যে কারণে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চায় না বিএনপি
২৪ অক্টোবর ২০২৪রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে, শূন্যতা তৈরি হবে৷ তাই তারা চায় সংস্কার ও দ্রুত নির্বাচন৷
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের' দিক থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি ওঠার পর বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ৷ দেখা করার পর তাদের পক্ষে নজরুল ইসলাম খান বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দেশে যাতে নতুন করে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না হয় সেজন্য খেয়াল রাখতে বলেছি৷ আমরা কোনো সাংবিধানিক সংকট চাই না৷ পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যদি কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে আমরা গণতন্ত্রকামীরা তা প্রতিহত করবো৷’’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বিএনপির চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আরেক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা এই মূহুর্তে রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টি করবে৷ সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি করবে৷ যেটা জাতির কাম্য নয়৷ এবং এই সংকটের কারণে যদি জাতির গণতন্ত্রে উত্তরণ বিলম্বিত হয় বা বাধাগ্রস্ত হয়, সেটা জাতির কাম্য নয়৷’’
বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গেও কথা বলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ প্রসঙ্গে একটি পত্রিকায় রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছে তা একটি সেটেলড ম্যাটার৷ বঙ্গভবন থেকে বিবৃতি দিয়েও তা বলা হয়েছে৷ তারপর এটা নিয়ে আর বিতর্ক থাকে না৷ সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সে তার পদত্যাগের কথা বলা হয়েছে৷ রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেছেন৷’’
‘‘আমরা মনে করি, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে সাংবাবিধনিক শূন্যতা ও রাষ্ট্রীয় সংকট তৈরি হলে তৃতীয় পক্ষ বা অন্য কোনো পক্ষের দুরভিসন্ধি কাজ করবে কিনা৷ সেইরকম রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক সংকটের মুখোমুখি আমরা হতে চাই না৷ আমরা চাই গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে অন্য কোনো কিছু যেন বাধা না হয়৷ আমরা চাই গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নির্বাচন, এর মাঝে আর কোনো কিছু যেন বাধা না হয়৷ এটা জাতির জন্য কল্যাণকর হবে না৷’’
আর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আর সব অপকর্ম বাদ দিলেও ছাত্রলীগ জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করেছে, ভারি অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করেছে৷ আর আওয়ামী লীগ শাসনামলে ছাত্রলীগ ছিল একটা আতঙ্কের নাম৷ ছাত্র-জনতার দাবি ছিল তাদের নিষিদ্ধ করার৷ সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার সঙ্গে আমরা একমত৷''
আওয়ামী লীগ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের গণহত্যার বিচার শুরু হয়েছে৷ আইনেও কিছু সংশোধন আসবে৷ সেখানে দলেরও বিচার হবে৷ দল নিষিদ্ধেরও বিষয় থাকবে কিনা সেটা বিচার শেষ হলে দেখা যাবে৷’’
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ বলেন, ‘‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে স্বপদে বাহাল রাখায় কোনো সংকট দেখছি না৷ বরং আমার দল মনে করে, তিনি পদত্যাগ করলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে৷ কারণ, স্পিকার পদত্যাগ করেছেন৷ ডেপুটি স্পিকার কারাগারে৷ সংসদ নেই৷ তাহলে তিনি কোথায় পদত্যাগ করবেন? তিনি পদত্যাগ করলে সংকট হবে৷’’
‘‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য হয়েছে৷ এখন রাষ্ট্রপতির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা সব রাজনৈতিক দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে ঐক্যমতের ভিত্তিতেই করতে হবে৷ এর বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না৷ আর এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় সরে যেতে চাননি,'' বলেন তিনি৷
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা বা না করা প্রসঙ্গে আমি কিছু বলবো না৷ তবে ১৫ বছর ধরে তারা হত্যাসহ যেসব অপরাধমূলক কাজ করেছে, আগে তার বিচার হওয়া দরকার৷ দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন৷’’
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘‘আমাদের তিন সিনিয়র নেতা রাষ্ট্রপতির ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টাকে যে মতামত দিয়েছেন, সেটা আমাদের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের মতামত৷ আমার আলাদা কোনো মতামত নেই৷’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিএনপি নেতা বলেন, ‘‘সাংবিধানিক সংকট তৈরি হলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে৷ আর সেটা হলে নির্বাচন ও সংস্কার শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যেতে পারে৷ সাংবিধানিক সংকট হয়- এমন কোনো কাজের বিরোধী বিএনপি৷ তাই বিএনপি বর্তমান রাষ্ট্রপতিকেই তার পদে রাখতে চায়৷ সেটাই আমাদের জন্য নিরাপদ৷’’
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার প্রায় তিন মাস পর বাংলাদেশের একটি পত্রিকায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেখ হাসিনার লিখিত পদত্যাগপত্র না পাওয়ার কথা বললে সোমবার আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে শপথ ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন৷ তারপর ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা' রাষ্ট্রপতিকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর' বলে তার পদত্যাগ দাবি করেন৷ তার পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার বিকালে শহীদ মিনারে সমাবেশ ও বঙ্গভবন ঘেরাও করা হয়৷ রাষ্ট্রপতিকে পদ ছাড়তে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল তখন৷
তবে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতির পদে মো. সাহাবুদ্দিনের থাকা না থাকার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার৷ বৈঠকের পর বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন৷