মেয়রের মতো মশাও বসে থাকবে?
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচন হয়ে গেছে ১ ফেব্রুয়ারি৷ নগরবাসী দুইজন নতুন মেয়রও পেয়েছেন৷ তবে আইন অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পাবেন মে মাসে৷ কিন্তু এরইমধ্যে ঢাকায় মশার ঘনত্ব বাড়ছে৷ বাড়ছে দূষণ৷
দুই দিন আগে কীটতত্ত্ববিদদের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আগামী ১৫ দিনে ঢাকায় মশার ঘনত্ব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে৷ ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশাও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেশি৷ সামনে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার ‘উত্তম প্রজনন কাল'৷
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশারের নেতৃত্বে এই গবেষণা চালানো হয়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এবার কতটা বেশি হতে পারে তা বলার সময় এখনো আসেনি৷ মার্চ-এপ্রিলে এটা বোঝা যাবে৷ তবে গত বছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে এডিস মশার যে ঘনত্ব ছিলো এবছরের একই সময়ে ঘনত্ব বেশি৷ আবার গত বছর একই সময়ের তুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এই বছরে বেশি৷ এবছর এখন পর্যন্ত এডিস মশা এবং ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা গতবছরের চেয়ে বেশি৷আজ এবং আগামীকাল যে বৃষ্টিপাত হবে তাতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে৷ আমরা তাই আগাম ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছি৷ আগাম ব্যবস্থা না নেয়া হলে এবছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি অতীতের চেয়ে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে৷''
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে জরিপে তিনি ঢাকা শহরের ১০০টি জায়গার মধ্যে ১৩টি জায়গায় এডিস মশা ও লার্ভার উচ্চ ঘনত্ব পেয়েছেন৷ আর এডিস মশা পাওয়া গেছে ২৬টি জায়গায়৷ আর তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকা শহরকে ছয়টি ভাগে ভাগ করে ধারাবাহিক জরিপ চালাচ্ছেন৷ তাতে পরিবাগে সবচেয়ে বেশি এডিস মশা পাওয়া গেছে৷ এছাড়া বাসাবো, খিলগাঁও, শাঁখারীবাজার, পাটুয়াটুলি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর ,গুলশান ও বনানী এডিস মশা ও লার্ভা পাওয়া গেছে৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে গত বছর(২০১৯) ১২ মাসে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন৷ মারা গেছেন ২৬৬ জন৷ আর এখনো হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে৷ জানুযারি মাসে হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৯৭ জন৷ গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়৷
এই প্রেক্ষাপটে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন চলছে নতুন মেয়র ছাড়াই৷ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের মেয়াদ শেষ হবে ১৬ মে৷ এরপর নতুন মেয়র আতিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেবেন৷ কারণ নির্বাচনের আগে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে৷ এখন চলছে প্যানেল মেয়র দিয়ে৷ আর দক্ষিণ সিটির মেয়রের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ মে৷ সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় তিনিই ওই সময় পর্যন্ত মেয়র থাকবেন৷ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেবেন ১৪ মের পর৷ নতুন দুইজন মেয়রেরই এক নাম্বার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হলো রাজধানী ঢাকাকে এডিস মশা মুক্ত করা৷ ডেঙ্গুকে বিদায় জানানো৷
দুই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মাচারীরা এখন নতুন মেয়রের অপেক্ষায় আছেন৷ তাই মশা নিধনসহ সবই কাজই গতি হারিয়েছে৷ আর নতুন মেয়ররা মশা নিধনের আহ্বান জানিয়েই বসে আছেন৷ ফলে মশা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়ছে৷ ঢাকা উত্তর সিটির মশক নিধন টিম কয়েকদিন আগে পুরনো যন্ত্র নিয়ে মশা নিধনের নামার পর রণে ভঙ্গ দেন৷ কারণ ওই মেশিনগুলো কাজ করছে না৷ নিম্নমানের হওয়ায় আগুন ধরে যাচ্ছে৷
তবে এরইমধ্যে নতুন করে ২০০ ফগার মেশিন, ২৩৮টি পালস ফগমেশিন, ১৫০টি হস্তচালিত মেশিনসহ আরো কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হলেও তা এখনো ব্যবহার শুরু হয়নি বলে উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে জানাগেছে৷
মঙ্গলবার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অবশ্য মশা নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধন করেছে৷ মেয়র সাঈদ খোকন ওই প্রোগ্রামের উদ্বোধন করে বলেছেন,‘‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আগামী এক সপ্তাহ এডিস মশা নিধনসহ সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হবে৷''
এদিকে বায়ুদূষণে ঢাকা এখন বিশ্বের এক নাম্বার শহর৷ এয়ার ভিজ্যুয়ালের আজকের( মঙ্গলবার) প্রতিবেদনেও ঢাকা বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ শহর৷ ঢাকার বাতাস চরম অস্বাস্থ্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ আর ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও এখন নাজুক৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ঢাকার বায়ু ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে কাজ করেন৷ তিনি বলেন,‘‘প্রচলিত নিম্নমানের জ্বালানি তেল, কয়লা পোড়ানো, শিল্প কারখানা, বর্জ্য পোড়ানোর সঙ্গে বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ ধুলো ৷ এটা সাধারণ ধুলো নয় ঢাকায় এখন বিষাক্ত ধুলো বাতাসকে দূষিত করছে৷ বাড়ি ঘর ও রাস্তাঘাট নির্মাণ, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷এটা নিয়ে অনেক কথা হলেও এটা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না৷ সিটি কর্পোরেশন একটা বড় ভূমিকা পাল করতে পারে ৷ কিন্তু তারও কোনো কাজ করছে না৷ তারা পানি না ঢেলে উল্টো সকাল বেলা ঝাড়ু দিয়ে ঢাকাকে ধুলোর শহরে পরিণত করছে৷''