টিভি ডুয়েল
২ অক্টোবর ২০১২ভোটের ফলাফলের উপর প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের টেলিভিশন বিতর্কের কোনো প্রভাব পড়ে কি? সেটা নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর৷ বারাক ওবামা এবং মিট রমনি'র মধ্যে আসন্ন ডিবেটগুলোর ক্ষেত্রে স্বচ্ছন্দে বলা চলে, তাতে ভোটের ফলাফলে বিশেষ উনিশ-বিশ হবে না৷
মিডিয়া অবশ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট বা প্রেসিডেন্ট বিতর্কের নাটকীয়তা, তার আগে-পরে ভোটারদের মনোভাব ইত্যাদির পরিবর্তন নিয়ে হুল্লোড় তুলতে ভালোবাসে৷ আর ভালোবাসবে না'ই বা কেন? মিডিয়ার কাজই তো হল তাই৷ আসলে এই প্রেসিডেন্ট বিতর্কগুলো ঘটবার দু'দিন আগে তাদের যে গুরুত্ব থাকে, সেগুলো ঘটে যাওয়ার তিন দিন পরে তাদের আর সেরকম গুরুত্ব থাকে না৷ অথবা অন্যভাবে বলতে গেলে, কোন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কাকে সম্ভাব্য ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত করলেন, এ বিষয়টারও শেষমেষ প্রায় কোনো গুরুত্ব নেই৷
আসল কথা হল, যে সব ভোটাররা তাদের মন ঠিক করে উঠতে পারেননি, তাদের মন বোঝা এমনিতেই শক্ত৷ তার উপর আবার এবারের নির্বাচনে দুই প্রার্থীর রাজনৈতিক আদর্শগত অবস্থান পরস্পরের সম্পূর্ণ বিপরীত৷ এই পরিস্থিতিতে যে পাঁচ শতাংশ ভোটার এখনো মনোস্থির করে উঠতে পারেননি - যদি তাঁরা আদৌ ভোট দিতে যান - তবে তাঁরা যে কোন দিকে যাবেন, সেটা বড় বড় ঘাঘু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের পক্ষেও বলে দেওয়া সম্ভব নয়৷
কাজেই এটা ধরে নেওয়ার প্রবণতা থাকে যে, তিনটি প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের মাধ্যমেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং একজন না একজন প্রার্থী যে স্পষ্ট এগিয়ে গেলেন, সেটা বোঝা যাবে৷ কিন্তু সে ধরণের ম্যাজিক ঘটার সম্ভাবনা কম৷ এছাড়া বিতর্কের ফরম্যাট বা আঙ্গিকেই গলদ: এ যেন দুই প্রার্থীর দু'টো সাংবাদিক সম্মেলন চলেছে, তবে একত্রে৷ সঞ্চালক তাতে বিশেষ ব্যাগড়া দিচ্ছেন না৷ একে বিতর্ক বলা নিরর্থক৷ প্রার্থীদের তথাকথিত টাউন হল মিটিংগুলোতেও তো তাই'ই হয়: প্রার্থীদের আগে থেকে কিছু প্রশ্ন হাতে দিয়ে দেওয়া হয়; তাঁরা নিজের মতো করে তার জবাব দেন৷
আরেক মুশকিল, প্রার্থীরা বিতর্কে যা বলুন আর নাই বলুন, তার অব্যবহিত পরে যার যার দলের ‘স্পিন ডক্টর'-রা তাদের কাজ শুরু করবে৷ জনমত সৃষ্টি করাই এই স্পিন ডক্টরদের কাজ৷ তাদের চক্করে পড়ে ভোটাররা শেষ অবধি যে কি ভাববে, কিংবা বিশ্বাস করবে, সেটা তারা নিজেরাই বুঝে উঠতে পারে না৷
বিতর্কে প্রতি প্রার্থীকে দফা প্রতি সময় দেওয়া হয় আড়াই মিনিট - প্রতিপক্ষকে কাটান'এর জন্য ৩০ সেকেন্ড৷ এরই মধ্যে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত কিংবা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কিংবা চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার বাণিজ্যিক ঘাটতির মতো দুরূহ সমস্যার সমাধান করে ফেলতে হবে!
ওদিকে টেলিভিশনের পর্দার সামনে বসে থাকা দর্শকরা তো একটা ‘শো' দেখতে আগ্রহী, কোনো একটা চমকের প্রত্যাশায়: যেমন কোনো প্রার্থীর হঠাৎ ব্ল্যাকআউট, কিংবা ভুগোলের জ্ঞানের কোনো খাঁকতি৷ তবে তেমন মুহূর্ত বিরল হওয়ায় গত ৫০ বছর ধরে প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের টেলিভিশন দর্শকের সংখ্যা কমেই চলেছে৷
প্রতিবেদন: ভ্যাঁস মিশেলো/এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ