1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মৃত্যুদণ্ডের বিধানের পরও ধর্ষণ কমছে না কেন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ নভেম্বর ২০২০

দেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা পরও ধর্ষণ কমছে না৷ বরং আরো বাড়ছে বলে মানবাধিকার কর্মী ও নারী নেত্রীরা মনে করছেন৷ পরিসংখ্যানও তাই বলছে৷

https://p.dw.com/p/3kufZ
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে৷ ১৩ অক্টোবর গেজেট প্রকাশের পরই সেটা কার্যকরও হয়েছে৷ সংসদ অধিবেশন না থাকায় এটা অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা হয়৷ সংসদেও এখন পাঠানো হচ্ছে৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তারপরও ধর্ষকরা কঠোর শাস্তির বিধানে ভীত হচ্ছে না৷

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছে, অক্টোবর মাসেই সারাদেশে ২১৬ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ এরমধ্যে ১০১টি শিশু৷ ২৫টি শিশু সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ এছাড়া ১৬ টি শিশুসহ ২৩ জন ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে৷

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে গত ১০ মাসে এক হাজার ৩৪৯ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৬ জনকে৷ অত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১৩ জন৷ আর ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ২৭১ জন৷ তবে ধর্ষণের ঘটনায় এই সময়ে মামলা হয়েছে ৯৪৮টি৷

কঠোর শাস্তির বিধানের কারণে অপরাধীরা নিবৃত হবে সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই: নূর খান

আসকের হিসাব অনুযায়ী আগস্ট মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৪৮টি, সেপ্টেম্বর মাসে ১৮৬টি৷ আর অক্টোবর মাসে ৩৭৪টি৷ যা আগের মাসের দ্বিগুণ৷মৃত্যুদণ্ডের বিধান হওয়ার পরের ১৫ দিনে ১৫০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷
মানবাধিকার কর্মী এবং আসকের সাধারণ সম্পাদক নূর খান বলেন, ‘‘কঠোর শাস্তির বিধানের কারণে অপরাধীরা নিবৃত হবে সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই৷ তারা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে মাসলম্যানদের দৌরাত্ম্য, ক্ষমতার দাপট৷ টাকার জোরে এবং রাজনৈতিক কারণে অনেকেই পার পেয়ে যায়৷ তারাও মনে করে অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে৷ তাই কঠোর শাস্তি তাদের মনে কোনো ভীতির সৃষ্টি করে না৷’’

বাংলাদেশে এখনো গড়ে প্রতিদিন ৪-৫টি ধর্ষণের ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে৷ কিন্তু শাস্তির হার মাত্র শতকরা তিন ভাগ৷ এখনো সর্বোচ্চ শাস্তি প্রয়োগ হয়নি৷ কারন মৃত্যুদন্ডের বিধান হওয়ার পর কোনো মামলার বিচার হতে কত দিন লাগে তার কোনো নিশ্চয়তা নাই৷ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে জেলায় জেলায় আলাদা বিশেষ ট্রাইবুন্যাল করা প্রয়োজন৷ তাহলে বিচার দ্রুত গতিতে হবে৷ আর নিম্ন আদালতে বিচার হলেই তো তা কার্যকর হবে না৷ হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে যাবে৷ সেখানে অনেক সময় লাগে৷ কারণ আলাদা কোনো বেঞ্চ নাই৷ এরমধ্যে আসামিরা জামিনে ছাড়া পায় ৷ ফলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়৷’’

ছোট ছোট ভিডিও তৈরি করে প্রতীকী শাস্তি দেখিয়ে প্রচার করতে হবে: এলিনা খান

তারা প্রশ্ন করেন, হত্যার শাস্তিও তো মৃত্যুদণ্ড৷ আরো অনেক অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ তাই বলে কি সেই সব অপরাধ কমেছে? আসলে  আইনের শাসন এবং অপরাধ করে পার না পাওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে৷ তা না হলে কোনো কঠোর আইনই অপরাধ কমাতে পারেনা৷ ধর্ষণের ক্ষেত্রেই কঠোর শাস্তি ও অপরাধী পার না পাওয়া দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে৷

নারী নেত্রী এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলে, ‘‘এখন দরকার ব্যাপক গণসচেতনতা৷ দেশের তৃণমূল পর্যন্ত প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে৷ ঢাকায় বসে শুধু কথা বললে হবে না৷ ছোট ছোট ভিডিও তৈরি করে প্রতীকী শাস্তি দেখিয়ে প্রচার করতে হবে৷ অপরাধীদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে হবে৷’’

তার মতে, কঠোর আইন করার পরও ধর্ষণের অপরাধীদের শাস্তি দিতে হলে সাক্ষ্য আইন সংস্কার করতে হবে৷ তদন্ত ব্যবস্থা আরো আধুনিক করতে হবে৷ এমনকি ধর্ষণের বিচারিক প্রক্রিয়াও সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি৷