যে কোনো বিপদেই ভারতের পাশে অ্যামেরিকা: পম্পেও
২৭ অক্টোবর ২০২০রুটিন বৈঠক। কিন্তু সেই সাধারণ বৈঠকই নতুন মাত্রা পাচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতির সাপেক্ষে। টু প্লাস টু বৈঠকে যোগ দিতে সোমবারই ভারতে পৌঁছেছেন মার্কিন সচিব মাইক পম্পেও এবং সামরিক সচিব মার্ক এসপার। মঙ্গলবার সকালে তাঁরা বৈঠক করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা এনএসএ অজিত ডোভালের সঙ্গে। দুপুরে তাঁরা বৈঠকে বসেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে। সেখানে একাধিক সামরিক বিষয়ে চুক্তি হয়েছে দুই দেশের।
বৈঠকের পর পম্পেও বলেছেন, ''যে কোনো বিপদেই ভারতের সঙ্গে থাকবে অ্যামেরিকা। সেই বিপদ চীনের কাছ থেকে বা অন্য কোনোভাবে আসতে পারে। অ্যামেরিকার মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হবে না। তারা ভারতের পাশেই থাকবে। ভারতের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে অ্যামেরিকা সর্বদা ভারতের সঙ্গে আছে।'' এভাবেই দিল্লি সফরে এসে চীন ও পাকিস্তানকে বার্তা দিলেন মার্কিন বিদেশ সচিব।
পম্পেও ভারতীয় প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, লাদাখ পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে অ্যামেরিকা। সীমান্তে সামরিক উত্তাপ মোকাবিলায় ভারতকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। মার্কিন বিদেশ সচিব বলেছেন, চীন স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, তাই বৈঠকে চীনের মোকাবিলা করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
ভারতে আসার আগেই মাইক এসপার বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, এ বারের বৈঠকে ফোকাস থাকবে চীন। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন আগ্রাসন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন এসপার। জানিয়েছিলেন, এই পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা করে চীনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর রাস্তা তৈরি করা হবে। বস্তুত, এ দিন অজিত ডোভাল এবং দুই মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সে বিষয়েই আলোচনা করেছেন দুই মার্কিন প্রতিনিধি। ভারতের সঙ্গে সামরিক স্যাটেলাইট শেয়ারের চুক্তি করা হয়েছে। যার অর্থ, মার্কিন সামরিক স্যাটেলাইটের ছবি এবং তথ্য ভারতকে জানাবে অ্যামেরিকা। অ্যামেরিকার সঙ্গে যে এই বিশেষ সামরিক চুক্তি ভারতের হতে পারে, ডয়চে ভেলেকে সে কথা অনেক আগেই জানিয়েছিল ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রকের সূত্র। মঙ্গলবার সেই চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। পৃথিবীর খুব কম দেশের সঙ্গেই সামরিক স্যাটেলাইট ইমেজ শেয়ার করে অ্যামেরিকা।
এ ছাড়াও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, অস্ত্র এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম সংক্রান্ত চুক্তিও হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ভারতের সঙ্গে অ্যামেরিকার এই চুক্তিগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই নিয়ে তৃতীয়বার টু প্লাস টু বৈঠকে মিলিত হলো ভারত এবং অ্যামেরিকা। ফলে বৈঠকের নিরিখে এটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ নয়। বহু আগেই এই বৈঠকের সময় নির্দিষ্ট হয়ে ছিল। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার বিস্তর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। অন্য দিকে এশিয়ায় সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে চীনের সরাসরি সংঘাত শুরু হয়েছে। চীন এবং পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীনকে দিয়ে পাকিস্তান কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়েছে। ভারতের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে চীন ভারতকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে বলে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। এই পরিস্থিতিতে ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চকে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে এবং সেই কূটনীতিতে খানিকটা সফলও হয়েছে।
ভারতের কূটনীতি
বর্তমান সময়ে অ্যামেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের খারাপ সম্পর্ককে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। এশিয়া প্যাসিফিকে চীনের অসম শক্তিবৃদ্ধি এবং তাইওয়ান এবং হংকং নিয়ে চীনের মনোভাবের নিন্দা করছে অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ। ভারত সেটিকেই কাজে লাগিয়েছে। দক্ষিণ চীন সমুদ্র এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অ্যামেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে চীন বিরোধী ব্লক তৈরিতে মদত দিয়েছে ভারত। নভেম্বরের গোড়ায় ভারতের উপকূলে মালাবার সমারিক মহড়া হওয়ার কথা। সেখানে নৌ মহড়ায় যোগ দেবে অস্ট্রেলিয়া এবং অ্যামেরিকা। ফলে এই মুহূর্তে এশিয়ায় ভারতকেই শক্তিশালী বন্ধু বলে মনে করছে অ্যামেরিকা। কিছুদিন আগে ফ্রান্সও সে কথা জানিয়েছিল।
টু প্লাস টু বৈঠক
এই পরিস্থিতিতে টু প্লাস টু বৈঠক অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে। নিয়মমাফিক বৈঠক হলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে। যে ভাবে চীনের বিরুদ্ধে অ্যামেরিকা সরব হয়েছে এবং ভারতকে সামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাতে চীনের ওপরেই পরোক্ষে চাপ তৈরি করা হলো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ''এই বৈঠকের ফলে এশিয়া প্যাসিফিকে সামরিক এবং কূটনৈতিক ভাবে ভারত এবং মার্কিন সমঝোতা অনেকটা বৃদ্ধি পেল। এশিয়া প্যাসিফিকে নৌ শক্তিতে চীন অত্যন্ত শক্তিশালী। পিএলএ স্থল সেনার চেয়ে পিএলএ নেভি কয়েক গুণ শক্তিশালী। দক্ষিণ চীন সমুদ্রে সে কারণেই এত আগ্রাসী হতে পারে চীন। জোট বা ব্লক তৈরি করে অ্যামেরিকা সেখানেই চীনকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করছে।''