যাদের জয়-পরাজয়ে অনেক চমক
সাতবারের সংসদ সদস্যের পরাজয়, প্রতিমন্ত্রীকে বিরাট ব্যবধানে নতুন প্রার্থীর হারিয়ে দেয়া, নৌকা পেয়েও ১৪ দলের হেভিওয়েটদের জিততে না পারা- এমন বেশ কিছু চমক ছিল এবারের নির্বাচনের ফলাফলে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে....
হারলেন ‘বঙ্গবীর’
টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে নির্বাচনে লড়াই করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী৷ গামছা প্রতীক নিয়ে ৬৭ হাজার ৫০১ ভোট পেয়েছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা৷ কিন্তু নৌকা প্রতীকে অনুপম শাহজাহান পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪০১ ভোট৷
আবার সংসদে ‘বহিষ্কৃত’ লতিফ
কাদের সিদ্দিকী না জিতলেও সংসদ সদস্য হয়েছেন তার বহুল আলোচিত ভাই, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী৷ তিনি ট্রাক প্রতীকে ৭০ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়েছেন৷ প্রায় ১৭ হাজার ভোটে হারিয়েছেন নৌকার মোজহারুল ইসলাম তালুকদারকে৷
বিমান প্রতিমন্ত্রীকে মাটিতে নামালেন ব্যারিস্টার সুমন
যুবলীগ থেকে হয়েছেন বহিষ্কৃত, আবেদন করেও পাননি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন৷ সেই ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন হারিয়ে দিয়েছেন সরকারের বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীকে৷ তা-ও প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে৷ হবিগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র লড়ে প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার ভোট পেয়েছেন সুমন৷ অন্যদিকে নৌকার মো, মাহবুব আলী পেয়েছেন সাড়ে ৬৯ হাজার ভোট৷
নৌকা পেয়েও ডুবলেন ইনু
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে ১৪ দলীয় জোটের হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু৷ কিন্তু হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের কাছে৷ ট্রাক প্রতীক নিয়ে বিজয়ী প্রার্থী পেয়েছেন এক লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট, অন্যদিকে ইনু পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট৷
তীরে ভিড়তে পারেননি বাদশাও
১৪ দলের প্রার্থী হয়ে তিনবার রাজশাহী-২ আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা৷ ৩১ হাজার ৪৬০ ভোট পেয়ে তিনি হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শফিকুর রহমানের কাছে৷ ৫৫ হাজার ভোট পেয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের এই সহ-সভাপতি৷
ব্যবসায়ী আজাদে ধরাশায়ী নৌকা
ফরিদপুর–৩ আসনে নৌকার প্রার্থীর সাথে নির্বাচনি প্রচার থেকে উত্তেজনা চলছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের৷ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা লড়েছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে৷ ৬৯ হাজার নয় ভোটের ব্যবধানে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা শামীম হককে হারিয়েছেন৷ এক লাখ ৩৪ হাজার ৯৮ ভোট পড়েছে তার পকেটে৷
সহকারীর কাছে মঞ্জুর হার
১৯৮৬ সাল থেকে সাতবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে কখনো হারেননি জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু৷ অষ্টমবারের মতো সংসদ সদস্য হওয়ার পথে হোঁচট খেলেন নিজের সাবেক এপিএসের কাছে৷ স্বতন্ত্রপ্রার্থী মো: মহিউদ্দীন মহারাজ পেয়েছেন ৯৯ হাজার ২৬৮ ভোট৷ অন্যদিকে আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ৭০ হাজার ৬৮১৷
ঈগলের কাছে হারলেন গোলাপ
এবারের নির্বাচনে অন্যতম আলোচিত আসন ছিল মাদারীপুর-৩৷ এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান ওরফে গোলাপকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম৷ ঈগল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৬৩৩ ভোট৷ অন্যদিকে সোবহান পেয়েছেন ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট৷ এই আসনে নির্বাচনি প্রচারে একজনের মৃত্যু হয়েছিল৷
তৃণমূল বিএনপি মহাসচিবের জামানতও গেল
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার শুধু হারেননি, জামানতও হারিয়েছেন৷ নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে লড়াই করে মাত্র তিন হাজার ১৯০ ভোট পেয়েছেন তিনি৷ অন্যদিকে এই আসনের জয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের গোলাম দস্তগীর গাজী পেয়েছেন এক লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট৷ মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়৷ সেই হিসাবে জামানত বাঁচাতে তৈমুরের প্রয়োজন ছিল অন্তত ২৬ হাজার ৫৭৮ ভোট৷
জামানত হারালেন শমসের মবিনও
তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন শমসের মবিন চৌধুরীর পরিণতিও হয়েছে দলের মহাসচিবের মতো৷ সিলেট-৬ আসনে মাত্র ১০ হাজার ৯৩৬ ভোট পেয়েছেন তিনি ৷ ভোট পড়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ৭০২টি। জামানত বাঁচাতে তার প্রয়োজন ছিল অন্তত ১৪ হাজার ৫৮৭ ভোট৷ এই আসনে বিজয়ী নৌকার নুরুল ইসলাম নাহিদ পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৭৮ ভোট৷
এমপিকে হারালেন কল্যাণ পার্টির ইব্রাহিম
রাজনীতিতে, টেলিভিশনের টক শোতে বরাবরই সরব কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম৷ কক্সবাজার-১ আসন থেকে হাতঘড়ি প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৮১ হাজার ৯৫৫ ভোট৷ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী, বর্তমান এমপি জাফর আলম পেয়েছেন ৫২ হাজার ৯৮৬ ভোট।
আলোচিত শাহজাহান ওমরের বড় জয়
নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমরের জেল থেকে ছাড়া পাওয়া, আওয়ামী লীগের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যোগ দেয়া চমক তৈরি করে রাজনৈতিক অঙ্গনে৷ নির্বাচনে ৯৫ হাজার ৪৭৮ ভোট পেয়েছেন আলোচিত এই নেতা৷ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কের পার্টির আবু বকর সিদ্দিক পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৬২৪ ভোট৷