1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মানুষ প্রতিবাদ করা ভুলে যাবে’

১ জুন ২০১৭

সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদ করে মামলার শিকার হয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার৷ অভিযোগ – তিনি এবং আরেকজন সংস্কৃতি কর্মী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘কটূক্তি’ করেছেন৷

https://p.dw.com/p/2dyyz
Bangladesh Proteste in Dhaka
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. M. Ahad

হেফাজতে ইসলামসহ কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠীর দাবির মুখে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ন্যায় বিচারের প্রতীক নারীর ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা হয়৷ অবশ্য শনিবার রাতে ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হয়

সুপ্রিম কোর্টের সামনে লিলি ফোয়ারা থেকে ভাস্কর্যঅপসারণের প্রতিবাদ হয়৷ দেশের সুশীল সমাজ এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতিও দেয়৷ গণজাগরণ মঞ্চ শনিবার সন্ধ্যায় শাহবাগে ভাস্কর্য সরানের প্রতিবাদে মশাল মিছিল করে৷ সেখানে তারা ভাস্কর্যটি আবার স্থাপনের দাবি জানায়৷ মিছিলে সরকারবিরোধী স্লোগানও দেয়া হয়৷

এরপর সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের  পক্ষ থেকে শাহবাগে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘কটূক্তি’ করার প্রতিবাদে  মিছিল বের করে ইমরান এইচ সরকারকে শাহবাগে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়৷ মিছিল শেষে সমাবেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও পাঠচক্র ষিয়ক সম্পাদক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেখানেই ইমরান এইচ সরকার ও সনাতনকে (সংস্কৃতিকর্মী) দেখা যাবে, সেখানেই কুত্তার মতো পেটানো হবে৷’’

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ঢাকা ও গাজীপুরে মামলা হয় ইমরান ও সনাতনের বিরুদ্ধে৷ ঢাকার মামলাটি করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রব্বানী৷ তিনি আদালতে অভিযোগ করেন, ‘‘গত ২৮ তারিখ মশাল মিছিলে প্রধানমন্ত্রীকে যে কটূক্তি করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তিনি ক্ষুব্ধ বোধ করছেন৷’’ আদালত এই অভিযোগ আমলে নিয়ে ১৬ জুন ইমরান সরকারকে হাজির হতে বলেছে৷ গাজীপুরেও একই অভিযোগের মামলায় আদালত সমন দিয়েছে৷

‘পরিকল্পিতভাবে মানুষের মুখ বন্ধ করার একটা চেষ্টা’

এ নিয়ে ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের সমালোচনার ভাষা, প্রতিবাদের ভাষা সরকার ঠিক করে দেবে না৷ সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ করে, প্রতিবাদ জানায়৷ গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিবাদ ও স্লোগানের ভাষা শালীন৷ তারপরও এটা নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করার মানে হলো পরিকল্পিতভাবে মানুষের মুখ বন্ধ করার একটা চেষ্টা৷ আমরা যুদ্ধাপরাধ, ধর্ষণসহ আরো অনেক বিষয়ে কথা বলি৷ প্রতিবাদ জানাই৷ আমার কাছে বোধগম্য নয় একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ধরনের ফ্যাসিবাদী আচরণ কিভাবে সহ্য করা যায়৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার কাছে বোধগম্য নয় যে, কোর্ট প্রতিবাদী স্লোগান নিয়ে কিভাবে মামলা নিল৷ তাহলে মানুষ তো আর কথা বলবে না৷ প্রতিবাদ করতে পারবে না৷ এটা হয়রানিমূলক৷ এখন আমাকে রাস্তায় প্রতিবাদ বাদ দিয়ে যাতে আদালতে আদালতে ঘুরতে হয়, তারা সেই ব্যবস্থা করছে৷’’

ধারা অব্যাহত থাকলে মানুষ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে না: নূর খান

ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘‘নেতারা আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে৷ আদালতের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া৷ তা না করে উল্টো আমার বিরুদ্ধে মামলা নিচ্ছে৷’’

মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম নয়, আগেও হয়েছে৷ রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশে বাধা, মত প্রকাশের ওপর বাধা, শক্তি প্রয়োগ করে মুখ বন্ধ রাখা, মামলা দিয়ে হয়রানী করা– এগুলো অব্যাহতভাবে চলছে৷ ফলে এক ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে৷ এই ধারা অব্যাহত থাকলে মানুষ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে না৷ প্রতিবাদ করা ভুলে যাবে৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...