রাজধানীবাসীর ঈদযাত্রার নানা রূপ
ঈদের ছুটিতে পথ চেয়ে থাকা স্বজনদের সঙ্গে উৎসবের আবহে কয়েকটা দিন কাটাতে রাজধানী ছাড়ছেন অনেকে। তাই প্রতিদিন ট্রেন, লঞ্চ, বাস ও অন্যান্য বাহনে প্রচণ্ড ভিড়। ঢাকাবাসীর ঈদযাত্রা দেখুন ছবিঘরে।
প্রতিদিন ২ লাখ ট্রেনযাত্রী
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন। কমলাপুরসহ ঢাকার আশেপাশের স্টেশন থেকে প্রতিদিন ৬৯টি ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৪৪টি আন্তঃনগর ট্রেনে যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩৩ হাজার ৫০০ জন। বাকিগুলো লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন।
ট্রেনে স্বস্তি
অন্যান্যবারের মতো এবার ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা যায়নি। প্রতিদিনই কমলাপুর থেকে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থাকা লাগছে না। এবার এখন পর্যন্ত ট্রেনের ছাদে বসে যাত্রীদের চলাচল করতেও দেখা যায়নি।
সোনামনিদের আনন্দ
শিশুদের কাছে ঈদ মানেই মজা আর আনন্দ। ঈদে স্কুলে লম্বা ছুটি থাকায় ট্রেনে চড়ে দাদাবাড়ি কিংবা নানাবাড়িতে যাওয়ার চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে! ছবির এই খুদে যাত্রীর নাম ফারিন। মা-বাবার সঙ্গে সিলেট যাচ্ছে সে। তার চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক।
দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকেট
এবার শতভাগ টিকিট অনলাইনে একসপ্তাহ ধরে বিক্রি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে অনেকে অগ্রিম টিকিট কিনতে পারেননি। তবুও নাড়ির টানে বাড়ি তো যেতে হবেই! সেজন্য আসনবিহীন টিকিট কিনতেও কাউন্টারে ভিড় দেখা গেছে। প্রতিটি ট্রেন ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাওয়ার টিকিট বিক্রি হয়।
বেসরকারি ট্রেন
কমলাপুর থেকে বেসরকারিভাবে পরিচালিত সাতটি কমিউটার ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে। ঈদ উপলক্ষে এগুলোর টিকিট কাউন্টারের সামনেও বিপুল যাত্রী সমাগম দেখা গেছে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ কাটাতে দাঁড়িয়ে হলেও যাওয়া চাই তাদের। তাই আসনবিহীন টিকিট কিনতে ভিড় করেছেন তারা।
ঈদে কম গতি
মো. ইয়াসিন আলি ৩৯ বছর ধরে ট্রেন চালাচ্ছেন। সাধারণ সময় ও ঈদে ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে পার্থক্য জানতে চাইলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাধারণ সময়ে ৮০-৮২ কিলোমিটার বেগে চালাই। কিন্তু ঈদে যেহেতু যাত্রীর চাপ বেশি থাকে সেজন্য গতি কমিয়ে চালাতে হয়।’’
যাত্রীসেবার বুথ
কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীরা কেউ টিকিট অনুযায়ী ট্রেনের নির্ধারিত প্ল্যাটফর্ম চিনতে না পারলে তাদের সহায়তা করে থাকে রেলওয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুটি তথ্য কেন্দ্র। একটি বুথে দায়িত্বরত তন্নী আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তথ্য সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সজাগ আছি আমরা।’’
কমলাপুরের ‘চেনামুখ’
কমলাপুর স্টেশনের মূল ফটক থেকে ট্রেনের বগি পর্যন্ত যাত্রীদের মালামাল ওঠানো-নামানোর জন্য ট্রলি সেবা দিয়ে থাকেন লাল পোশাকধারী শ্রমিকরা। মাসুদ রানা নামে একজন ডয়চে ভেলেকে জানান, লাল রঙা শার্ট তাদের নিজেদেরই বানিয়ে নিতে হয়। প্রতিদিন একেক জন কুলি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার করেন বলেও জানান তিনি।
টিকিট যার, ভ্রমণ তার
বিনা টিকিটে স্টেশনে যাত্রীদের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনের সামনে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের অস্থায়ী গেট। দুই ধাপে টিকিট যাচাইয়ের পর যাত্রীরা ঢুকতে পারছেন। প্রিন্ট করে আনা টিকিট, কিংবা মোবাইল ফোনে দেখানো টিকিটের ছবি স্ক্যান করে নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর মিলিয়ে তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরই যাত্রীদের ভেতরে যেতে দিচ্ছেন রেল কর্মকর্তারা।
মাইকে হাঁকডাক
যাত্রী খরায় ভুগছে সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী লঞ্চগুলো। টার্মিনালে বেশ কিছু লঞ্চের কর্মী মাইকে হাঁকডাক করেন। ‘‘যারা আগে যাবেন, চলে আসুন’’, ‘‘অযথা সময় নষ্ট করবেন না’’ কথাগুলো বলে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন তারা। তাদেরই একজন এম ভি পূবালী-৫ লঞ্চের কিনারে বসে থাকা মো. জামাল।
লঞ্চের ডেকে ভিড়
রাজধানী ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে চাঁদপুর ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষের চাপ খুব একটা নেই। তবে সব লঞ্চের ডেকে যাত্রী সমাগম চোখে পড়ার মতো। বরিশাল-ঝালকাঠি-ভোলা-বরগুনা রুটের অধিকাংশ কেবিন ফাঁকাই থাকে। ডেক পরিপূর্ণ হলেও কেবিন থেকেই মূলত লঞ্চ মালিকদের লাভের বড় অংশ আসে।
লঞ্চে প্রত্যাশার চেয়ে যাত্রী কম
বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পন্টুনে বাঁধা সারি সারি লঞ্চ। চারপাশে তেমন ভিড় নেই। এবারের ঈদকে ঘিরে লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের প্রত্যাশার চেয়ে যাত্রী অনেক কম। যাত্রী আশানুরূপ না পাওয়ায় বরিশাল রুটসহ কয়েকটি লঞ্চের যাত্রা বাতিল হয়েছে। পটুয়াখালীগামী লঞ্চ অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে।
আরামের যাত্রা
লঞ্চযাত্রা এই ছবির মতো আরামদায়ক হলেও রাজধানীবাসীদের অধিকাংশই সময় বাঁচাতে পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে যাতায়াত করছেন। তবে পরিবার-পরিজন নিয়ে আরামে চলাচলের জন্য লঞ্চও বেছে নেন কেউ কেউ। ঘাটে ও লঞ্চে বেশি ভিড় না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতে ঢাকা ছাড়ছেন।
যাত্রী আকর্ষণের কৌশল
‘ঈদ উপলক্ষে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয় না’ ব্যানার টাঙিয়ে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে দূরপাল্লার কয়েকটি বাস কর্তৃপক্ষ। এসব ব্যানার কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে ঘরমুখো মানুষকে। অন্য সময়ের মতো ‘স্বাভাবিক’ ভাড়ায় ঈদযাত্রার টিকিট কাটতে পেরে খুশি তারা।
ভ্রাম্যমাণ আদালত
ঢাকার তিনটি বাস টার্মিনালে (সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত যেন কেউ না নিতে পারে সেটি নিশ্চিত করছি আমরা।’’
টিকিট কাউন্টারে অলস সময়
ঈদযাত্রার ভিড় এড়াতে চাকরিজীবী অনেকে আগেভাগে পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কয়েকদিন আগে থেকে ঈদযাত্রা শুরু হওয়ায় বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের চাপ তুলনামূলক কম। মহাখালীতে টিকিট কাউন্টারগুলোতে বিক্রেতাদের অনেকটা অলস সময় কাটছে।
যাত্রী খরায় দূরপাল্লার বাস
ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকতো। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। কোথাও যেন তেমন যাত্রী নেই! খুব কমসংখ্যক যাত্রী দূরপাল্লার বাসে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন।
মোটরসাইকেলে ১২ লাখ মানুষ!
ঈদে বাস-ট্রেন-লঞ্চ ছাড়া অন্যান্য বাহনেও বাড়ি যাচ্ছেন রাজধানীবাসীদের অনেকে। এর মধ্যে আকাশপথে অভ্যন্তরীণ রুটে যাতায়াত করছেন অনেকে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি দাবি করেছে, এবারের ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেলে ঢাকা ছাড়বে ১২ লাখ মানুষ। এছাড়া মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার ভাড়া করেও বাড়ি যাচ্ছেন অনেকে।