মুক্তি পেলেন পি কে হালদারের সহযোগীর দুই মেয়ে
২৪ আগস্ট ২০২২ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর অনুযায়ী, ভারতের কারাগারে বন্দি পি কে হালদারের দুই নারী ‘সহযোগীকে’ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় র্যাব গ্রেপ্তার করেছে৷ তারা অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত বহুল আলোচিত প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের পরিচালক খবিরউদ্দীনের দুই মেয়ে৷
শারমীন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদকে বুধবার ভোররাতে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব৷ একমাস আগে ঢাকায় এসে আত্মগোপনে থেকে তারা ক্যানাডায় ‘পালিয়ে যাচ্ছিলেন’ বলে র্যাবের ভাষ্য৷
র্যাব বলছে, প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের এই দুই সহযোগী ২০০৩ এবং ২০০৪ সাল থেকে ক্যানাডায় বসবাস করেন৷ আদালতের নিষেধ ভেঙে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনায় ভোররাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে বিমানবন্দরে পৌঁছান শারমিন ও তানিয়া৷ আটকের পর তারা নাম পরিচয় গোপান করারও চেষ্টা করেন৷
দুজনের মধ্যে শারমিন আহমেদের নামে ৩১ কেটি ও তানিয়া আহমেদের নামে ৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ আছে বলে জানিয়েছে র্যাব৷
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ‘‘কোম্পানির পরিচালকরা নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে বেনামে গ্রাহকদের অর্থ ঋণ হিসেবে নিয়ে আত্মসাৎ করেন৷ খবিরউদ্দীন তিনিও নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন৷ পরে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ওই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়৷’’
তিনি জানান, দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দুবছরের মতো জেল খেটে এখন জামিনে বেরিয়ে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খবিরউদ্দিন৷
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২৮ জুলাই খবিরউদ্দীনের দুই মেয়ে দেশে আসেন বলে র্যাবের কাছে খবর আসে৷ এরপর থেকেই গোয়েন্দা ও র্যাব ৩ সদস্যরা তাদের সন্ধানে অভিযানে নামে৷
পি কে হালদারেরআরেক ‘ঘনিষ্ঠ' সহযোগী অবন্তিকা বড়ালকে গত বছর রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ সব মিলিয়ে তার কয়েক ডজন সহযোগী এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন৷
প্রশান্ত কুমার হালদার বেসরকারি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক৷ তার দুনীতির খবর আসে ২০২০ সালের শুরুতে৷ এরপর দুদক তদন্তে নেমে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের ৩৪টি মামলা করে৷
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন৷
এই চার কোম্পানি হল- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) ৷ এসব কোম্পানি থেকে পি কে হালদার ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য৷
এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে গত বছরের শুরুতে পি কে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ২৭৫ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের' খবর দিয়ে মামলা করে৷ দুদক এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিলও করেছে৷
দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পি কে হালদার তার নিজের, আত্মীয়দের, বন্ধু ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে আটটি কোম্পানিতে ৬৭ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৯ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার ‘বৈধ কোনো উৎস' অনুসন্ধানে মেলেনি৷
গত ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণার থেকে পাঁচ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হন পি কে হালদার ৷
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট পি কে হালদারকে দুদফা রিমান্ডে নেয় ৷ পি কে হালদার বর্তমানে ভারতের কারাগারে বন্দি৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)