মেধাপাচার রুখতে চায় আইআইটি
২৩ জুন ২০১৭এমনটা বাস্তবায়িত হলে ভারতে প্রথম একসঙ্গে একাধিক ডিগ্রি লাভের সুযোগ মিলবে৷ উচ্চশিক্ষায় ভারতের অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মেধাবী ছাত্রছাত্রীর বিদেশে পাড়ি দেওয়া৷ সেইসঙ্গে বিদেশি ছাত্রছাত্রীর এদেশে না আসা৷ শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, কেন্দ্র সরকারের অনুপযুক্ত শিক্ষানীতি, বিশ্বমানের শিক্ষার অভাব এবং উচ্চশিক্ষিতদের বেকারত্বই ভারতে ‘ব্রেনড্রেন' বা মেধাপাচারের অন্যতম কারণ৷ এজন্য এক অভুতপূর্ব উদ্যোগ নিয়েছে খড়গপুর আইআইটি৷ এই প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ছাড়পত্র চাইতে চলেছে খড়গপুর আইআইটি৷ আইআইটি কর্তৃপক্ষ অগ্রনী ভূমিকা নিয়ে এই বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে৷ এক সাক্ষাৎকারে অভূতপূর্ব উদ্যোগের কথা নিজেই জানালেন খড়গপুর আইআইটি-র অধিকর্তা ড. পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী৷
ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘দেশসুদ্ধ লোক ‘ব্রেন-ড্রেন' নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসেছি৷ পরিসংখ্যান বলছে, ফি-বছর ভারত থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়াশোনা করতে যাচ্ছে৷ অন্যদিকে, বিদেশ থেকে মাত্র ৪২ হাজার ছাত্রছাত্রী এ দেশে আসছে৷'' এই বৈষম্যের পেছনে আসল কারণটা খুঁজে বের করতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বিদেশি পড়ুয়াকে টানতে হলে ভাবতে হবে তাদের আমরা কী দেব? পড়ুয়ারা এদেশে কেন আসবে?'' দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তার কথায়, ‘‘আন্তর্জাতিক স্তরে কেউই এখন শুধুমাত্র একটা বিষয়ে আটকে না থেকে একসঙ্গে একাধিক বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাইছে৷ এই ভাবনা থেকেই মাল্টিপল ডিগ্রির প্রস্তাবের জন্ম৷''
বিশ্বভারতীর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রযুক্তি, কারিগরি এবং পছন্দমতো সংস্কৃতির ডিগ্রির দরজা খুলে গেলে স্বভাবতই আকৃষ্ট হবে বিদেশি পড়ু্যারা৷ একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরের শিক্ষালাভ করতে পারবেন দেশের ছাত্রছাত্রীরাও, যা হবে যুগান্তকারী পদক্ষেপ৷ এই ব্যাপারে বিশ্বভারতীর সঙ্গে খড়গপুর আইআইটি-র এমওইউ-চুক্তির খসড়া তৈরি হয়েগেছে৷ এখন শুধু উভয় পক্ষের সই বাকি৷ তারপর সরকারি ছাড়পত্র পেলেই শুরু হয়ে যাবে ‘মাল্টিপল ডিগ্রি' কোর্সে পড়াশোনা৷
তবে, স্নাতকোত্তর স্তরে এই প্রথম হলেও স্নাতক স্তরে ইতিমধ্যেই এমন কোর্স শুরু করেছে খড়গপুর আইআইটি৷ ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট এবং আইআইএম মিলে একাধিক কোর্স চালু করা হয়েছে৷
অধিকর্তার দাবি, ‘‘কোর্সগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ যাঁরা সেই কোর্স করেছেন, তাঁদের সবাই ভালো চাকরি পেয়েছেন৷ একই ভাবে ‘কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স'-এর সঙ্গে যুগ্ম মাস্টার্স ডিগ্রি এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম চলছে৷ বোস ইন্সটিটিউটের সঙ্গেও এমন কোর্স নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে৷''
মাল্টিপ্ল ডিগ্রির পাশাপাশি ভারত সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে খড়গপুর আইআইটি আরও একটি অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে ইতিমধ্যেই৷ তারা তৈরি করে ফেলেছে ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল লাইব্রেরি'৷ গত দু'বছর ধরে আপ্রাণ চেষ্টার পর যা দেশের উচ্চশিক্ষায় প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে৷ এই উদ্যোগের মাধ্যমে গোটা দেশের সব স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে ক্লিক করলেই৷ এখন পর্যন্ত ৭০ লক্ষের বেশি তথ্য সংযোজন করা হয়েছে এখানে৷ খড়গপুর আইআইটি-র প্রস্তাব অনুযায়ী, তাদেরই এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছে ভারত সরকার৷ এরজন্য যিনি দিনরাত এক করে কাজ করছেন তিনি খড়গপুর আইইটি-র সি ও ও ড. সুজাতা রায়৷
ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, ‘‘এনডিএল সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে সমস্ত তথ্য জানার একটা ব্যবস্থা৷ এটা একটা পাইলট প্রজেক্ট৷ শুরুটা খুব ছোট ছিল৷ এখন যে কেউ অ্যাকসেস করতে পারেন৷ মূলত মেটাডেটার পাওয়ার সহজ একটা উপায়৷ ভারতের যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করলেই হবে৷ বিদেশি ছাত্রছাত্রীরাও এই তথ্য পাবেন৷ এতে সমস্ত স্কুলবোর্ডগুলির তথ্যের পাশাপাশি তাদের বইগুলোও থাকছে৷ তবে, এর জন্য কিন্তু কারও কপিরাইট নষ্ট হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই৷
এখন আমরা ইংরেজি ছাড়াও হিন্দি এবং বাংলাতেও এই সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা করছি৷ ধীরে ধীরে অন্যান্য ভাষাতেও তথ্য অনুসন্ধান করা যাবে৷'' বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ভারতে পড়াশোনার প্রতি আকৃষ্ট করা নিয়ে যখন চিন্তা চলছে, তখন ব্যাঙ্গালোর আইআইএম-এর ডাইরেক্টর জি রঘুরাম জানালেন, ‘‘বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা ভারতে কেন আসবেন? পড়াশোনার পর এখানে চাকরির সুবিধা নেই৷ বিদেশে এখানকার ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা নেই, আর্থিক সঞ্চয়ের নিশ্চয়তা নেই৷ এ জন্যই বিদেশ থেকে সামান্য কিছু ছাত্রছাত্রী এ দেশে পড়াশোনা করতে এলেও কেউ চাকরি করতে চান না৷ উল্টোদিকে, ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা বিদেশি চাকরিকে লোভনীয় মনে করেন৷''