রক্ত লাগা পোশাক বাতিল!
২৫ এপ্রিল ২০১৪মার্কিন ডেমোক্র্যাট দলের সিনেটর ও সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির এই চেয়ারম্যান ঢাকায় এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার ও পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য স্বাধীন শ্রমিক ইউনিয়ন তৈরির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে৷'' তাঁর কথায়, ‘‘এক বছর আগে এই সপ্তাহেই বাংলাদেশে ঘটে যায় গার্মেন্টস শিল্পের অন্যতম বড় দুর্ঘটনা৷ রানা প্লাজা ভবন ধসে মারা যায় ১,১৩০ জনেরও বেশি মানুষ৷ আর এ ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) বাতিল করে দেয়৷ তাই বাংলাদেশ যদি শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার উন্নয়ন না ঘটায়, তবে এটা ফেরত দেবে না যুক্তরাষ্ট্র৷''
কারখানার নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইএলও-র নেয়া সর্ববৃহৎ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে মেনেন্দেজ বলেন, ‘‘নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও তার পাশাপাশি ভবন ধসের ঘটনায় নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি৷ যদিও বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের ইউনিয়ন করতে বাধা দিয়েছে কিংবা চাকরি থেকে ছাঁটাই করেছে৷ এমনকি কারখানার উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা ইউনিয়ন নেতাদের ওপর হামলা চালিয়েছে৷''
গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র অনেকেই এখনো শ্রমিক ইউনিয়ন তৈরিতে অনিচ্ছুক বলে বিবৃতিতে দাবি করেন মেনেন্দেজ৷ বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে কাজ শুরু করলেও আশার সঞ্চার করতে পারেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
কারখানার শ্রমিকদের জন্য স্বাধীন ইউনিয়ন তৈরি ব্যতিরেকে কোনোভাবেই এই শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মনে করেন মেনেন্দেজ৷ তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়টিতে বাংলাদেশ সরকার ও বিজিএমইএ যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেয়, তবে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে আরো একটি বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র৷ তখন ‘মেড ইন বাংলাদেশ' ইমেজ নষ্ট হলে তা পুনরুদ্ধারের বাইরে চলে যাবে৷''
মার্কিন সিনেটর সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘‘বিজিএমইএ এবং সরকারকে বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশি শ্রমিকদের রক্তের দাগ লেগে থাকা পোশাক পশ্চিমা ক্রেতারা আর কিনবে না৷ এই ছোট বার্তাটি তাদের বুঝতে হবে৷''
পোশাক শিল্পের মালিকরা অবশ্য দাবি করছেন যে, বাংলাদেশে ট্রেড ইউনিয়নে কোনো বাধা নেই৷ নতুন আইনে নিয়ম মেনে ট্রেড ইউনিয়ন করতে শ্রমিকদের বাধা দেয়া হচ্ছে না৷ তবে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আইনে নানা জটিলতা আছে আর নানা কৌশলে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করতে দেয়া হয় না৷ এর মধ্যে সময় ক্ষেপণ ও চাকরি থেকে বাদ দেয়ার কৌশল অন্যতম৷''
সিরাজুল ইসলামও মনে করেন, ‘‘যদি পোশাক কারাখানায় ট্রেড ইউনিয়ন হয়, তবে তা মালিক এবং শ্রমিক উভয়ের জন্য ভালো৷ কারণ এতে শ্রমিকদের নামে ধ্বংসাত্মক কাজ বন্ধ হবে৷ আর শ্রমিকদের ওপরও বেআইনি কিছু করা যাবে না৷ কিন্তু এই বিষয়টি অনেক মালিক বুঝতে পারছেন না৷'' তাঁর মতে, ‘‘স্বাধীন শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের পোশাক খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে৷''