1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিশরে যৌন নিপীড়ন

নিনা হাসে/এসিবি১০ জুলাই ২০১৩

নিজে নারী বলে সমাজকর্মী হয়েও চান না তাহরির স্কয়ারে যেতে৷ তিনি জানেন, কায়রোর ঐতিহাসিক ওই স্থানে প্রতিদিনই মেয়েদের সইতে হয় মধ্যযুগীয় বর্বরতা৷ এ সপ্তাহে মাত্র চার দিনে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ৯১ জন৷

https://p.dw.com/p/194cf
ছবি: dpa

মিশর বিপ্লবের জঘন্য দিক তাই নারীর চরম অবমাননা

নিহাল সাদ জঘলুল মিশরের বেশ চেনাজানা সমাজকর্মী৷ আইটি প্রোগ্রামার নিহাল কাজ করেন ‘বাসমা' নামের একটি সংস্থার হয়ে৷ মেয়েদের যৌন নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করার কাজ করছেন তিনি বহুদিন ধরে৷ কিন্তু ২০১২ সালের একটা ঘটনার পর নিজের মনে যে ভয় ঢুকেছে, তাতে আজকাল আর তিনি তাহরির স্কয়ারে যেতে চাইছেন না৷ শিকারী পশুর মতো ওত পেতে থাকা কিছু পুরুষ এতটাই আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে তাঁর মনে!

তাহরির স্কয়ারে নারীর যৌন নিপীড়নের বিষয়টি প্রথমে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসেন লারা লোগান৷ সিবিএস-এর দক্ষিণ আফ্রিকান প্রতিনিধি হিসেবে তিনি মুবারক বিরোধী আন্দোলন কাভার করতে গিয়েছিলেন মিশরে৷ ২০১১ সালের শুরুর দিকে তাহরির স্কয়ারেই ধর্ষণ করা হয় তাঁকে৷ হাজার হাজার মানুষের ভীড়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিককে ধর্ষণ করা সম্ভব – এটা অনেকের জন্যই হয়ত বিশ্বাস করা কঠিন৷ তবে হানিয়া মুহিবের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা শুনলে হয়ত তাঁরাও বুঝবেন যে পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ; জানবেন, এমন বর্বর কাজের জন্য এক দল লোক সবসময় কেমন ওঁত পেতে থাকে! শিকারকে মওকা মতো পেলেই দলবদ্ধভাবে নেমে পড়ে তারা হায়নার মতো!

USA Lara Logan CBS Reporterin
তাহরির চত্বরে ধর্ষণের শিকার হন লারা লোগানছবি: picture alliance/landov

হানিয়া নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে৷ তাঁর রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে জানানো হয়েছে মিশরের জনগণকে৷ দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে মিশরের নারীদের দুরবস্থার কথা৷ ভিডিওতে তাহরির স্কয়ারে তাঁর দুঃস্বপ্নের মুহূর্তগুলোর কথা হানিয়া তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘‘হঠাৎ কিছু লোক এসে আমার চার পাশে একটা বৃত্ত গড়ে তোলে৷ এমনভাবে দাঁড়িয়ে পড়ে যে আমার আর বাইরে যাওয়ার উপায় ছিল না৷ তারপর তারা আমার শরীরে হাত চালাতে শুরু করে৷ শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ওরা হাত দেয়নি৷ খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম৷ এক সময় আতঙ্কে চিৎকার করতে শুরু করি৷''

খুব খেয়াল না করলে পুরুষদের গড়া বৃত্তের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা সেই চিৎকার কেউ শুনতেই পারবে না৷ নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এমন অনেক নারী মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে জানিয়েছেন, কখনো কখনো নাকি এক সঙ্গে একশ পুরুষও দল বেঁধে নামে নারী নির্যাতনে৷ নির্যাতন বাড়তে শুরু করে মূলত ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে৷ তখন থেকে তাহরির স্কয়ারে পুলিশ মোতায়েন করা বন্ধ৷ তাই প্রতিবাদের মুখর জনতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা মানুষগুলো অপকর্মে নেমে পড়ে নিশ্চিন্তে৷ তারা জানে, সেখানে তাদের ধরার কেউ নেই, সুতরাং, অপরাধ করেও পার পাওয়া যাবে৷

হোসনি মুবারকের সময় থেকেই নারীর অবমাননা নতুন কিছু নয় মিশরে৷ আর এখনও পুরুষের চেয়ে অনেক দুর্বল নারী৷ কোনো সরকারই নারী অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেনি৷ এমনকি দেশের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুরসিও এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু করেননি৷ বরং তাঁর শাসনামলে সালাফিস্ট সংসদ সদস্য জেনারেল আদেল আফিফি বলেছিলেন, দেশে যত যৌন নিপীড়ন হয় তাঁর জন্য মূলত মেয়েরাই দায়ী৷ নিজের মতের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে তাহরির স্কয়ারের কিছু ঘটনারও উল্লেখ করেছিলেন তিনি৷ তাঁর মতে, অনেক মেয়ে সময়, পরিস্থিতি – কিছুই যেন বোঝে না৷

Ägypten Frauen demonstrieren in Kairo gegen Präsident Mohamed Morsi
চলতি সপ্তাহে মাত্র চার দিনে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ৯১ জনছবি: picture-alliance/dpa

অন্যদিকে, মুবারকের সময় থেকে একটা কথা মিশরে বেশ প্রচলিত৷ বলা হয়ে থাকে, গণবিক্ষোভ ঠেকাতে তখন থেকেই সরকার ভাড়া করা লোক নামিয়ে আসছে তাহরির স্কয়ারে৷ শান্তিকামী মানুষের ভিড়ে তারাই নাকি অবাধে চালায় নারী নির্যাতন৷ মোহামেদ মুরসির সরকারও কি এমন নোংরা উপায়ে গণবিক্ষোভ বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল? নিহাল সাদ জঘলুল শুধু বলেলেন, ‘‘মুসলিম ব্রাদারহুড টাকা দিয়ে লোক নামিয়েছিল – এ কথা আমি বলতে পারবো না৷ আমার হাতে কোনো প্রমাণ নেই৷ প্রমাণ ছাড়া তো কোনো অভিযোগ করতে পারিনা৷''

এ অবস্থায় নারীদের রক্ষা করতে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা৷ ‘তাহরির বডি গার্ড' এবং ‘অপারেশন অ্যান্টি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট' নামের দুটি সংস্থা এ কাজে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে৷ শুক্রবার এই দুটি সংস্থাও সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, নারীদের বাঁচাতে তারা আর তাহরির স্বয়ারে যাবে না৷ নিজেদের কর্মীদের রক্ষা করতেই এমন সিদ্ধান্ত৷ দেখা গেছে, দৃর্বৃত্তদের হাত থেকে নারীদের রক্ষা করতে গিয়ে সমাজকর্মীদের আহত হতে হচ্ছে, তাঁদের জীবনও পড়ছে ঝুঁকির মুখে৷

নিহাল সাদ জঘলুল আপাতত তাহরির স্কয়ারের যাচ্ছেন না, ঠিকই৷ তাই বলে হাত গুটিয়ে বসেও নেই তিনি৷ বাসমা-র হয়ে নেমে পড়েছেন নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর কাজে৷ পোস্টার ছেপে লাগিয়ে দিচ্ছেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে, বাস স্টপে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে৷ অনেক পুরুষও এগিয়ে আসছেন তাঁদের সহায়তায়৷ নিপীড়ক কিছু পুরুষ যেমন আছে, তেমনি নারী নিপীড়ন বন্ধ করতে উদ্যোগী পুরুষও যে আছে মিশরে৷ নিহাল সাদ জঘলুলের মতো হতাশ, আতঙ্কিত মানুষগুলোও তাই এখনো নারীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য