মোমের জাদুঘর
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ইরাক৷ গত একটি দশক ধরে যুদ্ধ, মুত্যু আর হানাহানি ভরা রক্তাক্ত এক দেশ৷ কিন্তু আজকের এই বিধস্ত ইরাকের আছে এক সোনালি ইতিহাস৷
আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে, এখানেই গড়ে উঠে প্রাচীন আসিরীয় সভ্যতা৷ টাইগ্রিস নদীর তীরে এখানেই গড়ে উঠে গৌরবোজ্জ্বল ব্যবিলনীয় সভ্যতা৷ এখানেই ছিলো ব্যাবিলনের আশ্চর্য শূন্যোদ্যান৷ কিন্তু এসব আজ স্মৃতিকথা৷ হারিয়ে যাওয়া দিন৷
হারিয়ে যাওয়া সেই ইতিহাসেরই কিছু অংশকে মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য ইরাকের বাগদাদে তৈরি হয়েছে একটি জাদুঘর৷ মোমের তৈরি বিভিন্ন ভাস্কর্য আর মানুষের প্রতিমূর্তি দিয়েই এখানে বয়ান করা হয়েছে শত বছরের কথা৷
ইরাকের প্রাচীন ঐতিহ্যের সকল ইতিহাসের স্থান অবশ্য হয় নি এ জাদুঘরে৷ এখানে আছে শুধু ইরাকের গত একশ বছরের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বয়ান৷
প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন'র শাসনকালের আগের বাগদাদ, ইরানের সঙ্গে ইরাকের আট বছরের যুদ্ধ, কুয়েতে ইরাকের আক্রমণ এবং ইরাকে অ্যামেরিকান সামরিক অভিযান, যুদ্ধ ও তার প্রভাবের ধারাবাহিক বর্ণনাই মূলত স্থান পেয়েছে এই জাদুঘরে৷
এগুলো ছাড়াও সাধারণ মানুষের আটপৌরে জীবনের অল্প কিছু গল্পও আছে এখানে৷ এই যেমন- বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা নারী, নাপিতের দোকানে চুল কাটাতে আসা পুরুষ, বিয়ের উৎসব ইত্যকার কিছু ছবি বর্ণনা করা হয়েছে মোমের তৈরি অবয়ব দিয়ে ৷
পাঁচশ'রও বেশি ভাস্কর্য আছে এই জাদুঘরে৷ রং, পোশাক আর আলোর অপূর্ব সমাহারে ভাস্কর্যগুলো যেন প্রাণময় হয়ে ওঠেছে৷ আর অতীতের গল্পগুলো যেন হয়ে উঠেছে ঘটমান বাস্তব৷
১৯৭১ সালে চালু হয়েছিলো এই প্রত্নজাদুঘর৷ ২০০৩ সালে ইরাকে অ্যামেরিকার আক্রমণের পর বন্ধ হয়ে যায় এটি৷ অ্যামেরিকান অভিযানের দিনগুলোতে বোমার আঘাতে জাদুঘরটি অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ দীর্ঘ দিন বন্ধের পর এটিকে পুনরায় খুলে দেয়া হয় ২০০৮ সালে৷
এই প্রত্নজাদুঘরে ঘুরতে আসা ইরাকি নাগরিকদের কেউ বলছেন, এখান থেকে আমাদের শিশুরা খেলাচ্ছলে জানতে পারে অতীত ইতিহাস৷ কেউ বলছেন, এই জাদুঘর একটি জানালা, এখানে তাকিয়ে দেখা যায় দূরের অতীত৷
এই জাদুঘরের পরিচালক বাসেম আল আনিজি বলেন, ইরাকের প্রথম বাদশাহ ফয়সাল থেকে শুরু করে এ যাবৎ যত নেতা ইরাকের নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের সকলের ভাস্কর্য স্থাপনেরও একটি পরিকল্পনা রয়েছে৷ আর এজন্য নতুন জায়গা খুঁজছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ৷
তিনি আরো বলেন, কোনো বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইতিহাসকে তুলে ধরা নয় কিংবা নয় কোনো মূল্যায়ন, ইতিহাসে যে ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তারই অবিকল বয়ান তুলে ধরা হয় এই প্রত্নজাদুঘরে৷ তিনি বলছেন যে, ইতিহাসকে মূল্যায়ন করবে জনগণ৷ জাদুঘরের কাজ শুধু সেটি তুলে ধরা৷
প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ