মেসি কি কর ফাঁকি দিয়েছেন?
১৪ জুন ২০১৩মেসির সপক্ষে কিংবা বিপক্ষে কিছু বলার আগে এটা মনে রাখা দরকার যে, তাঁর বয়স সবে ২৫৷ পেশাদারি ফুটবলারদের ক্যারিয়ারের খবরাখবর যাঁরা রাখেন, তাঁরা জানেন, ফুটবল খেলে যা এবং যতটা আয় করে নেবার, ফুটবলারদের সেটা ঐ ১৭-১৮ থেকে ৩৩-৩৪ বয়সের মধ্যেই করে নিতে হয়৷
তার পরে যে তাঁদের কোনো অর্থকরী জীবিকা থাকে না, এমন নয়৷ কিন্তু যে জীবনযাত্রায় তাঁরা অভ্যস্ত, সেই মান বজায় রাখতে গেলে তাঁদের ফুটবলার জীবনে অর্জিত অর্থ ও নিজের চতুর ও সুপরিকল্পিত বিনিয়োগের উপরেই নির্ভর করতে হয়৷ মুশকিল এই যে, যে বয়সে একজন খেলোয়াড় তাঁর প্রতিভা, ক্ষমতা, দক্ষতা, যশ ও উপার্জনের তুঙ্গে থাকে, সে বয়সে তাঁর পক্ষে ঐ বিপুল পরিমাণ অর্থের উপর করপ্রদান কিংবা বাকি অর্থের জামানত অথবা বিনিয়োগ সম্পর্কে কোনো সঠিক ধারণাই থাকে না৷ সেই সঙ্গে আবার এই আর্থিক ব্যাপার-স্যাপার যদি দুই মহাদেশের দুই দেশে, কিংবা আরো ব্যাপ্ত হয়ে ‘আন্তর্জাতিক' হয়!
থাকবেই বা কি করে? ২২-২৩-২৪ বছরের তরুণটি তো তখন ফুটবল খেলতে ব্যস্ত৷ কাজেই তাঁকে নির্ভর করতে হয় অভিভাবক স্থানীয় কিংবা গোত্রীয় প্রবীণদের উপর – মেসির ক্ষেত্রে যা ছিলেন, এবং আছেন, তাঁর বাবা, খর্খে ওরাসিও মেসি৷ খর্খে অবশ্য বলেছেন, তিনি মেসির আর্থিক ব্যাপার-স্যাপার দেখেন না, কেননা তিনি থাকেন আর্জেন্টিনায়৷ কিন্তু স্পেনের কর্তৃপক্ষের কাছে খবর আলাদা৷
মেসির টাকা নাকি গেছে ‘ট্যাক্স হ্যাভেনে'
মেসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁর ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের ট্যাক্স রিটার্ন নিয়ে৷ মেসি এই সব রিটার্নে যা দেখাননি, সেটা হলো তাঁর ‘ইমেজ', অর্থাৎ অ্যাডভার্টাইজিং থেকে আয়৷ পদ্ধতিটা নাকি বার হয় মেসির বাবা খর্খের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে: মেসির অ্যাডভার্টাইজিং ডিলগুলি স্বাক্ষর করা হয় ব্রিটেন ও সুইজারল্যান্ডে; সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ সোজা চলে যায় বেলিজ কিংবা উরুগুয়ের মতো ‘ট্যাক্স হ্যাভেনে'৷ এভাবে মেসি ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে প্রতিবছর দশ লাখ থেকে প্রায় ১৫ লাখ ইউরো অবধি কর বাঁচাতে সক্ষম হন৷
মজার কথা, খর্খে ওরাসিও মেসি যখন তাঁর কর বাঁচানোর ‘স্কিম' চালু করেন, তখন লিওনেল মেসির ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত হয়নি৷ মেসি নাকি ‘পরে' বাবার পরিকল্পনায় সম্মত হন৷ কিন্তু সেই ‘পরে' মানে মেসির তখন এফসি বার্সেলোনা, বাংকো সাবাদেল, ডানোনে, আডিডাস, পেপসি-কোলা, প্রক্টার অ্যান্ড গ্যাম্বল, কুয়েত ফুড কোম্পানি ইত্যাদি বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থাদের সঙ্গে লেনদেন চলেছে৷ স্পেনের আদালতে দাখিল করা অভিযোগ অনুযায়ী ২০০৭ থেকে ২০০৯, এই তিন সালে মেসির অ্যাডভার্টাইজিং থেকে আমদানি ছিল প্রতিবছর ২৫ লাখ ইউরো থেকে ৩৮ লাখ ইউরোর মতো৷
‘বেচারা' মেসি
আর আজ? ফর্বস'-র লিস্ট অনুযায়ী শুধু এনডোর্সমেন্ট থেকেই মেসির বাৎসরিক আয় নাকি দু'কোটি ডলারের বেশি৷ কাজেই স্পেনে কর দিতে গেলে মেসি যে ফতুর হয়ে যেতেন, এমন নয়, তা সে কর যতই বেশি হোক না কেন৷ অন্তত এখন যে তাঁর ছ'বছরের জেল হবার সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে – সেই সঙ্গে বিপুল অর্থদণ্ড – তার চেয়ে সেই বিকল্পটাই বোধহয় ভালো হতো৷
অবশ্য এ পর্যন্ত যা আছে এবং যা নিয়ে মিডিয়ায় ঝড় উঠছে, তা হলো শুধু সরকারি কৌঁসুলির দায়ের করা অভিযোগ৷ মেসি ও তাঁর বাবা সে অভিযোগ স্বীকার করেননি, বরং খবর পেয়ে আশ্চর্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন৷ পুরো ব্যাপারটা একটা ভ্রান্তি, খর্খে স্পেনের একটি স্পোর্টস দৈনিককে বলেছেন৷ কিন্তু বিশ্বের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়ের সেই ইমেজ, যার দাম বাজারে লাখ লাখ ইউরো কিংবা ডলার, তার যে কতটা ক্ষতি হলো কিংবা হচ্ছে, তার হিসেব কে রাখে?
এসি/ডিজি (এএফপি)