মিশরের শেষ রাণীর খোঁজে
৬ জুন ২০১০প্রথমেই চোখে পড়বে একটি কাঁচের বাক্সে রাখা দু' টুকরো প্যাপাইরাস, অর্থাৎ সে আমলের কাগজ৷ তা'তে দেখা যাবে স্বয়ং ক্লিওপ্যাট্রার হস্তলিপি৷ গ্রিক ভাষায় লেখা: ‘‘এ'টা করো''৷ আর কিছু নয়, ক্লিওপ্যাট্রার স্বামী মার্ক এ্যান্টনির এক বন্ধুর কোনো করের ছাড় দরকার - খুবই অ-রোমান্টিক ব্যাপার, এ' তো আর শেক্সপীয়ারের কাব্য নয়!
এ'ছাড়া দেখতে পাওয়া যাবে প্রায় ১৫০টি নানা ধরণের জিনিষ৷ সবই ক্লিওপ্যাট্রার সঙ্গে যুক্ত৷ এর মধ্যে অনেক কিছুই এর আগে কখনো প্রদর্শিত হয়নি৷ তবে ক্লিওপ্যাট্রার যে রহস্যটি ভেদ করার জন্য পণ্ডিতকুল এখন ব্যাকুল, সেটা হল তাঁর কবরের নিশানা, কেননা গবেষণা ধীরে ধীরে সেদিকেই এগোচ্ছে৷
প্রদর্শনীর বস্তুগুলির অধিকাংশই পাওয়া গিয়েছে মিশরের টাপোসিরিস ম্যাগনা শহরে৷ এবং তার পরে ভূমধ্যসাগরের অতলে হেরাক্লিওন এবং ক্যানোপাস'এর মতো হারিয়ে যাওয়া শহর থেকে: দু'হাজার বছর আগে ভূমিকম্পের পর সমুদ্রের প্লাবন এসে যেখানে ক্লিওপ্যাট্রার প্রাসাদ ধ্বংস করে৷
বর্তমানের আলেক্সান্ড্রিয়া শহরের কাছেই সাগরের জল থেকে তুলে আনা হয়েছে ক্লিওপ্যাট্রার টোলেমি রাজবংশের এক রাজা-রাণীর লাল গ্রানাইটের মূর্তি: উচ্চতায় প্রায় ১৬ ফুট৷ সোনার হার, বালা, কানের দুল, যদিও ক্লিওপ্যাট্রার নয়৷ ক্লিওপ্যাট্রার পুত্রসন্তানের প্রস্তর মুখাবয়ব৷ তাঁর প্রেমিক জুলিয়াস সীজারের প্রস্তর মুখাবয়ব৷
রোমান সাম্রাজ্যের দুই সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী পুরুষ প্রেমে পড়েছিলেন এই নারীর৷ মিশরের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিলেন মিশরীয় দেবদেবীদের গ্রিক দেবদেবীদের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে৷ নিজে পাঠ নিয়েছিলেন অঙ্কশাস্ত্রে, ভেষজশাস্ত্রে, বিভিন্ন বিদেশী ভাষায়৷ শেষমেষ যা'তে বিজয়ী রোমকদের হাতে জনসমক্ষে অপমানিত না হতে হয়, সেজন্য রাণী ক্লিওপ্যাট্রা আত্মহত্যা করেন৷ এখন সকলের আশা যে, আলেক্সান্ড্রিয়া থেকে ৩০ মাইল পশ্চিমে টাপোসিরিস ম্যাগনায় মিশরের শেষ ফারাও রাণী ক্লিওপ্যাট্রার কবর খুঁজে পাওয়া যাবে৷
পাওয়া যাক আর নাই যাক, শিল্পকলায়, সাহিত্যে, ফিল্মে সেই সুন্দরী, বুদ্ধিমতী, প্রতিভাধর, ক্ষমতাশালী মহিলার স্মৃতিসৌধ তো সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে৷ কেননা তিনি ছিলেন - একজন স্বাধীনচেতা আধুনিক নারী৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম