ম্যান্ডেলার স্বপ্ন মৃত্যুর পথে?
১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পান নেলসন ম্যান্ডেলা৷ দীর্ঘ দিনের সংগ্রামের পর তার আশা ছিল সাউথ আফ্রিকা পুরো মহাদেশের মডেল হয়ে উঠবে৷ কিন্তু প্রচণ্ড জাতিবিদ্বেষ সেই স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেয়নি৷
আফ্রিকার জনক
আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন ম্যান্ডেলা৷ স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকার কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে কারাদণ্ড হয় ম্যান্ডেলার৷ মুক্তির পর ১৯৯৪ সালে তিনি সাউথ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালে অবসর নেওয়ার পরেও তিনি আফ্রিকার শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন৷ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ৯৫ বছর বয়সে তার মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে নামে শোকের ছায়া৷
রাজনৈতিক দমনের শিকার
ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকেরা ১৯৪০ এর দশকে শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুর বর্ণবাদী শাসন চালু করে৷ চামড়ার রংয়ের ওপর ভিত্তি করে সাউথ আফ্রিকানদের 'সাদা', 'নেটিভ', 'কালারড' বা 'ভারতীয়' হিসাবে ভাগ করা হয়৷ এই ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেন ম্যান্ডেলার মতো নেতারা৷ নানা বর্ণের মানুষের দেশটিকে বরং বৈচিত্র্যে পূর্ণ ‘রেইনবো’ বা ‘রংধনু’ দেশে পরিণত করতে চেয়েছিলেন তারা৷
দুর্ভোগ ও সহিংসতার ইতিহাস
সাউথ আফ্রিকার প্রজন্মের পর প্রজন্ম শিকার হয়েছে চাপিয়ে দেয়া বর্ণবাদের৷ সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গদের শাসনের অবসান হতে চলেছিল৷ ৮০র দশকের শেষে শুরু হয় বর্ণবাদবিরোধী সহিংস আন্দোলন৷ ম্যান্ডেলা ও অন্য় রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি উচ্চারিত হয় জোরেসোরে৷
অবশেষে মুক্তি, স্বাধীনতা
১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বর্ণবাদ অবসানের পদক্ষেপ হিসেবে কেপটাউনের ভিক্টর ভার্সটার কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয় ম্যান্ডেলাকে৷ প্রতিরোধ সংগ্রামের এই নেতা তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের সামনে দাঁড়ান, মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে জানান বিজয়ের বার্তা৷ সেদিন যারা তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন, তাদের অনেকে ম্যান্ডেলাকে কখনও দেখেননি৷ তার ২৭ বছর কারাবাসের বেশিরভাগ সময় কেটেছে রবেন দ্বীপের কারাগারে৷
শান্তিতে নোবেল
বর্ণবাদের অবসানে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ম্যান্ডেলা এবং সাউথ আফ্রিকার শেষ শ্বেতাঙ্গ নেতা ফ্রেডেরিক উইলেম ডি ক্লার্ক ১৯৯৩ সালে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পান৷ পরের বছরই দেশটির ইতিহাসে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নেলসন ম্যান্ডেলা৷ প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই ডি ক্লার্ককে নিজের ডেপুটি ঘোষণা করেন তিনি৷
মহাদেশের নেতা
আদর্শের দিক দিয়ে শুধু সাউথ আফ্রিকা নয়, বরং পুরো আফ্রিকার নেতা ছিলেন ম্যান্ডেলা৷ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থন জানানোয় জাম্বিয়া, টানজানিয়া এবং নাইজেরিয়া সফর করেন তিনি৷ শান্তি স্থাপনে জায়ার, কঙ্গো, বুরুন্ডি, লেসোথোসহ অনেক দেশের নেতাদের সহায়তা করেছেন তিনি৷ সবক্ষেত্রে সফল না হলেও আফ্রিকার একতা, উন্নয়ন ও শান্তির ব্যাপারে তার ছিল দৃঢ় অবস্থান৷
মহাদেশীয় স্বপ্নের মৃত্যু?
ম্যান্ডেলার মুক্তির পর বর্ণবাদেরপ অবসানে উৎফুল্ল হয়েছিল পুরো আফ্রিকা৷ নাইজেরিয়া, বুরুন্ডি এবং কঙ্গোতে চলা সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসাদের দেয়া হয়েছিল আশ্রয়৷ কিন্তু গত ১৫-১৬ বছর ধরে দেশটিতে মাথাচাড়া দিচ্ছে জেনোফোবিয়া বা বিদেশিবিদ্বেষ৷ আফ্রিকার অন্য দেশ থেকে আসা মানুষদের ওপরও চলছে নির্বিচার সহিংসতা৷