মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষ
১৩ অক্টোবর ২০১৬গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অং সান সুচি জয়ী হওয়ার পর এই প্রথম রোহিঙ্গা ও নিরাপত্তাবাহিনীর মধ্যে এত বড় সংঘাতের ঘটনা ঘটল৷ ঘটনার সূত্রপাত রবিবার সকালে৷ নিরাপত্তাবাহিনী বলছে, সেদিন সশস্ত্র রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্তের তিনটি পুলিশ ঘাঁটিতে হামলা চালায়৷ এতে মিয়ানমারের ৯ বর্ডার পুলিশ নিহত হয়, আহত হয় পাঁচ জন৷ এ সময় বেশ কিছু অস্ত্র এবং ১০ হাজার রাউন্ড গুলি নিয়ে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা৷
এরপরই রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের শহর মাউঙ্গদাওয়ে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশ৷ তিনশ' মানুষের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে৷ হামলাকারীরা পিস্তল, তলোয়ার এবং ছুরি নিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করা হয়৷
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, এই সংঘাতের ফলে গৃহহীন সাধারণ রোহিঙ্গারা হামলার শিকার হবে৷ বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র ‘গ্লোবাল নিউ লাইট'কে দেয়া সাক্ষাৎকারে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি দাবি করেছেন, তাঁর সরকার সেখানে আইন প্রতিষ্ঠার জন্য হামলাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাধ্য হচ্ছে৷
জানিয়েছেন, কারা এই হামলা চালিয়েছে সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নয় কর্তৃপক্ষ৷ সেনাবাহিনীর সংবাদপত্র ‘মিয়াওয়াদি' জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে কিয়েটিয়োপিন গ্রামে ১০ হামলাকারী নিহত হয়৷ তাদের অস্ত্রশস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ অন্যদিকে বুধবার স্বশস্ত্র হামলাকারীরা ২৫টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ এছাড়া তারা কিয়েটিয়োপিন গ্রামের বর্ডার পুলিশ কোয়ার্টারেও হামলা চালায়৷
রবিবার থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ নিরাপত্তাকর্মী সহ নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ জন৷ স্থানীয় এক ব্যক্তি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানান, নিহত ২৬ জনের মধ্যে সাধারণ মানুষও ছিল, যাদের হাতে অস্ত্র ছিল না, কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখে ভয়ে পালানোর সময় তারা নিহত হয়৷ এছাড়া আরও চারজনকে আটক করে নিরাপত্তাবাহিনী৷ আটক ওই মুসলিম ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে৷
মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এসব এলাকায় বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে এবং মিয়ানমারের সরকারকে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে তারা৷
২০১২ সাল থেকে রোহিঙ্গা ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে৷ রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আজও অবস্থান করছে ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ৷ তাদের চলাফেরায় অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না তারা৷
এপিবি/এসিবি (এপি, রয়টার্স)