1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘যার সম্পদ ৫০ গুণ বেড়েছে, মানুষ তাকেই ভোট দিলে কী করা যাবে?'

১৫ ডিসেম্বর ২০২৩

নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামার গুরুত্ব কতটা? এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী এমপিদের ব্যবসা-বাণিজ্য, সম্পদের উৎস ইত্যাদি নিয়েও নিজের মত জানিয়েছেন আইনজীবী শাহদীন মালিক৷

https://p.dw.com/p/4aCeo
ড. শাহদীন মালিক
এখন সবাই এমপি ইলেকশন করছে টাকা-পয়সা বানানোর জন্য, মনে করেন ড. শাহদীন মালিকছবি: DW

ডয়চে ভেলে: এমপি, মন্ত্রীরা কি ব্যবসা বাণিজ্য বা লাভজনক পেশায় থাকতে পারবে?

শাহদীন মালিক: এমপিদের ক্ষেত্রে বাধা নাই, মন্ত্রীর পারবে না।। মন্ত্রীরা অন্য কোনো ব্যবসা বা লাভজন পেশায় জড়িত থাকতে পারবেন না।

তাহলে নির্বাচন কশিনে দেয়া হলফনামায়দেখা যাচ্ছে, মন্ত্রীদের সম্পদ বেড়েছে৷ কারো কারো কয়েকশ' গুণ বেড়েছে। এটা কীভাবে বাড়লো?

মাছ চাষ, ধান চাষ করতে পারবে না। সংবিধানে বলা আছে, অন্য কোনো সূত্র থেকে তাদের কোনো আয় হতে পারবে না। এখন বাড়ি ভাড়া থেকে যদি আয় পায়, ওইটা ব্যবসা হবে কিনা। বিদেশে বাড়ি ভাড়া থাকলে ওইটা সম্ভব। তারপর ফিক্সড ডিপোজিট থেকে ইন্টারেস্ট। মন্ত্রী হওয়ার আগে আমার টাকা ছিল। ফিক্সড ডিপোজিট থেকে ইন্টারেস্ট আমি পেতে পারি। কিন্তু সাধারণ অর্থে যে ব্যবসা, মাছের ব্যবসা হোক আর গাছের ব্যবসা হোক, ওটাতে আমি থাকতে পারবো না। জাহিদ মালেক ২০১৪ সালে মন্ত্রী হওয়ার আট মাস পরে তাকে আমি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। সে তার বাবার প্রতিষ্ঠান থাই অ্যালুমনিয়ামের চেয়ারম্যান ছিল। তখন সে আমার লিগ্যাল নোটিশ পেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাই অ্যালুমনিয়ামের চেয়ারম্যানের পদ ত্যাগ করেছে। সে-ও স্বীকার করেছে যে, মন্ত্রী হওয়ার পরে সে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান থাকতে পারে না। তারপরও হচ্ছে, কেউ জানে না। আবার কেউ জানলেও সেটা কেয়ার করে না। আমি আর কত করবো? কত জনের বিরুদ্ধে লাগবো? দেখছি, সম্পদ বাড়ছে। এখন আর লিখতেও ইচ্ছে করে না। লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।

তারা নিজেরাই আইন করে মরবে নাকি?: ড. শাহদীন মালিক

হলফনামায় দেখছি কারোর ৪০০ গুণ , কারোর ৭০০ গুণ সম্পদ বেড়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব?

কীভাবে সম্ভব এটা আপনিও জানেন, আমিও জানি।  আপনিও বলতে পারবেন, আমিও বলতে পারবো। এটা অবৈধভাবে বেড়েছে।

আগে দেখেছি অল্প কিছু লোকের বাড়ে। এবার তো ঝাঁকে ঝাঁকে, সবার বেড়েছে। এর রহস্যটা কী?

আমার ধারণা অন্য কিছু। আপনি মন্ত্রী, আমার ভাইকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। মন্ত্রীকে বললে ওসি ছেড়ে দেবে। ওসি ছেড়ে দেবে, কিন্তু তাকে তো খুশি করতে হবে। এখন এগুলো অবৈধ আয়। দুর্নীতি আরকি।

হলফনামায় যে তথ্য দেয়া হয় তা  বিশ্লেষণ করে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে?

না, নাই। এটা তো আমি আপনি পাবো না। এটা রাষ্ট্রীয় এজেন্সি ছাড়া তো কেউ পারবে না। আমি হলফনামায় বললাম আমার আট লাখ টাকা আছে। কিন্তু আছে ২৪ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যাংক তো সেটা আর বলবে না। ব্যাংকের কাছে আপনি আমি জানতে চাইলে বলবে- তুমি কে? এখন রাষ্ট্রীয় এজেন্সি যদি কোনো গরমিল পায়, কখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা যদি বলে দেয় তাহলে  ব্যবস্থা নেয়?

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বললেও ব্যবস্থা নেয় না। এবার তো নেয়নি। এবারও তো অনেকে অভিযোগ করলো। তার ভিত্তিতে কাউকে অবৈধ ঘোষণা করলো বলে তো শুনিনি। শুধু দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে একটা বাতিল হয়েছে। তবে এটা হলফনামার ব্যাপার না। এটা অন্য ব্যাপার।

দ্বৈত নাগরিকত্বের ব্যাপারেও দেখলাম দুই নীতি। কারুরটা বাতিল হলো, কারুরটা হলো না। এরকম কেন?

এটা কাগজপত্রের ব্যাপার। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে তো ভিসা, পার্সপোর্ট জোগাড় করা কঠিন। আর যারা অভিযোগ করেন, তারা হয়ত পুরো তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেন না। ফলে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

তাহলে কেউ বিষয়টি গোপন রাখতে পারলে সে পার পেয়ে যাবে?

হ্যাঁ পার পেয়ে যাবে।

এখন হলফনামায় যে সম্পদের বিবরণ দেয়া হয়, তার উৎস, বৈধ কিনা, কোনো কিছু গোপন করা হয়েছি কিনা, নির্বাচন কমিশন তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে এমন বিধান করা যায়?

রাষ্ট্র চাইলে সেটা করতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্র সেটা করে না। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এগুলো হওয়া উচিত। কিন্তু এখন রাষ্ট্রের যা অবস্থা! থিভস অব ঢাকা দেখেননি?  ভাইরাল হয়েছে তো। এখন সবাই এমপি ইলেকশন করছে টাকা-পয়সা বানানোর জন্য। মন্ত্রীও হচ্ছে টাকা পয়সা বানানোর জন্য। চাইলে তো সবই বন্ধ করা যায়। কিন্তু যে চাইবার সে না চাইলে তো আপনি, আমি কিছু করতে পারবো না।

ঋণখেলাপিদের কি ধরা গেছে? ক্রেডিট কার্ডের টাকার জন্য মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। কিন্তু আমরা যাদের বড় ঋণখেলাপি বলে চিনি, তাদেরটা তো বাতিল হয় না। এর কারণ কী?

সম্পদের সঠিক হিসাব না দিলে, আয় বৈধ না হলে মনোনয়ন বাতিল হবে- এটা আইনে বলা নেই। কিন্তু ঋণখেলাপি হলে মনোনয়ন বাতিল হবে- এটা জনপ্রতিনিধত্বমূলক আদেশের ১২ ধারায় বলা আছে। কিন্তু  অনেক বড় ঋণখেলাপিও ঋণ রিশিডিউল করে ঋণখেলাপির তালিকার থেকে নাম কাটিয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন। এখন আইন এরকম। রিশিডিউল করলে তো আইনের চোখে তিনি আর খেলাপি নন।

হলফনামা কি বিশেষ কোনো কাজে আসে?

হলফনামার ফলে প্রার্থীদের ব্যাপারে ভোটাররা একটা ধারণা পান, প্রার্থীরা কেমন। কিন্তু লোকেরা যদি চোর পছন্দ করে, তাহলে আপনি আমি কী করবো? যার সম্পদ ৫০ গুণ বেড়েছে, তাকেই ভোট দিলে কী করার আছে?

নির্বাচনের আগে মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব দেয়ার কথা ওঠে। প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে কি হিসাব দেয়া হয়?

না, দেয়া হয় না। আসলে এগুলো মুখে বলার বিষয় না। এগুলো আইনের বিষয়। এজন্য আইন করতে হয়। যারা হিসাব দেবেন, তারা নিজেরাই আইন করে মরবে নাকি?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য