1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মালদহে আবার গুলি, এবার নিহত এক তৃণমূল কর্মী

১৫ জানুয়ারি ২০২৫

মালদহে গুলিবিদ্ধ দুই তৃণমূল নেতা। এক কর্মীর মৃত্যু। পরিবারের অভিযোগ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই হামলা।

https://p.dw.com/p/4p8Q1
কালিয়াচকে গুলির পর আহত তৃমমূল নেতাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কালিয়াচকে গুলিতে গুরুতর আহত তৃণমূল নেতা।ছবি: Abhijit Banerjee

১২ দিন আগে মালদহে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তৃণমূল নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ঘনিষ্ঠ দুলাল সরকার। তখনো অভিয়োগ ছিল, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই দুলাল সরকারের মৃত্যু হয়েছে। এবার মালদহ জেলার কালিয়াচকে নয়াবস্তি এলাকায় নতুন তৈরি রাস্তা ও নিকাশি ড্রেনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গুলি চলে।

সেখানে ছিলেন নওদা যদুপুর এলাকার তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি বকুল শেখ। সেখানে হামলা করে বন্দুকধারীরা। তারা কাছ থেকে বকুল শেখের মাথায় গুলি করতে যায়। গুলি তার মাথা ছুঁয়ে চলে যায়। তখন এলোপাথারি গুলি চালানো হয়। সাবেক পঞ্চায়েত প্রধান এসারুদ্দিন গুরুতর আহত হন।  এ সময় গায়ে গুলি লাগায় হাসান শেখের মৃত্যু হয়।

দুই আহত নেতাকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

পুরো ঘটনাটা দিনেদুপুরে হয়েছে। সকলের সামনে হয়েছে। এমনকি আক্রমণকারীরা মুখ ঢেকেও আসেনি বলে স্থানীয় মানুষ জানিয়েছেন।

বকুল শেখের দাদা বলেছেন, কারা আক্রমণ করেছে তা একেবারে স্পষ্ট। তিনি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। বকুল শেখের অনুগামীদের দাবি, এই আক্রমণের পিছনে আরেক তৃণমূল নেতা জাকির শেখের হাত আছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেহবুব শেখ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ''ফিতে কেটে উদ্বোধনের পর ১৫-১৬ জন মিলে তৃণমূল নেতাদের ঘিরে ধরে মারধর করে, গুলি চালায়। এর মধ্যে ছিল জাকিরের ছেলে।''

স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার দখল নিয়ে বকুল শেখের সঙ্গে জাকির শেখের লড়াই চলছিল।

বকুল সরকারের ঘটনা

১২ দিন আগে মালদহ জেলার ইংরেজবাজার শহরের ঝলঝলিয়ায় তৃণমূল নেতা দুলাল সরকারকে খুন করা হয়। তিনি নিজের কারখানায় পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি।

আহত তৃণমূল নেতাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কালিয়াচকে গুলিতে আহত হন দুই তৃণমূল নেতা। একজন তণমূল কর্মী মারা যান। ছবি: Abhijit Banerjee

পুলিশ পরে মালদহে তৃণমূলের শহর সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পর তৃণমূল তাকে বহিষ্কার করে।

দুলাল সরকারকে খুনের পর মুখ্যমন্ত্রী সব দায় পুলিশের উপর চাপিয়ে দেন। পুলিশ কেন নেতাদের রক্ষা করতে পারে না, বলে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন।

তারপর এই খুন নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে। তৃণমূলের রাজ্য নেতারাও মালদহে যান। সেই মালদহেই আবার এই ঘটনা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্ন তুলে দিলো

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা অরিন্দম আচার্য বলেছেন, ''পরিস্থিতি কতটা ভয়ংকর তা সাধারণ মানুষ উপলব্ধি করতে পারছেন। আমাদের এর মূলে যেতে হবে। বাবলা সরকারকে মারার জন্য ৫০ লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছিল। কসবায় সুশান্তবাবুকে মারার জন্য অর্থ দেয়া হয়েছিল। এই অর্থ কি মঙ্গলগ্রহ থেকে কেউ পাঠাচ্ছে? এই টাকাটা আসছে কোথা থেকে?''

তার বক্তব্য, ''যারা টাকা দিয়ে হত্যা করাচ্ছে, সেই জায়গাটা যদি পুলিশ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে না ধরতে পারে, তাহলে তো এটা হবেই। এগুলো তো রাজনৈতিক হত্যা। এলাকা দখল করে টাকা কামাও। এক্ষেত্রে পুলিশ যদি ঠিক ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করতে পারে, দলমতনির্বিশেষে যদি এর মূলে যেতে না পারে, তাহলে তো এটা হবেই। এটাকে চরম ব্যর্থতা বলে আমি মনে করি।''

সাবেক ডেপুটি কমিশনার সত্যজিৎ বন্দ্য়োপাধ্য়ায় সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ''ঘটনা হচ্ছে, কালিয়াচক হলো খুবই উত্তেজনাপ্রবণ, স্পর্শকাতর ও অপরাধপ্রবণ এলাকা। কালিয়াচক থানা রাজ্যের মধ্যে বিখ্যাত। আরো গোয়েন্দা তৎপরতার দরকার ছিল। দুলাল সরকার মারা যাওয়ার পর এই ঘটনা নিন্দাজনক। পুলিশ বিভাগের উপর চাপ আসবে। খবরাখবর নিয়ে দোষীদের ঠিক সেকশনে মামলা দায়ের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার।''

দুলাল সরকারের হত্যার পর সাবেক পুলিশ কর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেছিলেন, ''রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী শাসকদলের এক নেতা খুন হওয়ার পর যখন পুলিশের দিকেই আঙুল তোলেন, তখন বোঝা যায়, সার্বিকভাবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে।''

মন্ত্রীর বক্তব্য

মালদহের নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেছেন, ''বিহার থেকে শুটাররা চলে আসছে, বাংলাদেশ থেকে চলে আসছে। নিশ্চয়ই এর পিছনে কিছু আছে। পুলিশ দেখছে। পুলিশই ব্যবস্থা নেবে।''

জিএইচ/এসিবি (টিভি৯, এবিপি আনন্দ)