে মহাসমাবেশস্থলে যেতে থাকেন নেতাকর্মীরা৷ এতেও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে৷ গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ, নিউমার্কেটসহ অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশের এলাকায় যানজট ছিল সবচেয়ে বেশি৷ পাশাপাশি মহাসমাবেশের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাস সংকট দেখা দেয়৷ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বাস রিজার্ভ নেওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়৷ এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা৷ বাস সংকটে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছিলেন নারী ও বয়স্করা৷ বাস না থাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাচালকরাও নিয়েছেন বাড়তি ভাড়া৷
ফরিদপুরে শুরু হয়েছে বিএনপির সমাবেশ৷ কিন্তু এর আগে শুক্রবার থেকে ফরিদপুরের আশপাশের মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে৷ মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের দাবিতে এ ধর্মঘট ডাকে ফরিদপুর জেলা বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ৷ শুধু ফরিদপুর নয়, আশপাশের মাগুরা, রাজবাড়ি, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ ৮ জেলায় চলছে এই পরিবহণ ধর্মঘট৷ এতে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ৷
শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে৷ ফরিদপুর জেলা বিএনপির অভিযোগ, শনিবার ফরিদপুরে তাদের বিভাগীয় গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের যাওয়া ঠেকাতে সরকার ও প্রশাসনের ইন্ধনে এই বাস ধর্মঘট ডাকা হয়েছে৷ এর আগে গত ২২ অক্টোবর খুলনার এবং ৩০ অক্টোবর রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগেও সেখানকার পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকরা একই দাবিতে বাস ধর্মঘটের ডাক দেন৷ ধর্মঘটের কারণে শুক্রবার সকাল থেকেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা৷
রফিকুল ইসলাম নামে একজন বাস শ্রমিক বলেন, ‘‘আমরা ধর্মঘট করছি, আমাদের নেতারা বলছেন তাই৷ আমাদের নেতাদের কথায় চলতে হয়, তবে আমাদের তো টাকা আয় না করলে প্রতিদিন ঘরে চাল জোটে না৷ আমরা যে বসে আছি, এর জন্য কেউ আমাদের টাকা দিচ্ছে না৷’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘আগামী বছর নির্বাচন৷ ফলে আমরা তো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বলতে পারি না৷ কিন্তু রাজনীতিটা যেহেতু জনগণের জন্য ফলে তাদের এমন কর্মসূচী দিতে হবে যাতে জনগন ভোগান্তিতে না পড়েন৷ এখন জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করতে গিয়ে তারা জনগণের বিরক্তির কারণ হয়ে যাচ্ছেন কিনা সেটাও তাদের ভাবতে হবে৷’’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সমাবেশ ‘সরকারি সুবিধায়’ হয়েছে৷ সব রাস্তা-ঘাট বন্ধ৷ এভাবে সব আয়োজন করা হয়েছে৷ বুঝতে পারেন একটা দলের সম্মেলন করতে তাদের এতো কিছু জোগাড় করতে হচ্ছে, সরকারি এতো কিছুর সুযোগ-সুবিধা নিতে হচ্ছে৷ রাস্তা-ঘাটের অবস্থা দেখে মনে হলো যে, বাংলাদেশ একটা একদলীয় শাসনের মধ্যে আছে৷ মনে হলো এখানে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে৷ অথচ বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের দুই-তিনদিন আগে পরিবহণ ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে৷ অর্থাৎ বিএনপির বেলায় সব বন্ধ৷ এই পরিস্থিতিতে বিএনপির আন্দোলনটা এখন বিপ্লবে পরিণত হয়েছে৷’’
তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘পরিবহণ মালিকরা যদি বাস না চালান আমরা কী করতে পারি? আমি নিজে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে বিএনপির কর্মসূচীতে গাড়ি বের করতে ভয় পান পরিবহণ মালিকরা৷ আর যুবলীগের সমাবেশ হয়েছে ছুটির দিন৷ যেদিন খুব বেশি মানুষ রাস্তায় বের হন না, অফিস আদালতও বন্ধ৷ জনগণের যাতে ভোগান্তি না হয় সেই চিন্তা থেকেই যুবলীগের সমাবেশ ছুটির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে৷’’