বিজেপি জোটে ভাঙন
১৩ জুন ২০১৩বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের শরিক দল জেডি (ইউ) জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে৷
আডবানি-মোদী ইস্যুতে বিজেপি দ্বিধাবিভক্ত৷ গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এক নম্বর করে আগামী সাধারণ নির্বাচনে নামার দলীয় সিদ্ধান্তে দলের প্রবীণতম নেতা লালকৃষ্ণ আডবানির ইস্তফা-বিতর্কের জট ছাড়ানোর পরই, ঐ একই ইস্যুতে সংযুক্ত জনতা দল বিজেপি নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক আতাঁত (এনডিএ) থেকে বেরিয়ে যাবার হুমকি দিয়েছে৷ বলেছে, মোদীকে নির্বাচনী প্রচারে সামনে রাখলে সংযুক্ত জনতা দলের পক্ষে বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে নামা সম্ভব হবে না৷
এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিহারের শাসক দল সংযুক্ত জনতা দলের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার দলের কর্মসমিতির বৈঠক ডেকেছেন এই সপ্তাহের শেষে৷ নীতীশের মোদী বিরোধিতার কারণ কী? রাজ্যে বিজেপির সঙ্গে তাঁর জোট সরকার থাকা সত্ত্বেও হালে বিহারের মহারাজগঞ্জ সংসদীয় কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে বিজেপি নীতীশের দলকে সমর্থন করেনি এমনটাই ধারণা৷ ফলে সংযুক্ত জনতাদল প্রার্থী হেরে যায় লালুপ্রসাদের আরজেডি দলের কাছে৷
তাই নীতীশ কুমারের সামনে বিকল্প এখন দুটি৷ এনডিএ ছাড়লে রাজ্যে উচ্চবর্ণের ভোট হাতছাড়া হতে পারে৷ না ছাড়লে মুসলিম ভোট হারাবার আশঙ্কা৷ সর্বোপরি নীতীশ কুমারের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি নষ্ট হবার ভয়৷ তবে বিহারে ক্ষমতা হারাবার ভয় নেই৷ কারণ ২৪৩টি আসনের বিধানসভায় সংযুক্ত জনতা দলের বিধায়ক ১১৮জন৷ চারজন নির্দল বিধায়কের সমর্থন জোগাড় করতে পারলে মেয়াদ পূর্ণ করতে অসুবিধা হবার কথা নয় নীতীশ কুমারের৷
এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাবি উঠেছে ফেডারেল ফ্রন্ট নামে অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে তৃতীয় বিকল্প গঠনের৷ ডাক দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ তাতে সাড়া দিয়েছেন ওড়িষার বিজু জনতা দলের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক এবং সংযুক্ত জনতা দলের নীতীশ কুমার উভয়েই৷ তাঁদের মতে, দুর্নীতিতে জেরবার এবং প্রশাসনিক পক্ষাঘাতে আক্রান্ত কেন্দ্রের কংগ্রেস-জোট সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষ বীতশ্রদ্ধ৷ অন্যদিকে কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গেও মানুষ আপোষ করতে রাজি নয়৷ তাই এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে এই ফেডারেল ফ্রন্ট করা জরুরি৷ ২০১৪ সালের সংসদীয় নির্বাচনের পর যাতে তারা সরকার গঠন করতে পারে৷
ফেডারেল ফ্রন্ট গঠন করা আদৌ সম্ভব কিনা – তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে৷ বামদলের মতে এই প্রস্তাব অবাস্তব৷ আগে অনেকবার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু কোনোবারেই তা সফল হয়নি৷ এবারেও যে হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷ তাঁদের মতে, আঞ্চলিক দলগুলির অ্যাজেন্ডা পৃথক৷ অতীতে কেন্দ্রের মনমোহন সিং সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেবে বলে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে কথা দিয়েও মুলায়েম সিং-এর সমাজবাদী পার্টি তা রাখেনি৷ এছাড়া, দক্ষিণের জয়ললিতার পার্টির মতিগতি দু'দিনেই পাল্টে যেতে পারে৷ তার ওপর মায়াবতির বহুজন সমাজ পার্টির ওপর ভরসা রাখাও কঠিন৷ কেন্দ্রকে পাশে রাখতে হবে নানা কারণে৷ দেখা দিতে পারে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সংঘাত৷ সেক্ষেত্রে স্থায়ী সরকার গঠন দূর অস্ত৷