‘মিরপুর টেস্টে সাকিবকে চাই’ দাবিতে বিক্ষোভ
২০ অক্টোবর ২০২৪সাকিবকে দেশের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলার সুযোগ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিসিবি প্রধানের পদত্যাগের দাবিও উঠেছে সেখানে৷
‘কানপুর নয় মিরপুর, মিরপুর মিরপুর'- এমন স্লোগানে শুক্রবার থেকেই সাকিব আল হাসানের শেষ টেস্ট ঘরের মাঠে করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন এক দল সাকিব ভক্ত৷ তারা মিরপুরে সাকিবের শেষ টেস্ট দেখতে চেয়েছিলেন৷ শনিবার তাদের দলটা আরো ভারি হয়৷ রোবাবর প্রায় শ'খানেক সাকিব ভক্ত জড়ো হন বিসিবি সভাপতি বরাবর স্মারকলিপি জমা দিতে৷
সেই স্মারকলিপিতে সাকিবকে যথাযথ সম্মানে দেশে এনে মাঠ থেকে অবসরের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি রেখেছেন তারা৷ আনুষ্ঠানিকভাবে সেই দাবি জানাতে রোববার দুপুরে মিরপুর স্টেডিয়াম বরাবর পদযাত্রার কর্মসূচি দেয়া হয়৷
কিন্তু রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেটের বিপরীত দিকের রাস্তায় সাকিব ভক্তদের আটকে দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা৷ ৩০ মিনিটের মতো দু পক্ষের মধ্যে তর্ক চলে৷ পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় স্মারকলিপি নিয়ে বিসিবি কার্যালয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ তাই তাদের চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়৷ সেই পরামর্শ না মেনে ভক্তরা মিরপুরে সাকিবের খেলার পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন৷ তারা জানতে চান, সাকিবকে সঠিক নিরাপত্তা দিতে বিসিবি অসমর্থ কেন? স্কোয়াডে রেখে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েও দুবাই পর্যন্ত আসার পরে কেন তাকে উল্টো বার্তা দেয়া হলো? ‘সাকিবিয়ানরা' জানান, তাদের দাবি না মানলে রাস্তা ছেড়ে যাবেন না৷ ৩০ মিনিটের মতো স্লোগান-তর্ক চালানোর পর ১ নম্বর গেট থেকে একটু পিছিয়ে অবস্থান নেন তারা৷
ঠিক ওই সময় প্রশিকা মোড়ের দিক থেকে তিন-চারজন ব্যক্তি লাঠি হাতে ছুটে আসেন৷ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালাতে থাকেন তারা৷ সাকিব-ভক্তরা তখন ২ নম্বর গেটের দিকে ছুটে যান৷ কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেদিকে যেতে দেননি৷
সেনাবাহিনীর সদস্যরা এর আগ পর্যন্ত নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়েছিলেন৷ ২ নম্বর গেটের দিকে যে কারো যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল৷ সেটাই নিশ্চিত করছিলেন তারা৷ কিন্তু আন্দোলনকারীরা ধাওয়া খেয়ে ২ নম্বর গেটের দিকে ছুটলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রতিহত করেন৷ তারা সাকিব ভক্তদের ১ নম্বর গেট হয়ে প্রশিকা মোড়, অর্থাৎ যেখান থেকে হামলা চালানো হয়েছে সেদিকে যেতে বলেন৷
এ সময় মাহফুজা নামের এক সাবিকভক্ত এক সেনা সদস্যকে বলছিলেন, ‘‘এই লোকরা কোথা থেকে এসে আমাদের মারতে চাইলো, তখন আপনারা কিছু বললেন না৷ আমাদের চলে যেতে বলছেন কেন? আপনারা এতক্ষণ কী করলেন?''
আন্দোলনরত সাকিবভক্তদের অনেকেই মনে করেন মিরপুর টেস্ট যেহেতু ২১ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে, এত কম সময়ে তো তাকে দেশে এনে খেলানো সম্ভব না তাই চট্টগ্রামেও তাকে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলার সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে৷ ক্ষুব্ধ সাকিব-ভক্তদের অনেকে তাদের প্রিয় ক্রিকেটারকে দেশে নিরাপদে, সসম্মানে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার সুযোগ করে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের পদত্যাগও দাবি করেন৷
বেলা ৩টার দিকে অনুশীলন শেষ করে টিম হোটেলে ফেরে সাউথ আফ্রিকা দল৷ প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের অনেককেই তখন নিজেদের মোবাইল ফোনে আন্দোলনকারীদের ছবি তুলতে এবং ভিডিও করতে দেখা গেছে৷
সোমবার মিরপুরে শুরু হবে বাংলাদেশ-সাউথ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম টেস্ট৷ এমন সময়ে বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো বিদেশি দলের খেলোয়াড়রা এমন ঘটনার সাক্ষী হলেন৷
এর আগে দেশের মাটিতে সাকিব অবসর নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে আক্ষেপ করেছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত৷ বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা নিজেদের মতো করে সাকিবকে বিদায়ী সম্ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন৷ সাকিব মিরপুর টেস্টে খেলতে না পারায় তা আর সম্ভব হলো না বলে আক্ষেপ করেছেন তিনি৷
আক্ষেপ করে শান্ত বলেছেন, ‘‘সাকিব ভাইকে আমাদের নিজেদের মতো করে ভালো একটা বিদায় দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল৷ যেহেতু তিনি শুধু বাংলাদেশেরই নন, বিশ্বের একজন সেরা ক্রিকেটার৷ খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে ওটা হয়নি৷ তো আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, শুধু আমি না, প্রতিটা ক্রিকেটার মনে করে এই ব্যাপারটা হয়তো পেন্ডিং-ই থেকে গেল৷
দীর্ঘ দিনের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান কাল শুরু হতে যাওয়া মিরপুর টেস্টে টেস্ট ক্যারিয়ারে ইতি টানতে৷ সরকারের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ায় নিজের ফেসবুক পেজে মিরপুরে ভক্তদের পাশে থাকার অনুরোধ করে স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন৷ তাতে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় সাকিব দেশে ফিরছেন এবং মিরপুরে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি খেলছেন৷
গত বৃহস্পতিবার তার দেশে ফেরার কথা ছিল৷ কিন্তু বুধবার রাতে দেশে সাকিবের নিরাপত্তা এবং নিরাপদে দেশের বাইরে পরিবারের কাছে যাওয়া নিয়ে আবার শঙ্কা জাগে৷ সাকিবকে মিরপুরে খেলতে না দেওয়ার হুমকি দিয়ে শুরু হয় আন্দোলন৷ সেই অবস্থায় সাকিবের দেশে আসা নিরাপদ মনে করেনি অন্তর্বর্তী সরকার৷ তাই ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাকিবকে আপাতত দেশে না আসার পরামর্শ দেওয়া হয়৷