মায়ের দুধের নানা গুণ
১লা আগস্ট ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃদুগ্ধ পান দিবস৷ এই দিবস পালন করা শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর থেকেই৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, মায়ের দুধ শিশুদের জন্য ম্যাজিক পানীয়৷ বিস্তারিত জানতে এই ছবিঘরটি দেখুন৷
মায়ের বুকে দুধ আসে কিভাবে?
শিশু পেটে আসার পর থেকেই মায়ের বুকে দুধ তৈরি হওয়া শুরু হয়৷ এর জন্য সাহায্য করে প্রোজেস্টেরন এবং প্রোলাকটিন নামের দুটি হরমোন৷ এই দুধ শিশুকে জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পান করানো যায়৷ তবে শিশু কতটা দুধ পাবে তা নির্ভর করে প্রথম স্তন্যপানের ওপর৷ অর্থাৎ শরীরের প্রোলাকটিন হরমনই মায়ের নার্ভ সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেভাবেই প্রয়োজনীয় দুগ্ধ উৎপাদন করে৷
শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো
মায়ের দুধ শিশুদের শরীরে ম্যাজিকের মতো কাজ করে৷ শিশুর জন্মের প্রথম সপ্তাহে মায়ের দুধ পান করলে তা বাচ্চাকে অন্ত্র সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং হজম করতে ও দুধ পান করার সময় পেটে বাতাস জমা থেকে রেহাই পেতেও সহায়তা করে৷ মায়ের দুধ শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অ্যালার্জির বিরুদ্ধে কাজ করে৷ তাছাড়া মায়ের দুধ পান করার কারণে শিশুর মুখের তালু এবং মাড়ি শক্ত হয়৷
মায়ের দুধে কী আছে?
মায়ের দুধে কী আছে তার হিসেব অনেক লম্বা৷ এতে রয়েছে মিনারেল, ভিটামিন, ফ্যাট, পানি ইত্যাদি৷ মায়ের দুধে বিশেষ এক রকম ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা শিশুর চোখের জ্যোতি বাড়াতেও সাহায্য করে থাকে৷
শালদুধ
সদ্য প্রসূতির স্তন থেকে বের হওয়া প্রথম দুধ৷ হলদেটে রং-এর এই দুধ পরিমাণে কম হলেও এতে থাকে শ্বেতকণিকা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা৷ শালদুধ শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারি, যা শিশুর জীবনের প্রথম টিকা হিসাবেও কাজ করে৷ শালদুধে থাকে আমিষ ও প্রচুর ভিটামিন-এ৷ শালদুধ শিশুর পেট পরিষ্কার করে এবং শিশুর জন্ডিস হবার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়৷
মায়ের দুধই কি যথেষ্ট?
নবজাতকের মা এক লিটারের মতো দুধ উৎপাদন করে থাকেন৷ শিশুরা সাধারণত প্রতিবার ২০০ থেকে ২২৫ মিলিগ্রাম দুধ পান করে৷ তবে একজন শিশুর যতটা দুধ প্রয়োজন শিশু চাইলে ঠিক ততটুকুই পায়৷
কত বয়স পর্যন্ত স্তন্যপান করা উচিত
মায়ের দুধ শিশুদের আদর্শ পুষ্টিকর খাবার৷ তবে এ দুধ কতদিন শিশু পান করবে – সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জার্মানির জাতীয় মাতৃদুগ্ধ পান কমিশনের পরামর্শ: কমপক্ষে ছয়মাস মায়ের দুধ পান করানো উচিত৷ তবে চার মাসের পর থেকে নবজাতকদের মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবারও দেয়া যেতে পারে৷
দেশ ভেদে রয়েছে পার্থক্য
মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে একেক দেশে একেক রীতি প্রচলিত৷ যেমন মধ্য আফিকার ‘বফি’-তে সাধারণত সাড়ে চার বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করানো হয় বাচ্চাদের৷ অবাক করার মতো হলেও অনেক মা ১৬,০০০ লিটার দুধ উৎপাদন করে থাকেন৷ তবে সারা বিশ্বে গড়ে মায়েরা ৩০ মাস পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ পান করিয়ে থাকেন৷
অন্য নারীর নয়, মায়ের দুধ চাই
বহুদিন আগে কিন্তু শিশুদের অন্য নারীর বুকের দুধ পান করানো হতো৷ পরবর্তীতে ১৮ শতক থেকে একটি প্রচারাভিযান চালানো হয়, যেখানে বলা হয় যে, মা-রাই যেন শিশুকে নিজের বুকের দুধ পান করান৷
প্রকাশ্যে দুধ পান করানো
মা তাঁর শিশুকে প্রকাশ্যে দুধ পান করাচ্ছেন – এটা কিছু দেশের মানুষের কাছে তেমন পছন্দ নয়৷ তাই সেসব দেশে মা শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছে এমন ছবি কেউ ফেসবুকে দিলে সেগুলো ফেসবুক থেকে মুছে ফেলা হয়৷
শুধু শিশু নয়, মায়েরও উপকার হয়
যে মা তাঁর শিশুকে বুকের দুধ পান করান সেই মায়ের জরায়ু, স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়৷ তাছাড়া দুধ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে সন্তান ও মায়ের মধ্যে তৈরি হয় এক নিবিড় সম্পর্ক৷