1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরেছেন মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারা

১৬ এপ্রিল ২০১১

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. এস এম আনোয়ারা বেগম৷ আর তাঁর বড় বোন মুক্তিযোদ্ধা এস এম মনোয়ারা বেগম সম্প্রতি মারা গেছেন৷ যুদ্ধের সময় ঈদের দিন উপোস থাকাসহ সশস্ত্র যুদ্ধের নানা ঘটনার সাক্ষী তাঁরা৷

https://p.dw.com/p/10ub2
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন নারীরাও (ফাইল ফটো)ছবি: Mustafiz Mamun

৯ নম্বর সেক্টরের অধীনে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন আনোয়ারা এবং মনোয়ারা বেগম৷ প্রথমে সৈনিক ইসমাইল মিয়া ও পরে মেজর জিয়া উদ্দিনের কাছ থেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন৷ প্রশিক্ষণের মধ্যে ছিল গ্রেনেড নিক্ষেপ, স্টেনগান, স্টেন মেশিন কারবাইন, স্টেন মেশিনগান, থ্রি নট থ্রি রাইফেল, লাইট মেশিনগান চালনা ইত্যাদি৷ মূলত স্টেন মেশিন কারবাইন বহন করতেন তাঁরা৷ বড় ভাই আরো প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে চলে যান৷ দুই বোন সুন্দরবনে সেন্ট্রির কাজ, অপারেশনের রেকির কাজ করেন৷ সুন্দরবন, শরণখোলা, রায়েন্দ, নামাজপুর, তুশখালী, কাকছিঁড়া, ডোবাতলা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে সরাসরি যুদ্ধ করেন তাঁরা৷

যুদ্ধের সময়ের একদিনের করুণ অভিজ্ঞতার কথা জানান আনোয়ারা৷ তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘ সাতমাস সুন্দরবন এলাকায় যুদ্ধে রত ছিলাম আমরা৷ সেখানে প্রায় ১১ শ' মুক্তিযোদ্ধা ছিল৷ রোজার সময় ঈদের দিন সেখানে আমাদের কোন খাবার ছিল না৷ আমরা সারাদিন না খেয়ে ছিলাম৷ পরের দিন আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, এতগুলো মুক্তিযোদ্ধা না খেয়ে থাকবে তা হয় না৷ তাই আমরা তুশখালীতে অভিযান চালিয়ে সেখানকার গুদাম থেকে চাল বের করে নিয়ে আসি৷ এরপর আমরা রান্না করে খাবার খাই৷''

বড় ভাই প্রশিক্ষণের জন্য ভারত চলে গেলেও দুই বোন সুন্দরবনে থেকে যান৷ সেখানে বরিশালের চরমপন্থী সর্বহারা গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের মুখে পড়েন এই মুক্তিযোদ্ধা দুই বোন৷ আনোয়ারা বললেন, ‘‘সেখানে আমরা দুই বোনসহ আরো কয়েকজন নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিল৷ আমরা ফরেস্টের বোর্ডে থাকতাম৷ আর মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন উপরে৷ ওখানে আবার বেশিরভাগই ছিল আমাদের দেশের উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সদস্য৷ অর্থাৎ বরিশালের সিরাজ শিকদারের নেতৃত্বাধীন সর্বহারারা৷ আমরা দুই বোন বয়সে ছোট ছিলাম৷ তো তারা আমাদেরকে নানাভাবে মিসগাইড করতো৷ তারা বলতো যে, সুন্দরবন এলাকা তো তাজউদ্দীন আহমেদ বিক্রি করে দিয়েছে ভারতের কাছে৷ এরকম নানা কথা বলতো৷ কিন্তু আমরা সেসব কথা বিশ্বাস করতাম না এবং তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম৷ তারপর সেখানকার উপ-প্রধান যিনি ছিলেন তিনি আমাদের উপর খুবই বিরক্ত ছিলেন এবং পরে আমরা জানতে পেরেছি যে আমাদের দুই বোনকে মেরে ফেলার জন্য তাদের পরিকল্পনা ছিল৷ কিন্তু এই তথ্য যখন ভারতে আমার ভাইয়ের কাছে পৌঁছে তখন আমরা বিজয়ের বেশ কাছাকাছি পর্যায়ে৷ ফলে আমরা সেখান থেকে চলে আসি৷ সৌভাগ্যক্রমে আমাদের তারা আর মারতে পারেনি৷''

এছাড়া বরিশালের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র টিপু সুলতানের যুদ্ধে অংশগ্রহণের ঘটনা তুলে ধরলেন আনোয়ারা৷ জানালেন, টিপু সবসময় কান্নাকাটি করতো আমাদের কাছে এই বলে যে, আপা, আমি অপারেশনে যাবো৷ তখন আমরা বলতাম যে, তুমি তো খুব ছোট৷ তুমি কী করে অপারেশনে যাবে৷ কিন্তু তবুও সে অপারেশনে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করতো৷ তখন কমান্ডার জিয়া উদ্দীনকে বললাম যে, সে তো খুব কান্নাকাটি করে৷ তাকে একটা অপারেশনে যাওয়ার সুযোগ দেন৷ অপরাশেনটা ছিল যুদ্ধের প্রায় শেষদিকে৷ সেটা ছিল মোড়লগঞ্জের রায়েন্দে৷ সেই অপারেশনে টিপুসহ দুইজন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারান৷ সেখানে এই দুই মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে৷ এই ঘটনায় আমরা প্রচণ্ডভাবে মর্মাহত হই৷


মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে একদিন তাঁরা জানতে পারেন, অনেক মেয়েকে ফাতরারচরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে৷ জানামাত্রই তাঁরা হানাদার বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ প্রচণ্ড সংঘর্ষের পর ৩৫ জন পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে৷ রাজাকারদের তিনটি ক্যাম্প দখল করে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ নির্যাতিত মেয়েদের সেখান থেকে উদ্ধার করেন তাঁরা৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ