সৌদি ব্লগারকে আবার বেত্রাঘাত
১৬ জানুয়ারি ২০১৫আঙ্গেলা ম্যার্কেল সম্প্রতি বারংবার বলেছেন, মুসলিমদের সাধারণভাবে সন্দেহ করা উচিত নয়৷ কিন্তু তিনি এও বলেছেন: ‘‘ধর্মপালনের স্বাধীনতা এবং সহিষ্ণুতার অর্থ এই নয় যে, ক্ষেত্রবিশেষে শরিয়া-কে সংবিধানের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে৷'' ম্যার্কেল যদি জার্মানির চ্যান্সেলর না হয়ে সৌদি আরবের নাগরিক হতেন, তাহলে শুধু ঐ একটি মন্তব্যের জন্যই সম্ভবত তাঁকে বিপুল সাজার সম্মুখীন হতে হতো – রাইফ বাদাউয়ির ক্ষেত্রে যেমন ঘটেছে৷ ইসলামের ‘‘অবমাননার'' অপরাধে বাদাউয়িকে বেত্রাঘাত ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং জরিমানা করা হয়েছে৷
ইসলামের অবমাননা করছে কে?
বাস্তবে এই রায়ই ইসলামের পক্ষে অপমান এবং ইসলামের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর, কেননা বাদাউয়ি-র ‘‘অপরাধ'' বস্তুত স্বাধীন মতপ্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়, যা পশ্চিমে তো বটেই, সেই সঙ্গে ইউরোপ ছাড়া বিশ্বের বহু স্থানের মুসলিমদের চোখে দণ্ডনীয় নয়৷ বাদাউয়ি তাঁর দেশে রাষ্ট্র এবং ধর্মের মধ্যে যে কোনো ব্যবধান নেই, সেই সমস্যার কথা বলেছেন৷ এবং তিনি ইসলামকে খ্রিষ্টধর্ম, ইহুদি ধর্ম এবং ধর্মের স্বাধীনতার সঙ্গে একই পর্যায়ে ফেলার ‘‘দুঃসাহস'' প্রদর্শন করেছেন – এই হলো তাঁর অপরাধ৷
এক সপ্তাহ আগে যখন বাদাউয়িকে প্রথম পঞ্চাশ ঘা বেত মারা হয়, তখন পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে তা মোটামুটি উল্লেখ করা হয়েছিল, এই পর্যন্ত৷ সকলেরই চোখ তখন প্যারিসের দিকে, সকলেই সন্ত্রাসের নিন্দা করতে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে ব্যস্ত, সকলেই ঘোষণা করছেন: ‘‘আমি শার্লি''৷ বাদাউয়ির জন্য কোনো গণবিক্ষোভ, গণপ্রতিবাদের আয়োজন করা হয়নি, যদিও তিনি নিহত ব্যঙ্গচিত্রীদের মতোই শুধু তাঁর মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার ব্যবহার করেছেন৷ বাদাউয়ির সাজায় শুধু কয়েকজন মানবাধিকার আন্দোলনকারী এবং বামপন্থি প্রবন্ধকার ঘোষণা করেন: ‘‘আমি শুধু শার্লি নই, আমি রাইফ-ও বটে৷'' রাইফ-এর জন্য আরব বিশ্ব থেকেও যে খুব বেশি সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে, এমন নয়৷ সমর্থক কয়েকজন আছেন, কিন্তু অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী ও আন্দোলনকারী তখন শার্লি এব্দো এবং হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গাত্মক চিত্র নিয়েই ব্যস্ত৷
ভুল সমর্থন
অথচ ঠিক এখানেই ব্যাপক প্রতিবাদের প্রয়োজন ছিল – বিশেষ করে পশ্চিমে৷ বাদাউয়িকে তো কোনো সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী নিপীড়ন করছে না, বরং একটি ‘‘সহযোগী'' দেশের আইনব্যবস্থা সরকারিভাবে বাদাউয়িকে এই দণ্ড দিয়েছে৷ এমন একটি দেশ, যেখানে বেত্রাঘাত এবং শিরশ্ছেদ সাধারণ দণ্ডের মধ্যে পড়ে৷ এ ধরনের একটি প্রশাসন যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংগ্রামে পূর্ণাঙ্গ সহযোগী বলে গণ্য হয়, সেটাই তো একটা রসিকতা৷ দুর্নীতিপরায়ণ সৌদি রাজতন্ত্রের পরিবর্তে আমাদের রাইফ বাদাউয়িকে সমর্থন করা উচিত৷