মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ
১ ডিসেম্বর ২০১৬প্রমাণ করতে হয়েছে এই শোভাযাত্রা অসাম্প্রাদয়িক, বিশ্বজনীন ও মানব কল্যাণে নিবেদিত৷ ডয়চে ভেলেকে এ কথা জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম৷ দেড় বছর আগে তিনিই আনুষ্ঠানিকভাবে সশরীরে হাজির হয়ে ইউনেস্কোকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷
এর আগে এই বিষয়টি নিয়ে ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক' করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, বাংলা একাডেমি এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘চূড়ান্ত বিতর্কে অংশ নিতে যাওয়া চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এখনো আদ্দিস আবাবায় আছেন৷ তাঁর কাছ থেকেই সুখবরটি আমি প্রথম পেয়েছি৷''
প্রতিবছর বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে (১৪ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়৷ সেই শোভাযাত্রায় প্রতিবছরই একটি ‘থিম' থাকে – শান্তির পক্ষে, অশুভের বিরুদ্ধে৷ ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিউটের উদ্যোগেই এর শুরু হয়৷ চিত্রশিল্পী বিপূল শাহ ছিলেন এর নেপথ্য কারিগর৷
ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় বুধবার বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় আন্তঃদেশীয় কমিটির একাদশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সেই বৈঠকে অনুষ্ঠিত বিতর্কে ‘রিপ্রেজেন্টেটিভ লিস্ট অফ ইনট্যানজিবেল কালচারাল হেরিটেজ অফ হিউমিনিটি'-র তালিকায় বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, ‘‘দেড় বছর আগে আমি ইউনেস্কোর সদর দপ্তর প্যারিসে যখন যাই, তখন প্রথম বিষয়টি আলোচনা করি৷ এরপর সেখানে আমাদের বাংলাদেশ প্রতিনিধি মো. শহীদুল ইমলাম আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি ‘প্রসেস' করে৷ একবছর আমরা এটা নিয়ে কাজ করি৷ বিতর্কে অংশ নিই, তথ্য-উপাত্ত দেই৷ তারপর আমরা সফল হই৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা শক্তভাবেই আটঘাট বেধে নেমেছিলাম৷ কারণ একবার ‘মিস' হয়ে গেলে অনেক পিছিয়ে পড়তাম৷ এই কাজে যুক্ত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চারুকলা, শিক্ষা এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়৷ সবার চেষ্টায় আমরা সফল হয়েছি৷ ইউনেস্কো মনে করে, আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব মানবতাকে গুরুত্ব দেয় এমন একটি অনুষ্ঠান৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম শ আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘‘চূড়ান্ত বিতর্কে আদ্দিস আবাবায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনও অংশ নেন৷ তিনি এখনো সেখানেই আছেন৷ তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি বিষয়টি প্রথমে সামনে নিয়ে আসে৷ এর জন্য কাজ করে তারা৷''
তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের ঐতিহ্য৷ আর এখন এটা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ৷ এতে করে প্রমাণ হলো, আমরা সব কুপমণ্ডুকতা এবং অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে৷ আমাদের সংস্কৃতি মানবতাবাদী, মানবিক৷''
প্রসঙ্গত, এর আগে ইউনেস্কোর ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ'-এর তালিকায় বাংলাদেশের কারুশিল্প জামদানি এবং বাউল গান স্থান পায়৷ এছাড়া, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় বাগেরহাটের ‘ঐতিহাসিক মসজিদের শহর', পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ এবং বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের নামও রয়েছে৷
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, ‘‘আরো কিছু বিষয় নিয়েও আমরা কাজ করছি৷ আশা করি সেখানেও আমরা সফল হবো৷''
বন্ধু, এ সংবাদটি পেয়ে আপনার কেমন লাগছে? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷