মোদী-ট্রাম্প কথাই হয়নি, বললো ভারত
২৯ মে ২০২০হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের কাছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ''ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা ছোটখাট বিষয় নয়, বড় ধরনের বিরোধ। দুই দেশেই ১৪০ কোটি লোক আছে। দুই দেশের সেনাবাহিনীও খুব শক্তিশালী। সীমান্ত সমস্যায় ভারত একেবারেই খুশি নয়, সম্ভবত চীনও খুশি নয়।'' তারপরই ট্রাম্প যোগ করেন, ''আমি আপনাদের একটা কথা বলতে পারি। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম। চীনের সঙ্গে যা হচ্ছে, তাতে তাঁর মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে।''
কিন্তু ট্রাম্পের এই দাবি নিয়ে বিভ্রান্তি চরমে। ভারতে সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, ট্রাম্প শেষবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন গত এপ্রিলে। ৪ এপ্রিল তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ফোন করেছিলেন এবং করোনার চিকিৎসার জন্য হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন চেয়েছিলেন। তারপর তো দুই নেতার মধ্যে ফোনে কোনো কথা হয়নি। বিদেশমন্ত্রক ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে কথা বলছে ভারত। উত্তজনা কমানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অ্যামেরিকা বা তৃতীয় কোনো পক্ষের কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না।
প্রশ্ন হলো, যদি সম্প্রতি ফোনে কথা না হয় তো, ট্রাম্পআগ বাড়িয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এই দাবি করলেন কেন? ট্রাম্প যেভাবে এখন প্রায় প্রতিদিন ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধ নিয়ে কথা বলছেন, তা দুই দেশের কেউই খুব একটা পছন্দ করছে বলে মনে হচ্ছে না। সেখানে যদি দেখা যায়, ট্রাম্প ফোনে কথাই বলেননি, তা হলে তিনি এমন অসত্য দাবি করলেন কী করে?
ট্রাম্প দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন। ভারত বা চীন কেউই অবশ্য তাতে সাড়া দেয়নি। ওভাল অফিসের সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প আবার তার মধ্যস্থতা করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ''দুই দেশ চাইলে আমি অবশ্যই সমস্যা মেটাতে মধ্যস্থতা করবো।'' চীনের বিদেশমন্ত্রক এই নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও সে দেশের সরকারি সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, ''ভারত ও চীন তাঁদের সর্বশেষ বিরোধ দ্বিপাক্ষিক স্তরে মিটিয়ে নিতে পারবে। দুই দেশকেই অ্যামেরিকা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, অ্যামেরিকা সবসময় আঞ্চলিক শান্তিপ্রয়াসকে বানচাল করে এবং পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে।''
সম্প্রতি পূর্ব লাদাখ ও সিকিমে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চীনের সেনার সঙ্গে ভারতীয় সেনার হাতাহাতি হয়েছিল। তারপর চীন পূর্ব লাদাখে জল ও বায়ুসীমা লংঘন করে বলে ভারত অভিযোগ করেছে। উপগ্রহ থেকে নেওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে সেনা ঘাঁটিতে চীন সম্প্রতি প্রচুর নির্মাণকাজ করেছে। সেখানে চারটি ফাইটার জেট নিয়ে আসা হয়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখাতেও দুই দেশ সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছে। যুদ্ধাস্ত্রও মোতায়েন করেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সে দেশের সেনাকে নির্দেশ দিয়েছেন। উত্তেজনা প্রবল হওয়ার পর অবশ্য প্রথমে বেইজিং-এ বিদেশমন্ত্রক ও তারপর ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত সুন ওয়েডং সুর অনেকটাই নরম করেছেন। ওয়েডং বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব পড়ে এমন কোনো কাজ করা হবে না।
জিএইচ/এসিবি (রয়টার্স, পিটিআই, এএনআই)