1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাখাইনে হিন্দুদের গণকবরের ছবি

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রাখাইনে হিন্দু গণকবরের সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী৷ তাদের দাবি, ওই গণকবরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ২৮টি মরদেহ পাওয়া গেছে৷ গণকবরের ছবি কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেয়া হিন্দুদের কাছেও ছড়িয়ে পড়েছে৷

https://p.dw.com/p/2kfjW
Myanmar Hindu-Familie in Rakhine
ছবি: Getty Images/AFP/A. Jones

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের একটি গ্রাম থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা একটি গণকবর খুঁড়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মোট ২৮টি মরদেহ উদ্ধার করেছে৷  মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, ‘‘রবিবার পাওয়া এসব লাশের মধ্যে ২০টি নারীদের এবং বাকি আটটি পুরুষ ও শিশুদের৷''

স্থানীয় এক পুলিশ কমকর্তা এএফপিকে জানান, ‘‘সরকারের তথ্য কমিটির সরবরাহকৃত ছবিতে দেখা যায়, গণকবরের পাশে মরদেহগুলো সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে৷'' তবে কোনো সংবাদমাধ্যমের পক্ষেই ছবিগুলো স্বাধীনভাবে পর্যালোচনা করা সম্ভব হয়নি৷

মিয়ানমার সেনাবাহিনী এই ঘটনায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ বা আরসা)-কে দায়ী করা হয়েছে৷ মিয়ানমার সরকারের দাবি, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এক শরণার্থী মিয়ানমারের হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করার পর রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় গ্রাম ইয়ে বাও কিয়ার কাছে তল্লাশি চালানো হয়৷ সে সময় ওই গণকবরের সন্ধান মেলে৷ মিয়ানমার সরকারের দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ওই শরণার্থী তাদের জানিয়েছেন, আরসা-র প্রায় ৩০০ জঙ্গি তাঁদের গ্রামে প্রবেশ করেছিল৷ হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ১০০ জনকে ধরে গ্রামের বাইরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে তারা৷

জগদীশ পাল

ইয়ে বাও কিয়া গ্রামের যেখানে মরদেহগুলো পাওয়া গেছে সেখানে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্পদ্রায়ের মানুষের বসবাস৷ সেই এলাকার নাম খা মং সেখ৷ গত সপ্তাহে এই এলাকার হিন্দুরাই এএফপিকে বলেছিলেন, ‘‘‘আরসা সদস্যরা ২৫ আগস্ট লাঠি ও ছুরি নিয়ে গ্রামে ঢুকে পড়ে এবং সামনে পড়া সবার ওপর আক্রমণ করতে থাকে৷তারা হিন্দু নারীদের অপহরণও করে৷''

তবে মিয়ানমার সেনাবহিনীর এই তথ্য কোনো সংবাদমাধ্যমই স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি৷ কারণ, রাখাইনে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষধোজ্ঞা আরোপ করেছে মিয়ানমার৷

এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)৷ তাদের দাবি, তারা বেসামরিকদের ওপর কোনো হামলা চালায় না এবং কোনো হিন্দুকে হত্যাও করেনি৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক অডিওবার্তায় আরসার মুখপাত্র দাবি করেন, ‘‘বৌদ্ধ উগ্রবাদীরা হিন্দু-মুসলিম বিভেদ তৈরি করতে চাইছে৷ এ জন্য তারা আরসা সদস্যদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে৷ আরসা কোনো অবস্থাতেই বেসামরিক ও সাধারণ মানুষদের টার্গেন করবে না বলে অঙ্গীকারাবদ্ধ৷''

বাবুল শর্মা

এদিকে গত ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের কক্সবাজারের কুতুপালং হরি মন্দিরের কাছে আশ্রয় নিয়েছে রাখাইনের মংডু থেকে পালিয়ে আসা প্রায় পাঁচশ' হিন্দু ধর্মাবলম্বী৷ তাঁরা রাখাইন রাজ্যের আকিয়াব জেলার মংডুর চিকনছড়ি, ফকিরা বাজার , সাহেব বাজার, পুরান বাজার ও রিক্কাপাড়াসহ কয়েকটি এলকার বাসিন্দা৷ আশ্রয় নেয়া কয়েক জন এর আগে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ২৭ আগস্ট ওইসব এলাকায় হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৮৬ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে হত্যা করা হয়৷

পালিয়ে আসা চিত্তরঞ্জন কর ডয়চে ভেলেকে এই মাসের প্রথম সপ্তাহে জানিয়েছিলেন, ‘‘যারা হামলা করেছে তারা মুখোশধারী৷ শুধু চোখ ছাড়া পুরো শরীর কালো পোশোকে ঢাকা ছিল৷ তারা বার্মিজ এবং মংডুর স্থানীয় দুই ভাষায়ই কথা বলে৷ তাদের কারো পরনেই বার্মার সেনাবাহিনীর পোশাক ছিল না৷''

সোমবার রাখাইন থেকে আসা হিন্দুদের কয়েকজন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘যেখানে হিন্দুদের গণকবর আবিষ্কারের কথা বলা হচ্ছে, সেটা আমাদের এলাকা নয়৷ তবে ওই এলাকার কথা আমরা জানি৷'' জগদীশ পাল বলেন,‘‘ গণকবরের এলাকাটি ফকিরা বাজারের পরে৷ আমার মা এখনো রাখাইনে আছেন৷ তিনিও গণকবরের কথা শুনেছেন৷ রাখাইনে থাকা আমাদের কয়েকজন হিন্দু নেতা সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে গণকবর থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছেন৷''

তিনি জানান, ‘‘আমরা ফেসবুকসহ নানা মাধ্যম থেকে ওই গণকবরের ও মরদেহের ছবি ডাউনলোড করেছি৷ তবে সেই ছবিতে কাউকে চেনা যায় না৷ মরদেহ পচে বিকৃত হয়ে গেছে৷ তাই আমাদের পরিচিত সেখানে কেউ আছে কিনা তা বুঝতে পারছি না৷'' জগদীশ পাল আরো বলেন, ‘‘আমরা গতকালই(রবিবার) গণকবর এবং মরদেহের ছবি পেয়েছি৷''

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এই হিন্দু শরণার্থীদের দেখভাল করছেন কুতুপালং হরিমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা৷ তিনি  ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফেসবুক ছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইমো-র মাধ্যমে এই ছবি এখন এখানকার অনেকেই পেয়েছেন৷ এখানে আশ্রয় নেয়া হিন্দুরা ওই এলাকার না হলেও তাঁরা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় আছেন৷ তাঁরা গতকালই (রবিবার) ছবি পেয়েছেন৷ মিয়ানমার থেকে তাঁদের কাছে ছবি পাঠানো হয়৷ মরদেহের ছবি, কবরের ছবি৷ আমি অনেকের কাছেই মোবাইল ফোনে ওই ছবি দেখেছি৷ গলা কাটা ছবিও আছে৷ তবে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চেনা যায় না৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি  বলেন, ‘‘মিয়ানমারের যে এলাকায় গণকবরের কথা বলা হচ্ছে, সেখান থেকেও হিন্দুরা পালিয়ে কক্সবাজারে এসেছে বলে শুনেছি৷ তবে এই এলাকায় তাঁরা নাই৷''

রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান কি কোনোদিনই হবে না? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান