মুরসি-র বিরুদ্ধে রায় নিয়ে নানা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে
২২ এপ্রিল ২০১৫এই রায় কি বড়ই নরম, নাকি অত্যন্ত কড়া? রায় ঘোষণার পর পরই তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কে নেমেছেন মিশরীয়রা৷ সাবেক জেনারেল এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি-র কট্টর সমর্থকরা মুরসি-কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন৷
মুরসি-র মুসলিম ব্রাদারহুড-কে ইতিমধ্যেই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের পর্যায়ভুক্ত করা হয়েছে৷ তারা বলছে ‘‘সামরিক অভ্যুত্থানকারীদের দ্বারা মিশরে গণতন্ত্রকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের'' কথা – যদিও মুরসি-কে আদর্শ গণতন্ত্রী বলে গণ্য করার কোনো কারণ নেই৷ অপরদিকে মিশরের বর্তমান শাসকরাও আদর্শ গণতন্ত্রীর তকমা দাবি করতে পারেন না৷ ফৌজি হর্তাকর্তারা ২০১৩ সালে একটি অংশত সাজানো গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুরসি-কে ক্ষমতাচ্যুত করেন৷
আরো মামলা ঝুলছে
অবশ্য মুরসি-র বিচার প্রক্রিয়ার এখানেই সমাপ্তি নয়, আরো চমক আসতে পারে, কেননা ৬৩ বছর বয়সি মুরসি-র বিরুদ্ধে অন্তত তিনটি আরো মামলা ঝুলছে৷ তবে তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের নিপীড়ন ও গ্রেপ্তারের দরুন৷ একাধিক মানুষকে হত্যা, অথবা তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকার অভিযোগ অপ্রত্যাশিতভাবে বাতিল করা হয়েছে৷
সাক্ষ্যপ্রমাণের পর্যালোচনা না করেই বলা যায় যে, এই রায় আদালতের অপরাপর রায়ের মতো নয়৷ প্রথমত, এই রায় প্রাক্তন সামরিক শাসক হোসনি মুবারকের বেকসুর খালাসের তুলনায় অতিমাত্রায় কঠিন৷ অপরদিকে এও আশ্চর্য যে, মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেক ছোটখাটো কর্মীদের ইতিপূর্বে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে – অথচ মুরসি-কে দেওয়া হল বিশ বছরের কারাদণ্ড৷
পশ্চিমে সমালোচনার ঝড় ওঠেনি
মুরসি-কে মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ার কারণ সম্ভবত মিশরের পররাষ্ট্র নীতিগত পরিস্থিতি৷ মুরসি-কে ক্ষমতাচ্যুত করার বিরুদ্ধে গোড়ায় পশ্চিমি সরকারবর্গ কিছুটা সমালোচনা ব্যক্ত করলেও, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের বৃহত্তর প্রেক্ষিতে তারা আরব বিশ্বের সর্বাপেক্ষা জনবহুল দেশটির সঙ্গে সহযোগিতায় আগ্রহী৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় সামরিক সাহায্য শুরু করেছে, প্যারিস কায়রোর সঙ্গে একটি বিপুল অঙ্কের অস্ত্র সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল আল-সিসি-কে বার্লিনে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ মুরসি-কে আরো কড়া সাজা দিলে মিশরের সঙ্গে নতুন করে দহরম-মহরমে ব্যাঘাত ঘটতে পারত৷ ওদিকে মিশরের অর্থনীতির নাটকীয় পরিস্থিতের ফলে কায়রোর শাসকবর্গ এখন পশ্চিমের মদত পেতে আকুল৷
মুরসি-র বিরুদ্ধে রায় তুলনামূলকভাবে কঠিন না হলেও, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মানবাধিকার সংস্থা মুরসি-র বিচার প্রক্রিয়াকে ন্যায় এবং আইনের শাসনের উপযোগী বলে মনে করেনি৷ বিগত কয়েক বছরে মিশরে যে ক'টি রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ মামলা সংঘটিত হয়েছে, তাদের সব ক'টিতেই অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণিত বলে গণ্য করা হয়েছে এবং তাদের দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে৷
ন্যায়বিচারের কী হল?
এখন বোঝা যাচ্ছে যে, মিশরের আইন বিভাগ শুধু সরকারের বাধ্যই নয়, বরং চতুর এবং সর্বাঙ্গীণ রাজনৈতিক আবহাওয়া অনুযায়ী নড়ে-বসে৷ এর মূল শিকার হচ্ছে ন্যায়বিচার: মিশরে গত কয়েক বছরের নাটকীয় ঘটনাবলিতে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ মুরসি-র পতনের পর মুসলিম ব্রাদারহুডের বিক্ষোভ দমন করা হয় শক্ত হাতে: তাতে প্রাণ হারান অন্তত ৬০০ জন৷
অথচ এই সব মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের মৃত্যুদণ্ড অথবা কারাদণ্ডের কোনো আশঙ্কা নেই৷ আল-সিসি-র রাজত্বে তাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না, কেননা তারা বর্তমান ক্ষমতার কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷