মোদী আর অচ্ছুৎ নয়
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪একেই বুঝি বলে গরজ বড় বালাই৷ বহু বছর আগে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘‘কেউ যদি অ্যামেরিকায় যেতে না পারেন, তাহলে অ্যামেরিকা আসবে তাঁর দরজায়৷'' কথাটা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেল মোদীর ক্ষেত্রে৷ ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দূরে সরিয়ে রাখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আর যে সম্ভব হবে না, সেটা মোটামুটি আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন রাজনৈতিক মহল৷ তলে তলে চেষ্টাও চলছিল বরফ গলানোর৷ তবে মার্কিন প্রশাসনের তরফে সেই ‘ইউ-টার্ন'-টা কবে হবে এবং কখন হবে সেটাই ছিল প্রশ্ন৷
নতুন দিল্লির মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল দিন কয়েক আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চান বাধ্যতামূলক কূটনৈতিক নিয়মবিধি অনুসারে৷ জানা গেছে, তাঁকে সেই অনুমতি দেয়া হয় এবং কংগ্রেস-বিজেপি সংঘাত সেখানে বাধাও হয়ে দাঁড়ায়নি৷ সম্ভবত মোদী-ন্যান্সি পাওয়েল সাক্ষাৎ হবে গান্ধীনগরে ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে, অর্থাৎ নির্বাচনি আচরণবিধি বলবৎ হবার আগেই৷
২০০২ সালে গুজরাট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দু'বছর পর ২০০৫ সালে মোদী অ্যামেরিকায় যাবার ভিসা চেয়েছিলেন, কিন্ত মোদীকে ভিসা দিতে অস্বীকার করে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ৷ এটা অবশ্য শুধু মোদীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল, অন্যান্য গুজরাটি ব্যবসায়ী বা গুজরাটিদের ক্ষেত্রে নয়৷ কারণ তাঁরই সরকারের আমলে ঐ দাঙ্গা হয়েছিল এবং সেটা তাঁরই প্রচ্ছন্ন মদতে – এমনটাই ছিল অভিযোগ৷ এ জন্য বাজপেয়ী সরকারকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করায়নি মার্কিন প্রশাসন৷ বরং প্রশংসাপত্রই দিয়েছে৷ কিন্তু ঐ দাঙ্গার তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত সম্প্রতি মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ করে দেয়৷ এই ছাড়পত্র সম্বল করে বোধহয় ওবামা প্রশাসন মোদী সম্পর্কে মনোভাব পাল্টাচ্ছে৷ মোদী যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে মোদী আর ব্যক্তিবিশেষ থাকবেন না, তিনি তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী৷ তাঁর ভিসা হবে সর্বোচ্চ কূটনৈতিক ভিসা৷
মোদীকে ভিসা না দেয়া নিয়ে বিতর্কও একটা ছিল৷ সেটা কী? মার্কিন সরকারের দ্বিচারিতা৷ মোদীকে ভিসা দেবার বিরোধীতা করেছিল প্রধানত ইভানজেলিস্ট খ্রিষ্টানরা৷ তাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল ভারতীয় অভিবাসীদের একাংশ৷ অথচ মার্কিন সরকার অনেক স্বৈরাচারী এবং গণহত্যায় অভিযুক্ত সরকার প্রধানকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন৷ যেমন ২০১৩ সালের আগস্টে কেনিয়ার সরকার প্রধান কেনিয়াট্টাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকার শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ উল্লেখ্য, ২০০৭-২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার অভিযোগে বিচার হয় কেনিয়াট্টার৷ এটা কী দ্বিচারিতা নয়?
এখন মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ মোদীর হাত যে ধরতে চাইছে, সেটা বড় কথা নয়৷ বড় কথা, মোদী তা গ্রহণ করবেন কিনা৷ তবে দিল্লিতে মোদীর নির্বাচনি জনসভায় জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ কয়েক ডজন দেশের সঙ্গে নতুন দিল্লির মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মোদী৷ বিজেপি শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলির কটাক্ষ: মোদী যখন ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন, তখন অ্যামেরিকা ভিসা দেয়নি, এখন মোদীর উচিত নিজে থেকে ভিসার আবেদন না করা৷ এর কারণ, মোদী আর দেবযানি খোবড়াগাড়ে এক পংক্তিভুক্ত নন৷