1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে দুর্নীতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব’

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে কতটা কার্যকর এ নিয়ে নানা আলোচনা আছে৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সাফল্য, ব্যর্থতা, সীমাবদ্ধতার কারণ- সব বিষয়েই কথা বলেছেন দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান৷

https://p.dw.com/p/47bp9
ছবি: DW

ডয়চে ভেলে : দুর্নীতি দমন কমিশন আসলে কতটা শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান?

মো. বদিউজ্জামান : আইন অনুসারে তো যথেষ্ট শক্তিশালী৷ এতে কোনো সন্দেহ নেই৷ মানুষ হিসেবে ভ্যারি করে৷ কিছুদিন আগে একটা ছেলেকে নিয়ে যে ঘটনাটা ঘটলো, সেটা তো আইন অনুসারেই করেছে৷ এটা তো আইনের মধ্যে আছে৷ মূল আইনে যদিও ছিল না৷ লে. জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন তিনি এটা করেছেন৷ তখন থেকে এটা আইনের মধ্যে আছে৷ এখন এটা সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কিনা সেটা দেখার বিষয়৷

দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকের কোনো আইনি সংকট আছে?

আইনি কোনো সংকট আছে বলে আমার মনে হয় না৷ যে আইন আছে, সেটা যথেষ্ট বলেই আমি মনে করি৷

বলা হয়, ছোট ও মাঝারি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুদক ব্যবস্থা নেয়, কিন্তু বড় দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারে নীরব থাকে, এমন অভিযোগ কেন?

আসলে যারা কাজ করে, তাদের কাজের উপর নির্ভর করে৷ তারা আন্তরিকভাবে করছে কিনা সেটার উপর নির্ভর করে৷ যদি আন্তরিকতার সঙ্গে করে, তাহলে তো প্রশ্ন উঠার কথা না৷ আইনে সব ব্যবস্থা আছে, এখানে কোনো ঘাটতি নেই আমার বিবেচনায়৷

দুদক কি আসলেই সব ধরনের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে?

আসলে আইন অনুসারে সবকিছুই পারে৷ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে৷ তাদের ইচ্ছের উপরও নির্ভর করে৷ এখন ধরেন, যে ছেলেটাকে চাকরিচ্যুত করা হলো, বলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ আছে৷ পত্রিকায় তো দেখলাম তার কোনো সম্পদ নেই৷ ফলে বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করতে হবে৷ না হলে তো বোঝা যাবে না৷

‘আইন অনুসারে দুদক যথেষ্ট শক্তিশালী’

অনেক সময় বলা হয়, দুদকের উপর প্রভাবশালীদের চাপ থাকে৷ আসলেই কি এমন কোনো চাপ থাকে? আপনি কি এমন কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন?

আমি এমন কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি৷ আসলে দুর্নীতি যারা করে, তারা তো চাপ দেয় না, অন্যকে দিয়ে দেওয়ায়৷ সরাসরি যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তারা ধারে-কাছেও আসতে পারে না৷ পরোক্ষভাবে চাপ যে নেই, সেটা আমি বলবো না৷ সার্বিকভাবে দেশের যে অবস্থা, সেটা একটা সমস্যা৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে হয় না, তা নয়৷

সর্বশেষ যে শরীফকে চাকরিচ্যুত করা হলো, মিডিয়ায় আসার পর দুদকের তরফ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হলো, আগে থেকে ব্যাখ্যা এলে কি বিতর্ক এড়ানো যেতো না?

একটা ব্যবস্থা নেওয়া হলে তখন প্রশ্ন উঠে৷ যখন তখন তো ব্যাখ্যা দেওয়ার দরকার হয় না৷ বিতর্ক যখন উঠে তখন ব্যাখ্যা দেওয়ার দরকার হয়৷

শরীফকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে যে আইনে, অনেকেই আইনটিকে বিতর্কিত বলছেন, আপনি কী বলবেন?

আইন বিতর্কিত না৷ আইনের প্রয়োগটা সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা সেটা দেখার বিষয়৷ আইনের তো দরকার আছে৷ কোনো কর্মকর্তা যদি কাউকে হয়রানি করে, অনৈতিক কিছু করে, তার বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নেওয়া যেতেই পারে৷ আসলে সে হয়রানি করেছে কিনা সেটা দেখতে হবে৷ আবার এই হয়রানি করে তিনি কতটা লাভবান হয়েছেন সেটাও দেখার বিষয়৷ সবদিক না দেখলে তো বোঝা যাবে না৷

আপনার সময়ে কি কাউকে এই আইনে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে?

আমার তো মনে পড়ে না৷ তবে আমার সময় অবসরে পাঠানো হয়েছে৷ যাদের সতর্ক করার পরও সংশোধন হচ্ছে না, তাদের ক্ষেত্রে হয়েছে৷ সরকারি সব কর্মচারীর জন্য একটা আইন আছে চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলে সরকার তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দিতে পারে৷ এর ফলে তিনি অবসরের সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন৷ কিন্তু এই ছেলেটা তো কোনো বেনিফিট পাবে না৷ কারণ, ওর চাকরির বয়স ৬-৭ বছর হয়েছে৷

জব্দ করা অর্থ কোথায় যাবে- দুদক আইনে এর সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই, বিষয়টা কি আপনার নজরে এসেছিল?

এই মুহুর্তে সঠিকভাবে মনে পড়ছে না৷ সাধারণত আদালত থেকেই নির্দেশনা দেয়৷ সরকারি তহবিলেই যায়৷ আবার কারো টাকা যদি তসরুপ হয়, তিনি একটা অংশ ক্ষতিপূরণ পান৷ পুরোটাই আদালতের সিদ্ধান্তে হয়৷

দুদকের জব্দ করা অর্থ কতদিন তদন্ত কর্মকর্তা নিজের কাছে রাখতে পারবেন- আইনের কোথাও এটা বলা নেই৷ নতুন করে এটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, এটার সমাধান কীভাবে হতে পারে?

বিষয়টা সঠিকভাবে আমার মনে নেই৷ তবে যিনি তদন্ত কর্মকর্তা, তার নিজের কাছে তো রাখার কথা না৷ জব্দকৃত টাকা কোনো না কোনোভাবে সরকারের কোষাগারেই থাকবে বা দুদকের অ্যাকাউন্টে থাকবে৷ কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা তো নিজের অ্যাকাউন্টে কোনোভাবেই রাখতেই পারবেন না৷ ক্যাশ টাকা নিজের কাছে রাখা তো বেআইনি হবে৷

দুদকে আপনি কাজ করতে গিয়ে কোনো আইনগত সমস্যায় পড়েছেন?

আমি এমন কোনো পরিস্থিতিতে পড়িনি৷

দুদকের নিজস্ব কর্মকর্তা আর বিভিন্ন সংস্থা থেকে আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব কি কখনো আপনার নজরে এসেছে?

এটা মানসিকতার ব্যাপার৷ দুদকের নিজস্ব কিছু কর্মকর্তা আছেন৷ প্রথম থেকে তো তারাই ছিলেন৷ পরে মনে হলো, বাইরে থেকেও যদি ভালো কিছু অফিসার পাওয়া যায়৷ আইনের মধ্যে কিন্তু এটা আছে৷ পত্রিকায় দেখি, এখন বাইরে থেকে অনেক বেশি অফিসার আসছে৷ যারা সম্পৃক্ত আছে তারা আসতে পারে৷ যেমন প্রশাসন, পুলিশ, ট্যাক্সের লোকজন আসতে পারে৷ প্রশাসন থেকে একটু বেশি আসে৷ পুলিশের থেকেও আসে৷ আমি থাকতে ডিজি পর্যায়ের একজন নিতে পুলিশের একজন ডিআইজি খুঁজছিলাম৷ আইজিকে বললাম, একজন সৎ ও যোগ্য অফিসার দিতে৷ তিনি খুঁজে একজনকে পাঠালেন৷ খোঁজ নিয়ে দেখলাম, তিনি অত্যন্ত সৎ মানুষ৷ তিনি একদিন আমার কাছে এসে বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘‘স্যার আপনি চাইলে তো আমাকে আসতেই হবে৷ তবে আমি এখানে আসলে ক্ষতিগ্রস্ত হবো৷ কারণ হিসেবে তিনি বললেন, বেতনের বাইরে ন্যায্যভাবেই তিনি একটা ভাতা পান, যেটা এখানে আসলে পাবেন না৷ এই ভাতা না পেলে তার সংসার চালাতে কষ্ট হবে৷ পরে আর আমি তাকে নেইনি৷ এখন তো সৎ ব্যক্তি পাওয়াই মুশকিল৷

দুদকে যারা কাজ করেন, তাদের দুর্নীতি বা অনিয়ম ধরতে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাটা কী?

দুদকে একটা কমিটি আছে, তারা বিষয়টা দেখে৷ তারা ব্যক্তি বিশেষ করে না, সার্বিকভাবে দেখে৷ তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷

দুদককে বিতর্কমুক্ত করতে আপনার পরামর্শ কী?

সবাই যদি নিজের কাজটা আইন মোতাবেক করে, তাহলে তো কোনো বিতর্ক থাকবে না৷ অন্যান্য দেশে বড় ঘটনাগুলো তারা ধরে৷ আমাদের মতো এত মামলা তো তারা ধরে না৷ এখানে ছোট থেকে বড় সব ধরনের মামলাই দেখতে হয়, যার ফলে হ্যান্ডেল করাই মুশকিল হয়ে যায়৷ মাথার দিকে যদি ধরা যায়, তাহলে নীচের দিকের সবাই তো সতর্ক হয়ে যায়৷ এত মামলা তো লাগে না৷ বাইরে তো প্রধান বিচারপতি, পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধেও মামলা হচ্ছে৷ কিন্তু আমাদের এখানে কি এই পারিপার্শ্বিকতা আছে, সেটা কি সম্ভব? এখন বলবেন যে, ইচ্ছে করলেই তো পারে? কিন্তু ইচ্ছে করাটাই তো মুশকিল৷ সার্বিক পরিস্থিতিটা বুঝতে হবে৷ আমাদের দেশে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার৷ এটা থাকলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য