1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেসির দলবদল: যেখানে কেবল টাকাই কথা বলে

৯ আগস্ট ২০২১

অশ্রুভেজা চোখে বার্সেলোনাকে বিদায় জানিয়ে পিএসজির পথে হাঁটছেন লিওনেল মেসি৷ অকল্পনীয় এই ঘটনায় ইউরোপীয় ফুটবলে পরিবর্তনের আভাসটাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3yke4
সংবাদ সম্মেলনে কাঁদছেন মেসিছবি: Pau Barrena/Getty Images/AFP

ফুটবলের সর্বকালের সেরা কে? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হতে পারে৷ কিন্তু যাদের নাম এ তালিকায় থাকবে, নিঃসন্দেহে মেসি তাদের মধ্যে ওপরের দিকেই থাকবেন৷

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বার্সেলোনার সঙ্গে ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ইতি টানলেন মেসি৷ স্বীকার করলেন, তিনি বিদায় বলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না৷ তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি তার পুরো ক্যারিয়ারটাই এই ক্লাবেই কাটাতে চেয়েছিলেন, এখানেই থাকতে চেয়েছিলেন৷

তিনি বলেন, ‘‘এই বছর আমার পরিবার এবং আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, আমরা আমাদের বাড়িতেই থাকবো, এবং আমরা এটাই আন্তরিকভাবে চেয়েছিলাম৷ আমরা সবসময় এটাকেই (বার্সেলোনা) আমাদের বাড়ি মনে করেছি৷ ভেবেছিলাম আমরা বার্সেলোনাতে থাকবো৷ কিন্তু আজ আমাদের সবকিছুকে বিদায় জানাতে হচ্ছে৷''   

বার্সেলোনার আইকন

মেসির বার্সেলোনা ক্যারিয়ারে এত বেশি সুন্দর মুহূর্তের জন্ম হয়েছে যে একটিকে বাছাই করা রীতিমতো দুঃসাধ্য৷ ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী দলটির হয়ে তার অসাধারণ প্রতিভা শহরটিকেও সমৃদ্ধ করেছে এবং মেসিকে কাতালান গর্বের প্রতীকে পরিণত করেছে৷

কিন্তু মাঠে তার অসাধারণ মুহূর্তগুলোও এখন ধূসর হয়ে গেছে৷ মেসি এবং বার্সেলোনার গল্পটা এখন অতীতের কোনো এক যুগের সাক্ষী হয়ে গেছে৷ যে ক্লাব মেসি ছেড়ে যাচ্ছেন এবং যে ক্লাবে ২০০৫ সালে তার অভিষেক হয়েছিল, তার মধ্যে যোজন যোজন ফারাক৷

পরিসংখ্যানেও মেসি চমৎকার, কিন্তু মেসি তার চেয়েও বেশি- একজন শিল্পী৷ ২০০০ সালে এক কিশোর হিসেবে তিনি বার্সেলোনায় এসে আইকনে পরিণত হয়েছিলেন৷ ভবিষ্যতে মেসির ক্যারিয়ারে যা-ই ঘটুক, মেসি এবং বার্সেলোনা সমার্থক হয়েই থাকবে৷ কিন্তু মেসিকে ছাড়া বার্সেলোনা আর আগের মতো থাকবে না৷

পিএসজির অকল্পনীয় উদ্যোগ

মেসি বলেছিলেন, ‘‘এখনও কোনো কিছু নিশ্চিত নয়৷ অনেক কল পাচ্ছি এবং অনেক ক্লাবই আগ্রহ প্রকাশ করছে৷ এই মুহূর্তে কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি, কিন্তু আলোচনা চলছে৷''

মেসি সব দরজাই খোলা রাখতে চাচ্ছেন, কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, পিএসজিতেই দুই বছরের চুক্তিতে তিনি যোগ দিতে যাচ্ছেন৷ স্বদেশি, বন্ধু ও ভবিষ্যৎ কোচ মাউরিসিও পচেটিনোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ একই সঙ্গে বার্সার একসময়কার টিমমেট নেইমার এবং কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে মিলে দুর্দান্ত এক ফরোয়ার্ড লাইন গড়ে তোলার সুযোগও থাকছে৷

কিন্তু ৩৪ বছরের মেসির কি আর কিছু প্রমাণ করার বাকি আছে? আসছে বছর বিশ্বকাপ জয় ছাড়া মেসির নতুন করে অর্জনের কি কিছু আছে? তাহলে মেসি কেন মার্সাই, ডর্টমুন্ড বা মিলানে গেলেন না?

দিয়েগো মারাদোনা ১৯৮৪ সালে যখন নাপোলিতে যোগ দেন, তখন তার বয়স এখনকার মেসির চেয়ে কম ছিল৷ কিন্তু সেটা ধারণাও করা হচ্ছিলো৷ ইউরোপের দ্বিতীয় সারির একটি দলে যোগ দেয়ার ফলে তাকে ঘিরে এক ধরনের আবেগও তৈরি হয়েছিল৷ কিন্তু মেসির প্যারিসে যোগ দেয়াটা কেবলই কে ইতিহাসের স্রবোচ্চ ট্রান্সফার ফি দিয়ে তাকে নিতে পারে, এমন প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছিল৷ কেবলমাত্র আবুধাবি থেকে অর্থ পাওয়া ম্যানচেস্টার সিটিই এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরেছিল৷ সম্ভবত চেলসিও৷ 

মেসির সঙ্গে পিএসজির এখনও কোনো চুক্তি সই হয়নি৷ কিন্তু পতনের মুখে থাকা একটি সুপারক্লাব থেকে উঠতি একটি ক্লাবে যাওয়ার অনেক প্রতীকি অর্থও রয়েছে৷ ইউরোপীয় ফুটবলের নতুন অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে মেসি দুই বছর চুক্তি করবেন বলেই মনে হচ্ছে৷ চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে সামনে রেখে ক্লাবটি সর্বস্ব বাজি রেখে মেসির একসময়কার প্রতিপক্ষ সার্জিও রামোসকেও দলে ভেড়াচ্ছে৷

বিনিয়োগ, তহবিল এবং ধণাঢ্যদের আনাগোনা

‘সর্বস্ব বাজি রাখা' অবশ্য বলা ঠিক নয়, কারণ এতে মনে হয় যে এমন সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো ধরনের ঝুঁকিও কাজ করছে৷ পিএসজি আসলে মেসি বা অন্য কারো সঙ্গে চুক্তি করেই কোনো ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়ছে না৷ তাদের পক্ষে একটি চুক্তি সই না হলেও টাকার পরিমাণের কথা চিন্তা না করেই অন্য যে-কোনো চুক্তি করা সম্ভব৷ কাতার ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপের এত বেশি অর্থ যে ম্যানচেস্টার সিটি ছাড়া আর কেউই তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না৷

১১৮ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে জ্যাক গ্রিলিশের সঙ্গে সিটির চুক্তি বা তার ইংল্যান্ড দলের ক্যাপ্টেন হ্যারি কেইনকে দলে ভেড়ানোর সম্ভাবনা, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের হিসাবে মেসিকে কেনার চেয়ে বেশি কার্যকর৷ কিন্তু এসব আসলে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ যদি একটাও ‘মেসি পিসজি' শার্ট বিক্রি না হয়, তাতে কার কী আসে যায়? কার ক্ষতি হয়? বাণিজ্য বা মাঠে তিনি কী করেন, তার চেয়ে মেসিকে দলে ভেড়ানোটা দলের স্ট্যাটাসের জন্য অনেক বেশি জরুরি৷

বার্সেলোনা, রেয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, বায়ার্ন মিউনিখ- এইসব ইউরোপীয় ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী বড় দল স্থানীয় ও জাতীয় সাফল্যকে পুঁজি করে ধীরে ধীরে এশিয়া ও অ্যামেরিকায় নিজেদের নাম ছড়িয়েছে৷ কিন্তু রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে চলা ক্লাবগুলো বাণিজ্যিক সাফল্য বা ভক্তদের কমিউনিটি তৈরির দিকে কোনো মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করে না৷

এখন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিনিয়োগ এক নতুন যুগের সূচনা করেছে৷ নিজের বেতন অর্ধেক কমিয়ে ফেলার প্রস্তাব দেয়ার পরও বার্সেলোনা তাদের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় মেসিকে দলে রাখতে পারেনি৷ মাত্র কয়েক বছর আগেও এমন ঘটনার কথা কল্পনাও করতে পারেনি দলটি৷ কিন্তু এই নতুন যুগে দলগুলোর প্রতিযোগিতার ক্ষমতাও সীমিত৷

মিশায়েল ডা সিলভা/এডিকে