মীর কাসেমের বিরুদ্ধে রায় রবিবার
১ নভেম্বর ২০১৪এরইমধ্যে জামায়াতের আমির এবং সেক্রেটারি জেনারেলসহ ১১ শীর্ষ নেতাকে মৃত্যুদণ্ডসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
মীর কাসেম আলীকে শুক্রবার গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল-২-এ রবিবার তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে৷
২০১২ সালের ১৭ জুন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মীর কাসেম আলীকে গ্রেপ্তার করে৷ গত বছরের ১৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে৷ ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী ১৪টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইবুন্যাল-১৷ পরে মামলাটি ট্রাইবুন্যাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়৷ রাষ্ট্রপক্ষে ২৪ জন ও আসামিপক্ষে তিনজন সাক্ষ্য দেন৷ ২৩ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়৷
মীর কাসেম আলী চট্টগ্রামে মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা ছাড়াও বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকা তৈরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ কাসেম আলীর নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী চট্টগ্রামের টেলিগ্রাফ অফিস সংলগ্ন ডালিম হোটেলসহ টর্চার সেলগুলোতে মুক্তিযোদ্ধা, তাদের স্বজন এবং স্থানীয় সংখ্যালঘুদের ধরে এনে নির্যাতন ও হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ৷
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকালে ওই টর্চার সেল থেকে অনেকের সঙ্গে মুক্ত হন চট্টগ্রামের সৈয়দ মো. এমরান৷ তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘একাত্তরে বদর কমান্ডার মীর কাসেম চট্টগ্রাম শহরে যে অপরাধ করেছেন সে ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি প্রত্যাশা করা যায় না৷ আশা করছি রোববারের রায়ে মৃত্যুদণ্ডই হবে৷''
মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরু বাঙালি মীর কাসেমকে চট্টগ্রামে বদর বাহিনীর নির্যাতন ও হত্যা পরিকল্পনার ‘রিং মাস্টার' আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘মৃত্যুদণ্ড ছাড়া তার আর অন্য কোনো শাস্তি হতে পারে না৷''
৬২ বছর বয়সি মীর কাসেমের পৈতৃক বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায়৷ তবে বাবার চাকরির সূত্রে তিনি ছোটবেলা থেকে চট্টগ্রামে থাকতেন৷ একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি ছিলেন৷ ৭ নভেম্বর তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হন৷ স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে আত্মপ্রকাশ করে৷ মীর কাসেম ছিলেন ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি৷ ১৯৮০ সালে তিনি রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী নামের একটি বিদেশি বেসরকারি সংস্থার বাংলাদেশের পরিচালক হন৷ ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি জামায়াতের শূরা সদস্য৷ দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের প্রধান মীর কাসেম জামায়াতের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত৷
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
বুধবার নিজামীর মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে দুটি ট্রাইবুন্যাল মানবতাবিরোধী অপরাধের ১১টি মামলার রায় ঘোষণা করেছেন৷
এরমধ্যে তিনটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে৷ ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইবুন্যাল-১ -এর দেয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ৷
আর গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইবুন্যাল-২ এর দেয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন আপিল বিভাগ৷ ১২ ডিসেম্বর রাতে ওই রায় কার্যকর করা হয়৷
এছাড়া বিএনপির সাবেক নেতা আবদুল আলীম মারা যাওয়ায় তাঁর মামলাটি আপিল বিভাগ বাতিল করেছেন৷ ট্রাইবুন্যাল-২ তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছিলেন৷
ট্রাইবুন্যাল-১ এর রায়ে ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমও কারাগারে আটক অবস্থায় ২৩ অক্টোবর মারা যান৷ নিয়ম অনুসারে আপিল বিভাগে বিচারাধীন তাঁর মামলাটিও আর চলবে না৷
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এ পর্যন্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলবদর বাহিনীর দুই নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান, জামায়াতের সাবেক সদস্য আবুল কালাম আযাদ, বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে৷