মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার বুঝতে হচ্ছে বাংলাদেশকে
১৭ জানুয়ারি ২০২৩তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে তিনি বাইডেন প্রশাসনের নীতিকেই স্পষ্ট করেছেন৷ সামনের দিনগুলোতে সম্পর্কের ব্যাপারে এগুলোই মূল নিয়ামক হবে৷ তিনি রাজনীতি নিয়ে যা বলেছেন তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ আছে৷ হয়তো তিনি উচ্চস্বরে কিছু বলেননি, কিন্তু কূটনীতির ভাষা বুঝলে তার মধ্যে অনেক কিছু পাওয়া যাবে৷
তিনি যৌথ ব্রিফিং-এ সরাসরি বলেছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের একটা কমিটমেন্ট আছে, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার৷ আমরা যখন সমস্যা দেখি, তখন কথা বলি, পরামর্শ দেই৷ আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলি৷ আমরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই৷''
বিশ্লেষকদের কথা, এখানেই তিনি স্পষ্ট করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান৷ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যতই বিরক্তি প্রকাশ করা হোক না কেন, যতই এগুলোকে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলা হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের ব্যপারে কথা বলবেই৷
সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েছেন৷ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা যায় তার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলো বিএনপি নির্বাচনে আসবে কী না, সেই প্রশ্ন৷ আর না আসলে কী হবে তাও জানতে চান তিনি৷ সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলা হয়েছে৷ একই সঙ্গে বাংলাদেশে সুষ্ঠু এবং সবার অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে৷
সফরের শেষ দিনে ডোনাল্ড লু ঢাকার দুইটি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছে৷ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘বিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে সমাবেশ করার অধিকার দিতে হবে এবং কথা বলার মুক্ত পরিবেশ থাকতে হবে৷''
নির্বাচন নিয়ে লু বলেছেন, ‘‘একটি গ্রহণযোগ্য, সব দলের উপস্থিতিতে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র৷''
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ আলোচনার কথাও বলেছেন৷
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার নজরে রাখবে যুক্তরাষ্ট্র:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন, ‘‘গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত পররাষ্ট্র নীতি৷ এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সব দেশের জন্য৷ মার্কিন সহকারী মন্ত্রী ঢাকা সফরে তা পরিষ্কার করেছেন৷ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এটা নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে৷ সামনের দিনগুলোতে তারা এই ইস্যু নিয়ে আরো কথা বলবে৷ পর্যবেক্ষণে রাখবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘তবে এবারের সফরে আরো একটা বিষয় স্পষ্ট যে আগে শক্তিধরেরা যেভাবে চাপিয়ে দিতেন সেই দিন আর নেই৷ এখন তারা তাদের নীতি নিয়ে কাজ করেন কনভিন্সিং মুডে৷ আমাদের মনে রাখতে হবে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিধর দেশ৷''
তাদের অগ্রাধিকার বুঝে আমাদের এগোতে হবে:
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘আমার মনে হয় মার্কিন সহকারী মন্ত্রী বাংলাদেশে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনে এসেছিলেন৷ দেখবেন তিনি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন, জানতে চেয়েছেন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচন নিয়ে৷ তিনি জানতে চেয়েছেন বিএনপি নির্বাচনে আসবে কী না? না আসলে কী হবে? আমাদের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে৷''
‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেফারেন্স কী, তারা কী পছন্দ করে তা তিনি বলে দিয়েছেন৷ আর সেটা হলে গণতন্ত্র৷ এই গণতন্ত্রের মধ্যে আছে নির্বাচন, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা, শ্রম অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার৷ গণতন্ত্রকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন, যেখানে সব ধরনের অধিকারের কথা আছে৷ বাংলাদেশে এটাই সঞ্চারিত হোক তিনি তা চেয়েছেন৷''
‘‘এখন বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে হবে৷ আমরা যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক হোক বহুপাক্ষিক হোক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাই তাহলে এটা আমাদের করতে হবে,'' মনে করেন সাবেক এই কূটনীতিক৷
তিনি বলেন, ‘‘র্যাবের কথাই ধরুন, তারা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর র্যাব ইতিবাচক দিকে এগিয়েছে তাই নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আসেনি৷ এটা একটা ম্যাসেজ৷ এখন যদি নির্বাচন, গণতন্ত্র, অধিকার নিয়ে আমরা ইতিবাচক পথে হাটি তাহলে তারা এটা ভালোভাবেই নেবে৷ না হাটলে তারা সেটাকে ভালোভাবে নেব না৷ তাদের পথে হাটবে৷''
তার কথা, ‘‘এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার বুঝে আমরা যদি সেই দিকে যাই তাহলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ভালো হবে৷ অন্যথায় সন্দেহ আছে৷''
২০২২ সালের ছবিঘর