1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুম্বই স্টেশনে হাজারো শ্রমিক

১৫ এপ্রিল ২০২০

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর লকডাউন বৃদ্ধির ঘোষণার পরেই মুম্বই স্টেশনে জড়ো হলেন হাজার হাজার শ্রমিক। লাঠি মেরে তাঁদের সরালো পুলিশ।

https://p.dw.com/p/3auzt
ছবি: Reuters/A. Abidi

মুম্বইয়ের বান্দ্রা রেলস্টেশন। মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ি ফেরার তাগিদে কয়েক হাজার লোক জড়ো হয়ে গেলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘন্টা কয়েক আগে লকডাউনের সময়সীমা ৩ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারপরে হতাশ মানুষরা মরিয়া সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁরা সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। কেউ বিহার, কেউ উত্তর প্রদেশ, কেউ মধ্যপ্রদেশ বা অন্য রাজ্য থেকে এসেছিলেন ভারতের আর্থিক রাজধানীতে রুটি-রুজির আশায়। হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করার ফলে তাঁরা আটকে পড়েছিলেন মুম্বইতে। মার্চ শেষ। এপ্রিল আসতেই বাড়ির মালিক ভাড়া চাইছেন। অনেকে চলে গিয়েছেন সরকারি আশ্রয়ে। অনেকে শেষ সম্বলটুকু নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ছেন। বাড়ি থেকে সমানে ফোন আসছে, সেখানেও পরিবারের কাছে খাবার নেই। কোথাও পারিবারিক ঝগড়ায় বিপর্যস্ত হচ্ছেন তাঁরা। এই কারণে সম্প্রতি পাঞ্জাবে একজন শ্রমিক আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন। প্রশাসন জানাচ্ছে, মঙ্গলবার দুপুরে কেউ রটিয়ে দেয় বান্দ্রা স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়বে। চরম বিপদের মধ্যে থাকা মানুষেরা করোনা সংক্রমণের ভয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ, লকডাউনের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে বান্দ্রা স্টেশনে জড়ো হয়ে যান।

অন্য একটা কারণের কথাও বলা হচ্ছে। সেটা হলো, পরিযায়ী শ্রমিকদেরআশা ছিল, প্রধানমন্ত্রী ১৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন শিথিল করে দেবেন, তাঁদের ঘরে ফেরার পথ পরিস্কার হবে।  কিন্তু ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের সময় বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েন। তাঁরা মরিয়া হয়ে ঘরে ফেরার চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে ট্রেন চালুর গুজবও ছিল। সব মিলিয়ে তাঁরা স্টেশনে চলে আসেন। প্রথমে পুলিশ ও প্রশাসন তাঁদের চলে যেতে বলে। তাঁদের বারবার জানানো হয়, কোনও ট্রেন দেওয়া হচ্ছে না। লকডাউন যতদিন চলবে, ততদিন ট্রেন বা বাস চলবে না। তা সত্ত্বেও তাঁরা যেতে রাজি হননি। তখন পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপরেও কুরলায় বিনয় দুবে নামে একজন হুমকি দিয়েছিলেন, ১৮ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা না করলে তিনিও বান্দ্রা স্টেশন অভিযান করবেন। তাঁকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

এই পুরো ঘটনা থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের ভয়াবহ সমস্যা আবার সামনে এলো। লকডাউন হওয়ার পর পায়ে হেঁটে নিজেদের বাড়ি ফিরতে গিয়ে পথেই অন্তত কুড়িজন শ্রমিক মারা গিয়েছেন। উত্তর প্রদেশ সরকার পাঁচশোটি বাসের ব্যবস্থা করার পর দিল্লিতে শ্রমিকদের ঢল নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এই শ্রমিকরা আটকে পড়েছেন। মুম্বইয়ে ৬ লাখ লোক সরকারি শিবিরে আছেন। পশ্চিমবঙ্গে তিন লাখ পরিযায়ী শ্রমিকের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রাজ্য সরকার করেছে। সরকারি আশ্রয়ের বাইরেও প্রচুর শ্রমিক আছেন।  মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে অবশ্য অভয় দিয়ে বলেছেন, সকলের জন্য আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা হবে।

লকডাউনেরসময় বৃদ্ধির পরেই ডয়চে ভেলেকে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম জামিয়েছিলেন, ''প্রধানমন্ত্রী এই শ্রমিকদের দেখতে পাচ্ছেন না। তিনি তাঁদের জন্য কোনও ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করলেন না। তিনি শুধু সহজ কাজটা করলেন, লকডাউনের সময় বাড়ানো এবং পুলিশ দিয়ে নজরদারি করা।'' অধীর চৌধুরিও শ্রমিক ও গরিবদের জন্য কোনও ব্যবস্থার কথা না শুনে হতাশ হয়েছিলেন। দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা ও রাজনীতিক কমল হাসান তো একটা নতুন শব্দবন্ধ তৈরি করে ফেলেছেন, 'ব্যালকনি পলিটিক্স'।  অর্থাৎ, সাধারণ মানুষকে শুধু ব্যালকনি থেকে হাত নেড়ে, ভাষণ দিয়ে রাজনীতি করা।

মুম্বইয়ের এই ঘটনার পরেই তা নিয়ে রাজনৈতিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ শুরু হয়ে যায়। দেশের কোথাও বিরোধীরা এখন  মুখ খুললেই বিজেপি নেতারা বলতে থাকেন, সংকট সময়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। সেই বিজেপি নেতারাই মহারাষ্ট্র সরকারের সমালোচনায় মুখর হন। তার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী-পুত্র আদিত্য ঠাকরে সব দোষ কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপিয়ে দেন। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের মধ্যে মহারাষ্ট্রেই সব চেয়ে বেশি করোনা হচ্ছে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও সর্বাধিক।

তবে গুজরাটের অবস্থাও চিন্তাজনক। সেখানে কংগ্রেসের এক বিধায়ক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর রিপোর্ট আসার কিছুক্ষণ আগেও তিনি মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি ও অন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিধায়কের নাম ইমরান খেড়াওয়ালা। কয়েক দিন ধরেই তাঁর বারবার জ্বর হচ্ছিল। তারপরেও তিনি কেন বাইরে বেরচ্ছিলেন, কেনই বা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেন, রূপানিও কেন ভিডিও কনফারেন্সিং না করে আগের মতোই সকলকে ডেকে বৈঠক করছেন, এই সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাচ্ছে না।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)