মালালাকে নিয়ে গান
৭ ডিসেম্বর ২০১২মালালার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? সেই যে, মেয়েরা লেখাপড়া করবে –নিরীহ এ দাবি আদায়ের জন্য নিজের সীমিত গণ্ডির মধ্যেই যুদ্ধে নেমেছিল যেই মেয়ে? তালেবানের গুলিতে প্রায় প্রাণ হারাতে হয়েছিল যে পাকিস্তানি কিশোরীকে?
হ্যাঁ, এবার তাকে নিয়েই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এবং নারী শিক্ষার পক্ষে একটি গান বেঁধেছেন শায়লা ক্র্যাম৷ তাও আবার জঙ্গি গোষ্ঠি আল-কায়েদা আর তালেবান অধ্যুষিত পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বসে৷ স্থানীয় মানুষ যাতে সে গানের অর্থ, বিষয়বস্তু অনুধাবন করতে পারে – সে জন্য পশতু ভাষা শিখে তবে এ গানটি বেঁধেছেন তিনি৷ বলা বাহুল্য, সেটা খুব সহজ একটা কাজ নয়৷ শায়লা ক্র্যাম-এর নিজের কথায়, ‘‘পাকিস্তানে নারী অধিকার এবং মেয়েদের জন্য সার্বিক শিক্ষার বিস্তার – এই হলো এ গানের মূল উপজীব্য৷''
বলা বাহুল্য, এই নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে তালেবান জঙ্গিদের অবস্থানের সমালোচনা করেছিল মালালা ইউসুফজাই৷ ১১ বছর বয়সেই এ নিয়ে বিবিসি ব্লগে লিখে নজর কেড়েছিল সে৷ সে জন্যই চিরতরে তার মুখ বন্ধ করতে মালালাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল তালেবান৷ আজও ব্রিটেনের একটি হাসপাতালে পড়ে আছে এই মেয়ে, যুদ্ধ করছে নিজের জীবনের জন্য৷
শিক্ষা আন্দোলনের প্রতীক এই কিশোরীকে নিয়ে পাকিস্তানি সংগীত জগতের কিছু বন্ধু-বান্ধবের সহায়তায়, ইসলামাবাদের একটি বাংলো বাড়ির বাগানে এই গানের ভিডিও-ও তৈরি করেছেন ২৯ বছর বয়সি শায়লা৷ নিজের হাতেই তুলে নিয়েছেন গিটার৷
গানের মাধ্যমে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির এই অদম্য ইচ্ছা অবশ্য এবারই প্রথম নয়৷ এর আগে পশ্চিম আফ্রিকায় থাকাকালীন মারণব্যাধি এইচআইভি/এইডস নিয়েও গান বেঁধেছিলেন মিস. ক্র্যাম৷ টোগো-র একটি রেডিও-তে শিশু পাচারের বিরুদ্ধেও একটা সময় তিনি ছিলেন সক্রিয়৷
বুরাক রেডিও-র প্রধান রাশেদ সাফির মতো সমালোচকরা অবশ্য শায়লার মার্কিনি উচ্চারণের দিকে আঙুল তুলেছেন৷ মূলত আফগানিস্তানের ভাষা পশতুতে এই গান তৈরির ফলে, সেটা পাকিস্তানের মানুষকে আদৌ ছুঁতে পারবে কিনা – তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্বাভাবিকভাবেই৷ তবে ইংরেজি ভাষার দৈনিক ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন'-এর সংগীত বিষয়ক সাংবাদিক শের আলি বলেছেন, ‘‘শায়লার বক্তব্য একেবারে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন৷ কারণ, সমাজ পরিবর্তনের আসল চাবিকাঠি কিন্তু সেখানেই লুকোনো থাকে৷ তবে শায়লার সাফল্য নির্ভর করছে, তাঁর গান কতটা ‘এয়ার টাইম' পাবে – তার ওপর৷''
গানটি নিয়ে ফেসবুকের ‘পোস্ট'টি থেকে কিন্তু একটা কথাই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে৷ সেখানে প্রায় ৯৭ শতাংশ মানুষ গানটিকে ‘লাইক' করেছে৷ আর সেটা তারা করেছে ‘মার্কিন বিদ্বেষ' সত্ত্বেও!