1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘যে ক্রিয়েটিভ না, কালের বিবর্তনে সে হারিয়েই যায়’

৩১ জুলাই ২০২০

করোনাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর লাইভ অনুষ্ঠান দেখা যাচ্ছে। এই ধরনের লাইভ অনুষ্ঠানের ভালো-মন্দ নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন অভিনেতা ও আলোচিত উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয়। 

https://p.dw.com/p/3gDuj
Shahriar Nazim Joy
ছবি: Privat

করোনাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর লাইভ অনুষ্ঠান দেখা যাচ্ছে। ঘরে বসে গোছালো বা অগোছালো নানা ধরনের লাইভ হচ্ছে। কখনও অর্ধসত্য, কখনও সত্য না জেনেই অনেকে লাইভে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন। এই ধরনের লাইভ অনুষ্ঠানের ভালো-মন্দ নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন অভিনেতা ও আলোচিত উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয়। 

তার মতে, যে ক্রিয়েটিভ না, কালের বিবর্তনে সে হারিয়েই যায়। আর যারা ভালো করবেন, শুধু তারাই টিকে থাকবেন। 

ডয়চে ভেলে : নিজেকে প্রকাশ করার এই প্রক্রিয়াটি কি মানুষকে গতিশীল করছে?

শাহরিয়ার নাজিম জয় : এই প্রক্রিয়াটি অবশ্যই মানুষকে গতিশীল করছে। মানুষ বন্দিদশায় নতুন এক ধরনের জীবন উপলব্ধির ভেতর দিয়ে সময় কাটাচ্ছিল। নতুন সময়ের, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নতুন উপায়ে মানুষের কাছে পৌঁছে যাবার এই পদ্ধতির নামই লাইভ। কিন্তু যে কোন জিনিসই খুব বেশি বেশি ভালো না। এবং সব জিনিস সবার জন্য না। এই মাত্রাজ্ঞানটা আমাদের বরাবরই কম। একটা লাইভ জনপ্রিয় একজন মানুষ করা বা গ্রহণযোগ্য একজন মানুষ করা আর সবাই মোবাইল হাতে নিয়ে লাইভ করা এক কথা না। আমি মনে করি যে, প্রযুক্তি ব্যবহারের সাথে এর সম্পর্ক আছে মূল্যায়নে। কারণ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে জানাটাই বড় শিক্ষা। এই প্রযুক্তি সবার হাতে আছে। কিন্তু সবাই ব্যবহার করলে তা বিপদ। আমি মনে করি, এর ভালো দিকই বেশি। কিন্তু সবাই যদি ব্যবহার করা শুরু করে বা এই প্রক্রিয়ায় কাজ করা শুরু করে সেটি আমি মনে করি না গ্রহণযোগ্য কোন বিষয় হয়ে উঠবে।

একাকিত্ব বা হোমসিকনেস কাটাতে ঘরে বসে লাইভ অনুষ্ঠান কতটা ভূমিকা রাখছে?

এখানে কার্যকর হচ্ছে এই কারণে যে, আপনি একা ঘরে না, আমিও ঘরে। আমি একা ঘরে না, আরেকজনও ঘরে। কাজেই সবাই যেহেতু ঘরে তাই এই প্রক্রিয়াটি অবশ্যই অন্য যে কোন সময়ে চেয়ে বেশি কার্যকর। আপনি আমাকে পছন্দ করেন বা না করেন, আপনি আমার কথা শুনতে চান বা না চান আপনার হাতে এখন অজস্র সময়। কাজেই আপনাকে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত হতেই হবে। সময়ের বদলে যাওয়া রূপ এটা।

লাইভের নেশায় কি মানুষ কর্মসময় নষ্ট করছে না?

মানুষের হাতে তো এখন কর্মই নেই। কাজেই মানুষের যাও কর্ম আছে সেটা আগে ছয় ঘন্টা লাগলেও এখন ৩০ মিনিটে হয়ে যাচ্ছে। বাকি সময় মানুষ তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে যাচ্ছে এবং মানুষ ঘরেই বেশি সময় কাটাচ্ছে। সবাই যার যার মতো জীবনের নতুন একটি পথ শুরু করেছে। ঘরে থেকে কর্ম করার একটা প্রক্রিয়া সবাই কিন্তু শুরু করেছে। তবে এটা কোন ক্ষতি করছে, এটা আমি কোনভাবেই মনে করি না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবাই যদি আগের জীবনে ফিরে যাই তাহলে তখন এই প্রক্রিয়ায়টি হয়তো গ্রহণযোগ্য হবে না। 

ঘরে বসে লাইভের কারণে মানুষ পরিবারকে দেওয়া সময় কমিয়ে ফেলছে কি-না?

পরিবারকে আর কত সময় দেবে মানুষ। পরিবারকে সময় দিতে দিতে তো অনেক পরিবার ভেঙ্গেও গেছে। কাজেই যথেষ্ট সময় মানুষের হাতে আছে লাইভ করার জন্য। বারবারই আমি বলছি একটি কথা, প্রত্যেকটি প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর সৌন্দর্য্য নির্ভর করে। আপনি কোনটা যদি বেশি করেন, যেমন আপনি যদি সারাদিন ধরে লাইভ করতে থাকেন তাহলে সেটা তো অবশ্যই আপনার পরিবারকে ঠকানো হবে, আপনার নিজেকে সময় দেওয়া হবে না। প্রত্যেকটি জিনিসের সময় আছে। এখন বিষয় হচ্ছে একজন মানুষ নিশ্চয় প্রতিদিন দুইবার তিনবার লাইভ করছে না। যার নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম আছে সে হয়তো করছে। যার প্রয়োজন নেই সে যদি ফেসবুক লাইভে এসে সারাদিন সুখ-দুঃখের কথা বলতে থাকে, তাহলে সেটা আবার অনেক মানুষ দেখছে না। মানুষের হাতে অপশন আছে। কারও ভিউ হচ্ছে ৩০-৪০ জন, আবার কারো ভিউ হচ্ছে ৫-১০ হাজার। এটা ডিপেন্ড করে মানুষ কাকে গ্রহণ করছে, কাকে করছে না। আমি মনে করি, এই সময়টার জন্য লাইভ সুন্দর ও সঠিক ব্যাপার।

গণহারে লাইভের কারণে সমাজে কি প্রভাব পড়ছে?

কোন কিছু গণহারে দেখতে দেখতে পচে যায়। আকর্ষণ কমে যায়। যে কোন জিনিস গণহারে হয়ে গেলে তো আকর্ষণ কমে যাবে। প্রথম প্রথম বা এখনও যা গ্রহণযোগ্যতা আছে আরও কিছুদিন করতে থাকলে এটার গ্রহণযোগ্যতা কমতে থাকবে। কিন্তু প্রোগ্রামের মেরিট যদি ভালো হয় তাহলে সেটা সবসময়ের জন্যই গ্রহণযোগ্য। সেটা টেলিভিশনে হোক, লাইভে হোক আর আপনি একা বসে কথা বলেন বা ভিডিও বার্তা দেন সেটা হোক। যা গ্রহণযোগ্য তা সব সময়ই গ্রহণযোগ্য।

অগোছালো লাইভের কারণে পেশাদারত্ব কি হারিয়ে যাচ্ছে?

অনেকের পেশাই তো সংকটের সম্মূখীন। তারা তো সবকিছু মিলে অগোছালো আছেই। বিষয়টি আমি সবাইকে বলতে চাই যে, সময়টাই তো এখন সঠিক না। যেহেতু সময়টা সঠিক না তাই সময়ের সাথে ধীরে ধীরে আমরা সবকিছু অ্যাডজাস্ট করছি। আমরা এখন কেউই সঠিক মানুষ না। কারণ এই অ্যাডজাস্টমেন্টের ভেতর দিয়ে আমরা শিখছি প্রতিনিয়ত এবং বুঝতে চেষ্টা করছি, প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছি। আমরা বোঝার চেষ্টা করছি, আমাদের কেমনভাবে বাঁচা উচিৎ, কি কাজ করা উচিৎ। কাজেই আমরা অগোছালো সময়ের ভেতর দিয়ে যা করছি এই সময়ে জন্য আমি এটাকে যথার্থ মনে করছি। 

এই ধরনের লাইভের কারণে অনেকের মধ্যেই অহমিকা বোধ জন্ম নিচ্ছে। অনেকে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। ফলে তারা ক্রিয়েটিভ কাজ বাদ দিয়ে এদিকে ঝুঁকে পড়ছেন কি-না?

আপনি একটা কথা মনে রাখবেন, যে মানুষ ক্রিয়েটিভ না, সেই মানুষ কালের বিবর্তনে হারিয়েই যায়। নায়ক বলেন, নায়িকা বলেন, সাহিত্যিক বলেন আর রাজনীতিবিদ বলেন, যে মানুষ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে না, যে মানুষের সেই যোগ্যতা আসলে নেই কিছু সময়ের জন্য উল্কার মতো জেগে ওঠে সেই মানুষ লাইভ করলেও হারিয়ে যাবে, টেলিভিশন প্রোগ্রাম করলেও হারিয়ে যাবে, নায়ক হলেও হারিয়ে যাবে, রাজনীতিবিদ হলেও হারিয়ে যাবে। এটি একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় যারা যোগ্য তারাই টিকে থাকবে।

‘এই সময়টার জন্য লাইভ সুন্দর ও সঠিক ব্যাপার’: শাহরিয়ার নাজিম জয়

অনেকেই আংশিক তথ্য জেনে বা ভুল তথ্য জেনে সেটা লাইভে বলছেন? ফলে সেই তথ্য অসংখ্য মানুষের কাছে ছড়িয়ে যাচ্ছে? এর প্রভাব কি?

এর প্রভাব খারাপ। কোন জিনিস আংশিক জেনে না ভুল জেনে আপনি বলতে পারেন না। যা সমাজে নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে সাইবার ক্রাইম বা এই ধরনের মাধ্যমে কথা কথা বলার জন্য একটি প্রক্রিয়া কবে হবে। যে ধরনের আইন টেলিভিশনের জন্য আছে। আপনি চাইলেই টেলিভিশনে সবকিছু দেখাতে পারেন না। ইচ্ছে করলে সিনেমা হলে আপনি সেন্সরবিহীন একটি সিনেমা দেখাতে পারবেন না। কিন্তু লাইভে আপনি যা খুশি তাই বলতে পারছেন। এক সময় নিশ্চয় সরকারের তরফ থেকে এক ধরনের রুলস আসবে। সেটা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু আইন আছে। সেই আইনগুলোর ব্যাপারে আপনার অভিমত কি?

খুবই দুর্বল আইন। এই আইন শুধুমাত্র একদম যারা ভিভিআইপি বা রাষ্ট্র ক্ষমতার একেবারে উচ্চ শিখরে আছে তাদের জন্যই প্রযোজ্য। সাধারণ মানুষের জন্য এটা খুবই কঠিন। সাধারণ মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারে না। আজকে যদি সরকার প্রধান বা বিখ্যাত বড় মানুষকে নিয়ে কেউ কোন পোস্ট দেয় সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ বা সাধারণ সেলিব্রেটির বিরুদ্ধেও যদি কেউ অপপ্রচার করেন তার আসলে বিচার পাওয়ার জায়গা নেই। এবং সেটার বিচারও নেই।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আপনি কি বলবেন?

এটা আরো স্ট্রং হওয়া প্রয়োজন।

যারা ঘরে বসে লাইভ করছেন তাদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কি হবে?

আমি আসলে কোন পরামর্শ দিতে চাই না। আমি নিজেও লাইভ করি। এটা একটি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভ। সেটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান। ফলে আমি আমার হিসাবটা বুঝি। যাদের লাইভ জনপ্রিয় না, তারা আস্তে আস্তে লাইভ কমিয়ে দেন এটাই আমার আহবান। আর কোয়ালিটি বাড়াতে হলে তথ্য, জ্ঞান, হিউমার অনেক কিছুই লাগবে। যারা অযোগ্য তারা ঝড়ে পড়ছে, ঝড়ে পড়বে। টিকতে হলে যোগ্যতা বাড়াতে হবে। তবে আমি আমার সম্পর্কে বলবো, আমি কিছুই জানি না, আমি জানার চেষ্টা করছি। আমি সমুদ্রে একটা ডিঙি নৌকা। আমারও অনেক কিছু জানতে হবে। আমিও যদি না জেনে সামনে অনেক কিছু করার চেষ্টা করি তাহলে আমিও ধসে যাবো।

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷