রসিকতা, মস্করাতেও অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা!
১৮ নভেম্বর ২০১৭গতবছর ৮ নভেম্বর রাতে দূরদর্শন মারফৎ এক ঘোষণা করে সমস্ত পুরোনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী, যা নিয়ে তর্ক, বিতর্ক, রাজনীতি এখনও চলছেই৷ কিন্তু এ সবের মধ্যে না গিয়ে যুগ যুগ ধরে চলে আসা নিখাদ, বিশুদ্ধ কৌতুকের টানে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠস্বর ও অঙ্গভঙ্গি হুবহু নকল করেছেন শ্যাম রঙ্গিলা৷
এগারো বছর বয়স থেকে কৌতুক অভিনয় করছেন রাজস্থানের মোখামওয়ালা গ্রামের বছর তেইশের এই যুবক৷ একেবারে প্রধানমন্ত্রীর ঢঙেই ‘মিত্রোঁ', ‘ভাইয়ো অউর ব্যাহনো'-র মতো খুঁটিনাটি সম্বোধনেও রঙ্গিলার জুড়ি মেলা ভার৷ নিছক কৌতুকের প্রয়োজনেই তিনি হুবহু নকল করেছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীর কণ্ঠস্বর এবং অঙ্গভঙ্গি৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক নেতাদের নকল করে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছেন এই কৌতুক অভিনেতা৷
সেই কারণেই সম্প্রতি ডাক পেয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমারের ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ' অনুষ্ঠানে৷ সেখানে মোদী ও রাহুলের নকল করে আসল শ্যুটিং শেষ করার প্রায় মাসখানেক পর আচমকাই টনক নড়ে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের৷ চ্যানেলের প্রোডাকশান টিম থেকে রঙ্গিলাকে টেলিফোন করে জানানো হয়, রাহুল গান্ধীর নকল চলতে পারে৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নকল করে কৌতুক সম্প্রচার করা যাবে না৷ নতুন কিছু নিয়ে কৌতুক পরিবেশন করতে হবে৷ এমন প্রস্তাবেচরম বিপাকে পড়েছেন রঙ্গিলা৷ মোদীর নকল করায় শাসক বিজেপি-র পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ উঠছে৷ যদিও তেমন কোনো অভিযোগের কথা মানতে চায়নি বিজেপি নেতৃত্ব৷ রাহুল ইস্যুতে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি তোলা হয়নি৷ এখন প্রশ্ন, তবে কেন রঙ্গিলার অনুষ্ঠান সম্প্রচার কর আহল না?
এক সাক্ষাৎকারে শ্যাম জানিয়েছেন, ‘‘চ্যানেলের তরফে আপত্তি তোলা হয়েছিল৷ রাহুলের ‘মিমিক্রি' চলবে জানালেও মোদীর মিমিক্রিতে আপত্তি জানানো হয়৷ তারপর শোরগোল হতেই মোদী ও রাহুল দু'জনের নকল করে কৌতুকেই আপত্তি জানায় চ্যানেল কর্তৃপক্ষ৷'' শ্যামের কথায়, ‘‘সম্ভবত ওঁরা ঝুঁকি নিতে চাননি৷ অথবা কোনো চাপ ছিল৷''
যদিও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ রঙ্গিলার কৌতুকটি সম্প্রচার না করলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটি ভাইরাল হয়েছে৷ যাতে দেখা গেছে, ‘লাফটার চ্যালেঞ্জ'-র মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীকে নকল করে কৌতুক হাসির ফোয়ারা ছোটাচ্ছেন করছেন শ্যাম রঙ্গিলা৷ হেসে লুটোপুটি হওয়ার জোঘাড় অক্ষয় কুমার-সহ সমস্ত দর্শকরা৷
জি-বাংলা চ্যানেলের ‘স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান' স্বরূপ চ্যাটার্জি জানালেন, ‘‘শ্যাম রঙ্গিলার কৌতুকে কোথাও অশালীন কিছু নেই৷ উনি কোনো ভুল করেননি৷ তবে কেন তাঁর অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হলো না? কৌতুক শিল্পী ও শিল্পের স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন৷ এটা সংবিধান স্বীকৃত অধিকার৷ ইউরোপে বহুদিন ধরেই কৌতুক অভিনয় চলে আসছে৷ বিদেশে এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে৷ বার্নার্ড শ'কেও কৌতুক করতে দেখেছি আমরা৷ তিনি এক মহিলাকে বলেছিলেন, ‘ইউ আর নট ট্রান্সপারেন্ট!' সেসব নিয়ে বিতর্ক কখনও হয়নি৷ কিন্তু ভারতে কৌতুক শিল্পীদের নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়৷ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে মিডিয়ার একাংশ রে রে করে তেড়ে আসেন৷ দুর্ভাগা শ্যাম রঙ্গিলার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে৷''
তবে শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, রাষ্ট্রীয় জনতা দল প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব, অখিলেশ যাদব, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল-সহ অন্যান্যদের কন্ঠস্বর নকল করেও জনপ্রিয় হয়েছেন শ্যাম৷
রঙ্গিলা জানিয়েছেন, ওই পর্বের পর খুব সময়ে তাঁকে ‘অন্য কিছু' ভেবে পারফর্ম করতে চাপ দিচ্ছিল চ্যানেল৷ যদিও এত অল্প সময়ে তা করা সম্ভব নয় বলে তাদের জানিয়ে দেয় শ্যাম৷ বলেন, ‘‘এত কম সময়ে কীভাবে আমি নতুন ‘আইডিয়া' নিয়ে কাজ করব? তবুও চেষ্টা করেছি৷ বিতর্ক চাই না৷ তবে আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে৷''
এ বিষয়ে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷