1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিশ্র ভাবনার নির্বাচন

যুবায়ের আহমেদ ঢাকা থেকে
৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে খুব মিশ্র ভাবনা পাওয়া গেলো ভোটারদের মাঝে৷ কেউ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরে খুশি৷ কেউ ভোট দিতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷

https://p.dw.com/p/3AmRi
ভোট দিতে না পেরে ক্ষোভছবি: DW/A. Islam

সকাল আটটার আগেই ঢাকা ৮ আসনের ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে লাইন পড়ে গেছে৷ ভোটারদের উৎসবমুখর উপস্থিতি৷ আটটা বাজার পর শুরু হলো ভোট গ্রহণ৷ ভোট উৎসবে যুক্ত হতে পেরে যারা উপস্থিত ছিলেন এক প্রকার সন্তুষ্টি জানালেন ডয়চে ভেলে প্রতিবেদকের কাছে৷

কিন্তু ভিন্ন চিত্র দেখা গেল অল্প কিছু দূরেই শিল্পকলার নারী ভোটারদের একটি কেন্দ্রে৷ কর্তব্যরত পুলিশ সেখানে প্রতিবেদকদের ঢুকতে দিচ্ছিলেন না৷ পরে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এসে ভেতরে নিয়ে গেলেও পুলিশ শুধু লাইনের ছবিই তুলতে দেয়৷

‘কেনো আমাকে এই বয়সে একটি স্লিপের জন্য দৌড়াদৌড়ি করে হয়রান হয়ে পড়তে হবে?’

বেলা এগারটার দিকে পাশের আসনের একটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল বিরাট লাইন৷ ভোট দিতে এসেছেন অনেকেই৷ ভোটের পরিবেশ দেখে তাদের কেউ কেউ সন্তোষ প্রকাশ করেন৷ ‘‘ভালো ভোট হচ্ছে৷ কোনো সমস্যা নেই'', বললেন লাইনে দাঁড়ানো একজন ভোটার৷ তবে তাঁর পেছনে দাঁড়ানো আরেক ভোটার একটু সন্দেহ প্রকাশ করলেন৷ অভিযোগ করে বললেন, ‘‘আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি৷ অথচ লাইনের বাইরে থেকে দু'একজন ঢুকে ভোট দিয়ে আসছেন৷''

আবার মো. মঈনউদ্দিন নামের এক ভোটার এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করলেন, তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও তিনি ভোট দিতে পারছেন না৷ কারণ, তাঁর কাছে কোনো ‘স্লিপ' নেই৷ ‘‘আমি জানি যে এই আইডি কার্ড দিয়ে চাকরি হয়, অ্যাকাউন্ট হয়, এই কার্ড ছাড়া কিছুই হয় না৷ কেনো আমাকে এই বয়সে একটি স্লিপের জন্য দৌড়াদৌড়ি করে হয়রান হয়ে পড়তে হবে? আমি ভোট দিতে পারিনি এখনো,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷

‘আমার কেন্দ্রের বুথগুলো দেখুন, উভয়পক্ষের বা একাধিক প্রার্থীর এজেন্ট আছে’

এ সময় ঢাকা ৮ ও ৯ আসনের প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাস আসেন এই কেন্দ্রে ভোট দিতে৷ কিন্তু তারা ভোট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ তারা সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের মারধর ও কেন্দ্রে আসতে না দেয়ায়, এজেন্ট বের করে দেয়ায়, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে তারা ভোট দেয়া থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন৷

এসব বিষয়ে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তুহিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমার কেন্দ্রের বুথগুলো দেখুন, উভয়পক্ষের বা একাধিক প্রার্থীর এজেন্ট আছে৷''  যাদের স্লিপ নেই তাদের কেন্দ্র খুঁজে বের করতে সহযোগিতা করছেন বলে দাবি করেন তিনি৷ ঢাকার বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে কমবেশি এমন চিত্রই দেখা গেল৷

আরো যা দেখা গেল তা হলো, কেন্দ্রের বাইরে নৌকা মার্কার কর্মীদের ভিড়৷ কিন্তু অন্য মার্কার কর্মীদের খুব একটা দেখা যায়নি৷ অনেক বুথেই নেই ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট৷ এদিকে, সকাল এগারটার মধ্যে ২০ ভাগ ভোট সরকারি দল কেটে নিয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷ নয়াপল্টনে কার্যালয়ে তিনি উপস্থিত এক নারী ও পুরুষকে দেখিয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘দেখুন আমাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে৷''

‘ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না৷ ভোট জালিয়াতি নয়, এটি ভোট ডাকাতি'

এদিকে, সকাল ১১টার দিকে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়৷ সেখানে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘‘বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে সন্ত্রাস ও সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে৷ নির্বাচনের আগের রাতেই বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের হামলায় পাঁচজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন৷''

দুপুর একটায় সাংবাদিকদের গণফোরামের কার্যালয়ে ডাকেন ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরামের নেতা ড. কামাল হোসেন৷ সেখানে তিনি সরকারি দলেরভোট জালিয়াতি ও পেশী শক্তি প্রয়োগের নানা অভিযোগ তোলেন৷ পরে ডয়চে ভেলকে দেয়া আলাদা সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না৷ ভোট জালিয়াতি নয়, এটি ভোট ডাকাতি৷''

ভোট নিয়ে সন্ধ্যায় ঐক্যফ্রন্ট ও আওয়ামী লীগের আলাদা আলাদা ব্রিফিংয়ের কথা রয়েছে৷