‘মৃত্যুর বণিক’ আলফ্রেড নোবেল
৩ জুন ২০১৩পুরো নাম: আলফ্রেড ব্যর্নহার্ড নোবেল
জন্ম: ২১শে অক্টোবর, ১৮৩৩, স্টকহোম, সুইডেন
মৃত্যু: ১০ই ডিসেম্বর, ১৮৯৬, সারেমো, ইটালি
সমাধি: স্টকহোলম
পেশা: রসায়নবিদ, প্রকৌশলী ও আবিষ্কারক
বাবা: ইমানুয়েল নোবেল
মা: ক্যারোলিনে আন্দ্রিয়েতা আলসেস
খুব উল্লেখযোগ্য কাজ: ডিনামাইট আবিষ্কার, নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন
অনেক কিছুর উদ্ভাবক তিনি৷ ‘ডিনামাইট' সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য৷ নাইট্রোগ্লিসারিন এবং কোয়ার্টসের মিশ্রনে তৈরি ভয়ঙ্কর এক বিস্ফোরক ডিনামাইট৷ এটা উদ্ভাবনের আগে নাইট্রোগ্লিসারিন নিয়ে গবেষণার করার সময় একাধিকবার দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাতে প্রাণ হারান বহু মানুষ৷ এমনকি তাঁর নিজের ছোট ভাইও মারা যান এমনই এক দুর্ঘটনায়৷ তবে ডিনামাইট শুধু ধংসাত্মক কাজেই ব্যবহৃত হয়না৷ এই আবিষ্কারের ফলেই পানামা খাল, বিশ্বের দীর্ঘতম রেলপথ ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলওয়ে অথবা পাহাড় ভেদ করে গটহার্ড টানেল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে৷ আজো বহু নির্মাণ কাজে ডিনামাইটের ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি৷ এই ডিনামাইটের পরই নোবেল একে একে উদ্ভাবন করেন পিস্তল থেকে শুরু করে কামান অবধি বিভিন্ন রকমের মারণাস্ত্র৷
১৮৪২ সালে, খুব ছোটবেলায় জন্মস্থান স্টকহোম ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে আলফ্রেড নোবেল চলে যান রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গে৷ বাবা ছিলেন প্রকৌশলী৷ সেখানে তিনি ইস্পাত ও লোহার কারখানা স্থাপন করেন৷ সেই ইস্পাত ও লোহা দিয়ে তৈরি যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করা হতো রুশ সেনাবাহিনীতে৷ ১৮৫৯ সালে নোবেল স্টকহোমে ফিরে রসায়ন ও পদার্থ বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন৷ তখন ইংরেজি সাহিত্যের প্রতিও তাঁর ছিল গভীর অনুরাগ৷ এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশও ভ্রমণ করেছেন তিনি৷ প্যারিসে পরিচয় হয় নাইট্রোগ্লিসারিনের মূল আবিষ্কারক অ্যাসকানিয় সোব্রেরোর সঙ্গে৷ সোব্রেরো নাইট্রোগ্লিসারিনের ভয়াবহ পরিণতির কথা ভেবেই গবেষণা বন্ধ করে দেন৷ কিন্তু নোবেল সেই বিস্ফোরক পদার্থের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন৷
তারপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নব্বইটিরও বেশি ডিনামাইট কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন আলফ্রেড নোবেল৷ ডিনামাইট আবিষ্কারের সাফল্যের সাথে সাথে ব্যালিস্টিক পাউডারও আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অস্ত্রের উন্নতি সাধন করেন৷ বলা যায়, বিভিন্ন মারণাস্ত্রের অগ্রদূত ছিলেন আলফ্রেড নোবেল৷ এই অস্ত্র বাবসা করেই তিনি হয়ে ওঠেন বিত্তশালী ব্যক্তি৷
অথচ মনেপ্রাণে আলফ্রেড নোবেল ছিলেন যুদ্ধবিরোধী মানুষ৷ তাঁর ধারণা ছিল এমন অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ-বিগ্রহ বা আগ্রাসনের প্রবণতাকে ঠেকানো যাবে৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি৷ ১৮৮৮ সালে তাঁর ভাই লুডভিগ নোবেল ফ্রান্সের কান শহরে মৃত্যু বরণ করেন৷ খবরটি ভুলভাবে ছড়িয়ে পড়ায় সবাই ভেবেছিল আলফ্রেড নোবেলই বুঝি মারা গেছেন৷ পত্রিকায় মৃত্যুসংবাদের শিরোনামে লেখা হয় ‘মৃত্যুর বণিক মারা গেছেন'৷ এমন শিরোনামের খবরটি খুব বিচলিত করে তাঁকে, সবকিছু থেকেই ধিরে ধিরে সরে দাঁড়ান আলফ্রেড নোবেল৷
সাড়ে তিনশ'রও বেশি বস্তুর উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেল ছিলেন নিঃসন্তান৷ ১৮৯৫ সালে উইল করে তাঁর সম্পত্তির ৯৪ ভাগই দান করে দেন ‘নোবেল প্রাইজ ফাউন্ডেশ'-কে৷ ১৯০১ সালে থেকে পাঁচটি বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য প্রতি বছরই দেয়া হয় এই পুরস্কার৷ চিকিৎসাশাস্ত্র, রসায়নবিদ্যা, পদার্থ বিজ্ঞান, সাহিত্যের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের স্বীকৃতিও দেয় ‘নোবেল'৷ আলফ্রেড নোবেল তাই বেঁচে আছেন৷ থাকবেন৷