যার যা প্রাপ্য তা নিশ্চিত করা হোক
৬ ডিসেম্বর ২০১৯ডয়চে ভেলের কথাই ধরুন৷ যখন রেডিওর যুগ ছিল, তখন ডয়চে ভেলের সিস্টেমে থাকা প্রতিটি অডিও রেডিও অনুষ্ঠানে প্রচার হলে সেই অডিওর স্বত্ত্ব যার, তিনি সেটির জন্য প্রাপ্য সম্মানী পেতেন৷ আর পুরো বিষয়টিই ছিল স্বয়ংক্রিয়৷ অর্থাৎ, জার্মানির আন্তর্জাতিক সম্প্রচারকেন্দ্রটির সিস্টেম থেকে যখন অডিও নেয়া হতো, তখন সেই তথ্য চলে যেতো ডয়চে ভেলের অর্থ সংক্রান্ত বিভাগে৷ তারপর স্বত্ত্ব যার, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে৷
রেডিওর যুগ বলতে গেলে প্রায় শেষ৷ এখন চলছে ভিডিওর জয়জয়কার৷ ডয়চে ভেলের সিস্টেমেও তাই পরিবর্তন এসেছে৷ একটি ভিডিও তৈরির পর সেটিতে কোন কোন অংশে কার কার ভিডিও, অডিও বা স্থির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তা আলাদা আলাদাভাবে একটি প্রোগ্রামে অন্তর্ভূক্ত করতে হয়৷ এরপর সেই প্রোগ্রাম স্বত্ত্ব অনুযায়ী যে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, শিল্পী বা আলোকচিত্রীর প্রাপ্য, তা তাদের বুঝিয়ে দেয়৷
জার্মানির আন্তর্জাতিক সম্প্রচারকেন্দ্র মেধাস্বত্ত্ব আইনের বিষয়ে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল৷ এমনও হয়েছে যে, কেউ কেউ তার প্রাপ্য নিতে চান না, কিন্তু দিনের পর দিন ডয়চে ভেলের তরফ থেকে তাদের সঙ্গে সেটা নিতে যোগাযোগ করা হয়েছে৷
আমি মনে করি, বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতেও একজন শিল্পীর, একজন আলোকচিত্রীর কিংবা ভিডিও সাংবাদিকের প্রাপ্য সম্মানী বুঝিয়ে দিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত৷ এক্ষেত্রে এখনো বেশ বড় ঘাটতি রয়ে গেছে৷ ফলে একজন শিল্পী জনপ্রিয় হওয়ার পরও প্রাপ্য সম্মানী পাচ্ছেন না৷
শুধু গণমাধ্যমই নয়, যেসব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম একজন শিল্পীর কন্টেন্ট ব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, সেগুলোও যাতে মেধাস্বত্ত্বের ব্যাপারে সচেতন হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া জরুরি৷ এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো যেতে পারে৷ ইউরোপীয় দেশগুলোর এই জোট কয়েকমাস আগে কপিরাইট সংক্রান্ত আইন হালনাগাদ করেছে৷ শিল্পীদের কাজের ব্যবহার অনুযায়ী প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত করা এই আইনের মূল উদ্দেশ্য৷ এটি ইউটিউব, ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে মেধাস্বত্ত্বের বিষয়টিকে আরো গুরুত্ব সহকারে নিতে কার্যত বাধ্য করছে৷
সংস্কার করা আইন অনুযায়ী অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে কপিরাইট আইনে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত সব ভিডিও এবং মিউজিক সরিয়ে ফেলতে হবে৷ এমন আইন নিয়ে বিতর্কও হচ্ছে অনেক৷ কেউ কেউ বলছেন, এর ফলে বৈধভাবে কন্টেন্ট আপলোড করার বিষয়টি আরো দুরূহ হয়ে উঠতে পারে৷ তবে, বিতর্ক যা-ই হোক, দিনের শেষে মেধাস্বত্ত্ব অনুযায়ী একজন ব্যক্তি যাতে তার প্রাপ্য মজুরি পান, তা নিশ্চিত করবে এই আইন৷
এখানে বলা প্রয়োজন, ইউটিউব, ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের দেশেও বেশ জনপ্রিয়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেগুলোকে যেভাবে আইনের আওতায় এনেছে, বাংলাদেশও সেভাবে আনতে পারে কিনা সেটা বিবেচনা করা যেতে পারে৷ পাশাপাশি জনপ্রিয় যেসব স্থানীয় প্ল্যাটফর্ম অন্যের কন্টেন্ট বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে, তারা সেসব কন্টেন্ট উৎপাদনকারীদের ন্যায্য মজুরি দিচ্ছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করা যেতে পারে৷ তাহলে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, শিল্পীদের তাদের প্রাপ্য মজুরি পাওয়ার পথে বাধা অনেকটাই দূর হবে৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷