1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ওরা কারা?

২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলাকারী ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ'-এর সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইয়াসির আরফাত তূর্যকে আটক করেছে পুলিশ৷

https://p.dw.com/p/3VHJ7
Nurul Haque Nur
ছবি: bdnews24.com

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাথে জড়িত আছেন ছাত্রলীগের অব্যাহতি পাওয়া সাবেকদের পাশাপাশি বর্তমান নেতারাও৷ তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের, বিশেষ করে বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর হয়ে কাজ করেন বলে জানা গেছে৷

সংগঠনটির বয়স এক বছরের কিছু বেশি৷ ২০১৮ সালের অক্টোবরে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ গড়ে তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন৷ তিনি দাবি করেন, ‘‘রোববার ডাকসু ভবনে হামলার সাথে জড়িত বুলবুল ও মামুনকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে এই বছরের ১০ অক্টোবর সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়৷ কিন্তু তাদের বহিস্কার করলেও তারা একই নাম ব্যবহার করে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে৷''

ডাকসু ভবনে ভিপি নুরের ওপর হামলাকারী মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং সাধারণ সম্পাদক আল মামুন৷ জামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘তারা আমার কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলো৷ কিন্তু তাদের বহিস্কার করার পর তারাই নিজেদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে একই সংগঠনের নামে নানা অপকর্ম চালাতে থাকে৷ তাদের আলাদা নামে সংগঠন করতে বললেও তারা তা শোনেনি৷''

হামলাকারী মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে শুরুতে থাকলেও বিতর্কিত হিসেবে বাদ পড়ে৷ আর সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ছাত্রলীগের বর্তমান ও গত কমিটির উপ-সম্পাদক৷ এই কমিটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইয়াসির আরাফাত তূর্য এখন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক৷ আর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধার সম্পাদক সনেট মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি৷

একেএম জামাল উদ্দিন

তারা মূলত টেন্ডারবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীর অনুসারী বলে জানা গেছে৷ গোলাম রাব্বানীর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে তারা ক্যাম্পাসে আন্দোলনও করেছিল৷ গত মাসে ভিপি নুরের ‘অডিও ফাঁসের' পর তারা ডাকসু ভবনে ভিপির কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়৷ তারা কোনো অপকর্ম করার পরপরই দৃশ্যপটে হাজির হন ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী৷ রোববারের হামলার পরও তাকে একই ভূমিকায় দেখা যায়৷

আগে তালা লাগানোর সময়ও রাব্বানী ছিলেন সক্রিয়৷ তিনি তখন ‘দুর্নীতির' অভিযোগ এনে ভিপি নুরের পদত্যাগ দাবি করেন৷ এবার হামলার পর তিনি বলেন, ‘‘নুর আহত হয়েছে নাকি, ডাজ নট ম্যাটার৷''

এ নিয়ে জানতে গোলাম রাব্বানীকে কয়েকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি৷ ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, ভিপি নুরসহ ১৮ জনের ওপর হামলার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া মনোভাব জানার পর তিনি আড়ালে চলে গেছেন৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ও ডাকসু কর্মকর্তা জানান, রাব্বানী ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পর ক্যাম্পাসে ও ছাত্রলীগে তার আধিপত্য ধরে রাখতে  মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নামে এদের ব্যবহার করেন৷

এর আগে গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিপরীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে মাঠে ছিলো ‘মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড'৷ কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের পর মুক্তিয়োদ্ধা সন্তান কমান্ড থেকে বেরিয়ে গিয়ে গত বছরের চার অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আ ক ম জামাল উদ্দিন এবং আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানের ছেলে আশিক খানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ গঠন করা হয়৷ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড এর সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘‘তারা তাদের স্বার্থে আলাদা হয়ে গেছে, আগে আমাদের সঙ্গে ছিলো৷ তবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কোনো নিবন্ধন নেই৷ এ ধরনের সংগঠন করতে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অনুমোদন লাগে৷''

মেহেদী হাসান

তিনি আরো বলেন, ‘‘যারা এই সংগঠন করছে তারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তা সত্য৷ কিন্তু তাদের কাজকর্ম মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করছে৷''

কিন্তু জামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘এ ধরনের সংগঠন করতে কোনো রেজিষ্ট্রেশন লাগে না৷ সারাদেশেই মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের নামে নানা সংগঠন আছে৷ আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এই সংগঠনটি গড়ে তুলেছি সরকারি চাকরিতে আমাদের কোটা ফিরিয়ে আনা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে৷ সারাদেশে আমাদের শাখা রয়েছে৷ আর বুলবুল, মামুনের মত যারা আনরুলি তাদের বাদ দিয়েছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করে যারা অপকর্ম এবং সন্ত্রাসী কাজ করছে তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই৷''

এদিকে রোববারের হামলায় ডাকসু ভিপি নুরসহ মোট ২৫ জন আহত হন৷ এরমধ্যে ১৭ জনকে হাসাপতালে ভর্তি করা হয়৷ সোমবার ১২ জনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়৷ নুরসহ পাঁচজন এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন৷ তাদের মধ্যে তুহিন ফারাবির অবস্থা আশঙ্কাজনক৷

পুলিশ হামলার অভিযেগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দুইজনকে আটক করলেও সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি৷ আর সরকারের কড়া মনোভাবের কারণে মঞ্চের অন্য নেতারা ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেয়ায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য