1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মামলা-কাউন্টার মামলার পর সমঝোতা

২৩ আগস্ট ২০২১

বরিশালের মেয়র এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মর্তার (ইউএনও) মধ্যে ঘটনার অবশেষে সমঝোতা হয়েছে৷ দুই পক্ষই মামলা নিয়ে আর এগোবে না, শেষ করে দেবে- এটাই সমঝোতার প্রধান শর্ত৷

https://p.dw.com/p/3zNuX
Bangladesch Coronavirus Justiz
ফাইল ফটোছবি: Mortuza Rashed/DW

এই সমঝোতার নেপথ্যে কাজ করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম৷ আর অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এই সমঝোতা মেনে নেয়ার কথা জানিয়েছেন ডয়চে ভেলেকে৷
রোববার রাতে বরিশালে এই সমঝোতা বৈঠকে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ উপস্থিত থাকলেও উপস্থিত ছিলেন না সদর উপজেলার  নির্বাহী কমর্কর্তা মুনিবুর রহমান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন,''আমার স্যাররা ছিলেন৷ তারা যা ভালো মনে করেছেন সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না৷ তাদের সাথেই কথা বলুন৷'' কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত বরিশাল জেলা প্রশাসনের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল আহসান বাদল, রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি আকতারুজ্জামান, পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান এবং জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনসহ আরো বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা৷ বৈঠক শেষে তারা একটি গ্রুপ ছবিও তোলেন যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে৷
সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে একটি প্রেস রিলিজও দেয়া হয়েছে৷ তাতে বলা হয়েছে, ‘‘১৮ আগস্ট রাতে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সাথে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভুল বোঝাবুঝির কারণে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে তা অবসানে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়৷ বৈঠকে অতীতের সব ভুল বোঝাবুঝি ভুলে নান্দনিক বরিশাল গড়ার লক্ষ্যে নগর প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন ঐক্যবদ্ধ এবং আন্তরিকতার সাথে কাজ করে মাননীয় প্রধামন্ত্রীর সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন৷''
বৈঠকে উপস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর সোমবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সমঝোতার বিষয় হলো ইউএনও এবং ওসির পক্ষ থেকে যে দুইটি মামলা করা হয়েছে এখন তারা এই মামলা নিয়ে আর এগোবে না৷ যেভাবে সম্ভব আইনগতভাবে দ্রুত নিস্পত্তি করবেন তারা৷ যেভাবেই হোক মামলা দুইটি আইনগতভাবে শেষ করে দেবেন৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা যে মামলা করেছি সেটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি৷ তারাও তোলেননি আমরাও কিছু বলিনি৷''
ইউএনও'র ওপর হামলার ঘটনায়  এই দুইটি মামলায়ই মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ হুকুমের আসামি ৷ মামলা দুইটিতে এরই মধ্যে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
এদিকে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও রবিবার দুপুরে ইউএনও এবং ওসিসহ ৪০-৫০ জন পুলিশ ও আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে আদলতে দুইটি মামলা করা হয়েছে৷ আদালত পিবিআইকে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন৷ সদর থানার ওসি নুরুল ইসলামকে অবশ্য ঘটনার একদিন পরই বদলির আদেশ দেয়া হয়৷
স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর উদ্যোগে রোববার রাতে সমঝোতা হলেও হামলার পর সরকার আসামিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপরে কঠোর নির্দেশ দেয়৷ কিন্তু অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি পরিস্থিতি পল্টে দেয়৷ তারা বিবৃতিতে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি শব্দ ব্যবহার করে মেয়রকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়৷ যা স্বাভাবিকভাবে নেয়নি সরকারি দল৷ এরপর ইউএনও এবং ওসির বিরুদ্ধে কাউন্টার মামলা হলে  দুই পক্ষের মামলা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলে সমঝোতার পথে হাটে প্রশাসন৷
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সোববার সন্ধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সিটি কর্পোরেশন যেহেতু আমার মন্ত্রণালয়ের তাই তাদের আমি বলেছি বিষয়টা সমাধান করতে৷ তারা নিজেরা বসেই সমঝোতা করেছেন৷ একটি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঘটনা ঘটেছে তারাও সেটা বুঝতে পেরেছেন৷ মামলা যেগুলো হয়েছে তারা নিজেরা বসে সামাধান করে ফেলবেন৷''
তিনি জানান, ‘‘প্রথমে তুচ্ছ ঘটনা ইউএনও সাহেব সমাধান করতে চেয়েছেন৷ তিনি না পারায় আওয়ামী লীগ নেতারা গেছেন,মেয়র সাহেব গেছেন তারপরও সমাধান হয়নি৷ তো এখন তারা সামাধান করতে পেরেছেন৷ নিজেরা বসে একসাথে খেয়েছেন, ছবি তুলেছেন৷ আর কোনো সমস্যা নেই৷''
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতিতে অনেক ভালো লোক আছে, কিছু মন্দ লোকও আছে৷ প্রশাসনের মধ্যেও কিছু লোক কখনো কখনো ভুল করে৷ এগুলো তো আছে৷ তবে তারা বিবৃতিতে তো বলেছে  তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অবিচল আস্থা রেখে সবাই দায়িত্ব পালন করছেন৷''
এনিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার সোমবার রাতে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সমঝোতা তো সমঝোতা৷ সমঝোতা হয়ে গেছে আবার কী!  কাজ করতে গেলে এক সঙ্গে অনেক সময় অনেক কিছু হয়৷ যদি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সবাই মিলে কাজ করে সেটাইতো ভালো৷ সমঝোতা হওয়ার পরে এটা নিয়ে আর কোনো আলোচনার দরকার আছে বলে আমি মরে করি না৷''
দুই পক্ষই মামলা তুলে নেবে এতে তিনি সন্তুষ্ট কী না জানতে চাইলে বলেন, ‘‘অবশ্যই৷''
১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল সদর উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যানার অপসারণ নিয়ে ইউএনওর বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে৷ পুলিশ গুলি করে৷ গুলি ও মারামারিতে ৩০ জনের মত আহত হন৷ এরপর বরিশালে কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলতে থাকে৷

তাজুল ইসলাম

একেএম জাহাঙ্গীর

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য