1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেরু অঞ্চলেও প্লাস্টিক আবর্জনা!

১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

পরিবেশ দূষণের সমস্যা উত্তর মেরু এলাকার সমুদ্রের নীচেও পৌঁছে গেছে৷ মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা মাছের শরীরে প্রবেশ করে মানুষের খাদ্য শৃঙ্খলেও প্রবেশ করছে৷ গবেষকরা তথ্য সংগ্রহ করে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে চাইছেন৷

https://p.dw.com/p/3AHkP
Plastik-Müll im Meer
ছবি: picture-alliance/Photoshot

বিপন্ন মেরু অঞ্চল

সম্প্রতি গবেষকরা উত্তর মেরুর তুষারের নীচে অভিনব জীববৈচিত্র্য আবিষ্কার করেছেন৷ সেখানে ছোট চিংড়ির পাশাপাশি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে প্রবালও পাওয়া গেছে৷ কিন্তু সেই পরিবেশ বিশাল হুমকির মুখে রয়েছে৷ জার্মানির আলফ্রেড-ভেগেনার ইনস্টিটিউটের এক গবেষকদল সেই এলাকার কিছুটা দক্ষিণে প্লাস্টিক জঞ্জাল ও অন্যান্য আবর্জনার ছবি তুলেছেন৷

গত ১৫ বছর ধরে মেলানি ব্যার্গমান মেরু এলাকার সমুদ্রে আবর্জনার দিকে নজর রাখছেন৷ সেসব দেখে মন খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক৷ তিনি বলেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে, জেলেদের ব্যবহৃত জালের প্রান্ত৷ এটাও প্লাস্টিক আবর্জনার উদাহরণ৷ এমনকি আড়াই কিলোমিটার গভীরে সমুদ্রের তলদেশেও প্লাস্টিকের এমন অনেক অংশ দেখা যায়৷''

গবেষকরা ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে তাঁদের পরীক্ষার ক্ষেত্রের নাম রেখেছেন ‘বাড়ির বাগান'৷ ১৯৯৯ সাল থেকে সেখানে দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ চালানো হচ্ছে৷

সমুদ্রের তলদেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিক্য

মেলানি ব্যার্গমান ও তাঁর সহকর্মীরা প্রায় প্রতি বছরই সেখানে যান৷ ওশেন ফ্লোর অবজারভেশন সিস্টেম কাজে লাগিয়ে তাঁরা সমুদ্রের তলদেশের ছবি তোলেন৷ লম্বা এক তারের মাধ্যমে তলদেশ থেকে এক মিটার উচ্চতায় ক্যামেরা চালিয়ে গোটা সময় জুড়ে উচ্চ মানের ছবি তোলা হয়৷

গবেষকরা বিভিন্ন বছরে তোলা ছবি তুলনা করে দেখেছেন৷ ফলাফল সত্যি বড় বেদনাদায়ক৷ মেলানি ব্যার্গমান বলেন, ‘‘উত্তরের স্টেশনে জঞ্জাল প্রায় ২০ গুণ  বেড়ে গেছে৷ একটি ফুটবল মাঠের সমান এলাকায় আগে যেখানে আড়াইটি অংশ পাওয়া যেতো, এখন তা বেড়ে ৬০ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তা-ও জনবসতি থেকে এত দূরে মেরু এলাকায়!''

মেরু এলাকার সমুদ্রের তলদেশ এখন গোটা বিশ্বের সবচেয়ে নোংরা সামুদ্রিক এলাকাগুলির অন্যতম৷ ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে এর তুলনা করা যায়, যেখানে জঞ্জালের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি৷ ব্যার্গমান বলেন, ‘‘আমি অবশ্যই হতাশ হয়েছি৷সমুদ্রের তলদেশের সুন্দর জগত নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ছবিগুলি দেখলে শুধু আবর্জনা চোখে পড়ে৷কেইবা এমনটা চায়!''

সামুদ্রিক স্রোত যখন অভিশাপ

মেরু সাগরে এমন উচ্চ মাত্রার দূষণের একটি সম্ভাব্য কারণ অবশ্যই সামুদ্রিক স্রোত৷ গাল্ফ স্ট্রিম বা উপসাগরীয় প্রবাহ দক্ষিণের অঞ্চলগুলি থেকে জঞ্জাল উত্তরে বয়ে আনে এবং পানির গভীরে ঠেলে দেয়৷

এভাবে এখানে আবর্জনার স্তূপ সৃষ্টি হচ্ছে৷  মেরু সাগর গোটা বিশ্বের আবর্জনার পাহাড় হয়ে উঠছে৷ খালি চোখে দেখা যায়, এমন প্লাস্টিক জঞ্জাল এই সমস্যার একটা অংশমাত্র৷ সূর্যালোক ও সমুদ্রের সংস্পর্শে এসে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিকের ক্ষয় হয়৷ তখন মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা সৃষ্টি হয়৷

গত কয়েক বছর ধরে গবেষকরা বারবারসমুদ্রের তলদেশের নমুনা সংগ্রহ করে তার মধ্যেমাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ পরীক্ষা করেছেন৷ চলতি বছর পরীক্ষা চালিয়ে আরো দুঃসংবাদের আশঙ্কা করছেন তাঁরা৷ মেলানি ব্যার্গমান বলেন, ‘‘উত্তর মেরু মহাসাগরের আড়াই কিলোমিটার গভীরে তলদেশ থেকে এই নমুনা সংগ্রহ করেছি৷ এবার তার মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বিশ্লেষণ করবো৷ গত বছরে একই ধরনের নমুনার মধ্যে আমরা প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা শনাক্ত করেছিলাম৷ সেই মাত্রা যথেষ্ট বেশি৷''

উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা

অতীতে গবেষকরা দূষণের মাত্রা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না৷ বিশ্লেষণের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতিরও অভাব ছিল৷ এখন তলদেশের মাটির মধ্য থেকে প্রত্যেকটি কণা আলাদা করে ফিল্টার করা সম্ভব৷ এমনকি কালো ও লাল কণা গুনে তার ছবি তোলাও সম্ভব৷ সেই দৃশ্য অবশ্য মোটেই সুখকর নয়৷ মেরু গবেষক মেলানি ব্যার্গমান বলেন,‘‘মাটির মধ্যে অতি ক্ষুদ্র কণা ঢুকে গেছে৷ সেগুলি কোনোদিন আলাদা করতে পারবো না৷ এসব খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করবে এবং সমুদ্রের তলদেশ প্লাস্টিকে ভরে যাবে৷''

গবেষকরা বেশিরভাগ সামুদ্রিক প্রাণীর শরীরেও প্লাস্টিক শনাক্ত করেছেন৷ প্রায়ই সেগুলি তাদের শরীরে সংক্রমণ ও বিষক্রিয়া ঘটায়৷ তার ফলে শুধু প্রাণীদেরই ক্ষতি হয় না৷ মেলানি ব্যার্গমান বলেন, ‘‘আজকাল মাছ, শামুক বা চিংড়ি খেলে ধরে নিতে হবে যে, সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিকও পেটে ঢুকছে৷''

অর্থাৎ, সমুদ্রের মধ্যে জঞ্জাল শুধু মেরু অঞ্চলের প্রাণিজগতের সমস্যা নয়৷ এমন পরিবেশ-বিপর্যয় আমাদের সবার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে৷

আর্নো ট্র্যুম্পার/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য