মিস ফিল্ডিংয়ের খেসারতে পাকিস্তানের রানের পাহাড়
৫ জুলাই ২০১৯যাচ্ছেতাই ফিল্ডিংয়ে অনেক রান উপহার দিয়েছে; সঙ্গে একের পর এক 'জীবন'৷ সে সুবিধা কাজে লাগিয়ে রানের পাহাড়ে পাকিস্তান৷ ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১৫ রান তাঁদের৷
চ্যালেঞ্জ নিয়েই তাই এ বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচের শেষ ইনিংসে ব্যাটিং করতে নামবে তাই বাংলাদেশ৷
এ খেলার গুরুত্ব এমনিতে ততটা নেই৷ সেমিফাইনালে ওঠার রেস থেকে আগেই ছিটকে গেছে বাংলাদেশ৷ পাকিস্তানের যতটুকু সম্ভাবনা, সেটি আক্ষরিক অর্থেই কাগজ-কলমে৷ তা বাস্তবায়িত হওয়ার নূন্যতম সম্ভাবনাও ছিল না৷ দুই দলের সামনে বিশ্বকাপটি ভালোভাবে শেষ করার উপলক্ষ্যই ঝুলে ছিল এ ম্যাচের আবহে৷ বাংলাদেশের জন্য বাড়তি আরেক প্রণোদনা৷ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তজার জন্য খেলা৷ বিশ্বকাপে এটি নিশ্চিতভাবেই তাঁর শেষ ম্যাচ৷ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেরও কি?
এ ম্যাচে অবসরের ঘোষণার গুঞ্জন ছিল প্রবল মাত্রায়৷ সেটি হোক বা না হোক, দীর্ঘদিনের অধিনায়কের বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখার তাড়না ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের৷
যদিও জঘন্য ফিল্ডিংয়ের সময়ের শরীরী ভাষায় তা মনে হয়নি৷
গড়পড়তা ফিল্ডিং বিশ্বকাপজুড়েই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে৷ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কেন উইলিয়ামসনের সহজ রান আউট করতে পারেননি মুশফিক৷ ২৪৪ রান ডিফেন্ডর করায় সেটি ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ৷ সে রান আউট হলে ৭২ রানে তৃতীয় উইকেট পড়ে নিউজিল্যান্ডের; ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারত বাংলাদেশ৷ সেটি হয়নি; তৃতীয় উইকেট পড়তে পড়তে কিউইদের রান ১৬০ হয়ে যাওয়ায় আফসোস আরো বেড়েছে৷ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডেভিড ওয়ার্নারের ক্যাচ পয়েন্টে ছেড়েছেন সাবি্বর রহমান৷ ১০ রানে থাকা ওই ওপেনার পরে যোগ করেন আরো ১৫৬ রান৷ এখানেই শেষ নয়৷ ভারতের বিপক্ষে রোহিত শর্মার ক্যাচ ছাড়েন তামিম ইকবাল৷ ৯ রানে জীবন পেয়ে ১০৪ করেন রোহিত; ১৮ রানে যেখানে প্রথম উইকেট পেতে পারত বাংলাদেশ, সেই 'প্রথম' শিকারের স্কোরবেকার্ডে ১৮০ রান উঠে যেতে দেখে মাশরাফি বিন মোর্তজার দল৷
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও বাজে ফিল্ডিংয়ের ধারা অব্যাহত বাংলাদেশের!
টসজয়ী ব্যাটিং নেয়া পাকিস্তানের প্রথম উইকেট তৃতীয় ওভারেই পেতে পারত মাশরাফির দল৷ মিড অফ ফিল্ডার যথেষ্ট তত্পর ছিলেন না বলে ফখর জামান রান আউট হননি৷ এটি তেমন আফসোসে পোড়ায়নি বাংলাদেশকে৷ সপ্তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের বলে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দেন জামান (১৩)৷ তবে ১ রানের সময় ইমাম-উল-হকের রান আউট সুযোগ মিস করা ভুগিয়েছে মাশরাফির দলকে৷ ইমাম ও বাবর আজমের জুটিতে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে পাকিস্তান৷
২২তম ওভারে দলীয় ১০০-তে পৌঁছে যায় সরফরাজ আহমেদের দল৷ পরের ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনকে বাউন্ডারি মেরে নিজের ফিফটিতে পৌঁছান আজম৷ এর কয়েক ওভার পরই মুস্তাফিজুর রহমানের বলে পয়েন্টে তাঁর ক্যাচ ফেলেন মোসাদ্দেক৷ ৫৭ রানে থাকা আজমের তখন এ বিশ্বকাপের মোট রান ৪৩৫৷ পাকিস্তানীদের মধ্যে এক আসরে সর্বোচ্চ রানে ১৯৯২ টুর্নামেন্টে জাভেদ মিয়াঁদাদের ৪৩৭ রানের রেকর্ডটি এরপর আর অক্ষত থাকেনি৷ পরে দারুণ স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে খেলা আজম পর পর দুটি চার মেরে সেঞ্চুরি থেকে আরেকটি চারের দূরত্বে পৌছে যান৷ কিন্তু সাইফের পরের বলে হয়ে যান এলবিডাব্লু৷ ৯৮ বলে ৯৬ রানের ইনিংস যায় থেমে৷ ভেঙে যায় ১৫৭ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি৷
ইনিংসের তখন মোটে শেষ হয়েছে ৩২ ওভার৷ সাড়ে তিনশ'র চোখ রাঙাচ্ছিল পাকিস্তান৷ কিন্তু এরপর ভালো নিয়ন্ত্রণ দেখায় বাংলাদেশের বোলাররা৷ ফিল্ডিংয়ের নাটকীয় কোনো উন্নতি অবশ্য হয়নি৷ মুস্তাফিজের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ইমাম পৌঁছে যান সেঞ্চুরির মাইলফলকে৷ ৩৬তম ওয়ানডেতে এটি তাঁর সপ্তম শতরান৷ কিন্তু এক বল পরই হিট উইকেট হলে শেষ হয়ে যায় ইমামের ১০০ বলে ১০০ রানের ইনিংস৷ আর হারিস সোহেলকে আউট করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের শততম উইকেট নেন মুস্তাফিজ; ৫৪তম ম্যাচে৷ ওয়ানডেতে দ্রুততম শত উইকেটের তালিকায় এখন শেন বন্ডের সঙ্গে চতুর্থতে কাটার মাস্টার৷ রশিদ খান (৪৪), মিচেল স্টার্ক (৫২) ও সাকলাইন মুশতাকের (৫৩) পর৷
শেষ ১০ ওভারে ৮৫ রান করে স্কোরটাকে ৩১৫ নিয়ে যায় পাকিস্তান৷ পাঁচ শিকার মুস্তাফিজের; তিনটি সাইফের৷ মাত্র এক উইকেট পেলেও ১০ ওভারে ৩০ রানের বেশি দেননি মেহেদী৷ তুলনায় আবারও বড্ড নিষ্প্রভ মাশরাফি৷ সাত ওভারে ৪৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য৷ পুরো বিশ্বকাপে একটিমাত্র উইকেট তাঁর; গড় ৩৬১! অধিনায়কের এমন পারফরম্যান্স একেবারেই অপ্রত্যাশিত৷
এখন সতীর্থরা যদি তাঁকে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় উপহার দিতে পারেন বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে! হয়তো-বা ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচেও!