মুসলমানদের জন্য ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা
৯ ডিসেম্বর ২০১১বিশ্বব্যাপী আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমের ভাবধারায় পুষ্ট বিভিন্ন দেশও এনিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে যে, ধর্মীয় নৈতিকতার কড়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা ঠিক কিভাবে কাজ করে৷ প্যারিস এবং লন্ডন শহরে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাঠামোগত শর্তগুলো ইতিমধ্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে৷ মানহাইম শহরে স্থাপিত ‘কুভেত তুর্ক ব্যাংক' জার্মানিতে এধরণের প্রথম ব্যাংক৷ তবে তার কাজ কিছুটা সীমিত থাকবে৷
প্রচলিত ব্যাংকের সঙ্গে মুসলমানদের জন্য স্থাপিত এই ইসলামি ব্যাংকের পার্থক্য হলো ইসলাম ধর্মের নিয়মনীতি মেনেই তাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা৷ যার মূল কথা - সুদ নেয়া এবং দেয়া হারাম৷ ফাটকাবাজি নিষিদ্ধ৷ সুদের কারণে লেনদেনের ঝুঁকিটা একপেশে হয়ে যায় বলে মনে করা হয়৷
আর্থিক ঝুঁকি থাকতে হবে দু'পক্ষের উপরেই
ধরা যাক তুর্কি মুসলমান আলি ডোনার কাবাবের দোকান খোলার জন্য কোন প্রচলিত ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিল৷ এই ঋণের ঝুঁকিটা কিন্তু তার একার৷ খুব বেশি কাস্টমার যদি দোকানে না আসে, যদি তাকে প্রচণ্ড লোকসান দিতে হয় তাহলে ঋণের একটা অংশ নিয়মিত শোধ করার সঙ্গে তাকে সুদটাও দিয়ে যেতে হবে৷ আলির ব্যবসা না চললেও ব্যাংক কিন্তু ঐ সুদ থেকে লাভ করবে৷ ইসলাম ধর্ম এটা চায়না৷ ইসলাম ধর্মের নিয়মনীতি অনুযায়ী আর্থিক ঝুঁকিটা থাকতে হবে দু'পক্ষের উপরেই৷
মানহাইমের ‘কুভেত তুর্ক' ব্যাংক সুদের কারবার করছেনা৷ লেনদেনটা হচ্ছে কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে৷ কোম্পানি লাভ বা লোকসান যাই করুক, ব্যাংকের তাতে অংশ থাকবে৷ ব্যাংকের প্রধান উগুরলু সয়লু জানান,‘‘এই বিশেষ মডেলের ব্যাংক এমন কোন ব্যবসার সঙ্গে নিজেকে জড়াবেনা যা কিনা মদ, শুকরের মাংস, পর্নোগ্রাফি বা অস্ত্রশিল্পের সঙ্গে যুক্ত৷ তাছাড়া সমাজের ক্ষতি করবে এমন সব ব্যবসা থেকেই দূরে থাকবে এই ব্যাংক৷''
ইসলামি ব্যাংকের লাইসেন্স এখনও সীমিত রাখা হয়েছে৷ তবে ব্যাংক-প্রধান সয়লু আশাবাদী৷ পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্সের আবেদন করবেন তাঁরা এবার৷
ব্যাংক থেকে যারা ঋণ নিতে চায়, তাদের জন্য দুটি উপায় খোলা৷ এক, কোন সুনির্দিষ্ট প্রকল্প - যেমন ধরা যাক একটা সুপার মার্কেট-এর অর্থায়নের সঙ্গে যুক্ত হওয়া৷ যার অর্থ কাস্টমারের অংশ থাকবে ঐ ব্যবসায়৷ লাভ এবং ক্ষতি দুটোরই দায়ভাগ নিতে হবে তাকে৷ অথবা ধরা যাক কেউ বাড়ি কিনতে চায়৷ ব্যাংক নিজে কিনবে সেই পছন্দের বাড়ি৷ এবং তারপর বিক্রি করবে সেই বাড়ি কাস্টমারের কাছে৷ কেনার টাকা শোধ করা হবে কিস্তিতে৷ কিন্তু এধরণের অর্থায়নে সমস্যা আছে৷ বাড়ি কেনাবেচার প্রক্রিয়ায় দু'বার প্রফিট ট্যাক্স দিতে হবে৷ এবং তাতে অর্থায়নটা হয়ে উঠবে অনেক ব্যয়বহুল৷
ফ্রান্স এবং ব্রিটেনে ইসলামি ব্যাংক প্রবর্তনের কাঠামোগত শর্তগুলো তৈরি আছে৷ জার্মানিতে তা নেই৷ তবুও জার্মানির অর্থপ্রতিষ্ঠানের তদারকি দপ্তর বাফিন এরকম ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিরোধী নয়৷ জার্মানিতে ব্যাংক ব্যবসার বিভিন্ন দিক দেখাশোনা করে বাফিন৷ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, ব্যাংকের কাজকর্ম ওপর নজরদারির দায়িত্ব বাফিনের৷ বাফিনের আন্তর্জাতিক বিভাগের কর্মকর্তা ইয়োহানেস এঙ্গেল্সের ভাষ্য,‘‘ ইসলামিক ব্যাংক ব্যবস্থার ইস্যুটি নিয়ে বাফিন বেশ ব্যস্ত আছে৷ আমরা আগামী বছরের মে মাসে ফ্রাঙ্কফুর্টে এ বিষয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করছি৷ বিষয়টি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ অর্থনৈতিক মন্দার অনেক অজানা উত্তর হয়তো তার মধ্যে থাকতে পারে৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক