1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মানুষ করোনাকে পাত্তাই দিচ্ছে না’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২১ আগস্ট ২০২০

অনেক মানুষের মধ্যে করোনা সম্পর্কে এক ধরনের ‘ড্যাম কেয়ার ভাব’ দেখছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ৷ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার কারণ হিসেবে আরো কিছু বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/3hI7a
রোজার ঈদ করতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গ্রামে ফিরছে মানুষ৷ ছবিটি ২৩ মে তোলা৷ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশে করোনার সর্বশেষ অবস্থা কী?

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ : গত কয়েকদিনের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখবেন একই রকম৷ আক্রান্তের সংখ্যা দুই থেকে তিন হাজারের মধ্যে উঠানামা করছে৷ মৃত্যুর হারও কিন্তু তিন থেকে চারের ঘরে, অর্থাৎ ৩২, ৩৪ বা ৪০-এর কিছু উপরে-নীচে উঠানামা করছে৷ ফলে কমেনি৷ সংক্রমণের ঝুঁকি কয়েকদিনের মধ্যে বোঝা যাবে৷ মনে হচ্ছে বাড়ার আশঙ্কা খুব বেশি৷ কারণটা হলো ঈদের মধ্যে অনেক মানুষ গ্রামে গেছেন, আবার ফিরে এসেছেন৷ কোরবানির হাটে তো প্রচুর মানুষ গেছেন৷ শারীরিক দূরত্ব বা সামাজিক দূরত্ব একেবারেই মানেনি৷ স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানেন না৷ অনেকে মাস্কও পরে না৷ হাটে-বাজারে ঘোরাফেরা করে৷ ফুটপাত, রেস্টুরেন্ট, পার্ক সব জায়গায় অনেক লোকজন একসঙ্গে চলাফেরা করছে৷ এর ফলে আমার মনে হচ্ছে, সংক্রমণের ঝুঁকি আসলে বেড়ে যাচ্ছে৷

তাহলে সবকিছু খুলে দেওয়া হলো কেন?

এটাই তো বড় প্রশ্ন৷ আসলে জনগণের মধ্যে সহনশীলতা এসে গেছে৷ মানুষ করোনাকে পাত্তাই দেয় না৷ ভয় পায় না, ড্যামকেয়ার ভাব৷ উদাসীন ভাব৷ আসলে জনগণই এটা মানছে না৷ খুলে দেওয়ার চেয়ে আসলে বলা যায়, মানুষই খুলে নিচ্ছে৷ কারণ, মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য জীবিকা দরকার৷ এইসব কারণে মানুষ এগুলো মানছে না৷ অনেকেই মনে করছে, করোনা হয়তো কোনোদিন যাবে না৷ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবন-জীবিকার স্বার্থে এভাবেই চলতে হবে৷ এ জন্যই সরকারের তরফ থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে৷ লকডাউন যখন প্রথম দেওয়া হয়, তখন কিছুদিন মানুষ এটা মেনেছে, এরপর আর মানেনি৷ রেড, ইয়েলো বা গ্রিনজোন এগুলোও মানুষ মানেনি৷ মানুষকে আসলে কতদিন বন্দি করে রাখা যায়? আসলে এটা কবে যাবে আমরা তো জানি না৷ আদৌ কোনোদিন যাবে কিনা কেউ জানে না৷ ডাব্লিউএইচও তো বলছে, করোনা হয়তো কোনোদিনই যাবে না৷ অন্য অনেকগুলো ভাইরাস যেমন আছে, এটাও হয়তো থেকে যাবে৷ 

‘সংক্রমণের ঝুঁকি আসলে বেড়ে যাচ্ছে’

যখন সবকিছু বন্ধ করা হয়েছিল এখন কি তার চেয়ে ভালো অবস্থা?

পুরোপুরি তো আমরা বন্ধ রাখতে পারিনি৷ আল্টিমেটলি তো লকডাউন কার্যকর করা যায়নি৷ পরিস্থিতি একই রকম৷ খুব যে খারাপ হয়েছে তা-ও না৷ খুব যে ভালো হয়েছে তা-ও না৷

সরকার কি সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

আসলে রোগটা তো নতুন৷ সারা পৃথিবীতে কেউই জানতো না৷ এই রোগ সম্পর্কে আমাদের ভালো আইডিয়াও ছিল না৷ পৃথিবীর কোনো দেশই তো ভালোভাবে পারেনি৷ অ্যামেরিকা, ইউরোপসহ বড় বড় দেশ যারা উচ্চশিক্ষিত বা সামর্থ্য বা অর্থ, সবকিছুই তো ওদের ছিল৷ তারাও তো সামাল দিতে পারছিল না৷ সরকার কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো ভালোই নিয়েছে৷ আসলে তো কারো ধারণা ছিল না৷ শুরুতে তো কোনো ওষুধই ছিল না৷ এখন তো অনেকগুলো ওষুধ আছে যেগুলো ব্যবহার করলে ভালো হয় সেগুলো উন্নত দেশও ব্যবহার করছে, আমরাও করছি৷ কাজ করতে গেলে তো কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েই যায়৷ সারা দুনিয়াতেই হয়েছে৷ যদিও তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার কোনো সুযোগ নেই৷ তারপরও বলতে পারি, তুলনামূলক সংক্রমণের হার আমাদের এখনো কম, মৃত্যুর হারও কম৷ 

লকডাউন বা খুলে দেওয়া এই সিদ্ধান্তগুলো কি সঠিক সময়ে হয়েছে?

আসলে লকডাউন যেটা দেওয়া হয়েছে সেটা মানুষই মানে না৷ পৃথিবীর কোথাও মানে না৷ শুধু আমাদের দেশ না৷ শুরুতে কিছুদিন মানুষ মেনেছিল৷ এরপর আর মানে না৷ গত দুই ঈদে জনগণকে আমরা বারবার বলেছি, যে যেখানে আছেন সেখানেই ঈদ করেন৷ কিন্তু কেউ কথা শোনে না৷ এমনকি জার্মানির মতো দেশ, যারা উচ্চশিক্ষিত, সেখানেও (বার্লিনে) মিছিল বের হয়েছে৷ হাজার হাজার মানুষ মিছিল করেছে৷ তারা লকডাউন মানে না৷ অন্য একটি ইউরোপিয়ান দেশ যারা কার্ফ্যু দিয়েছে৷ কিন্তু সেটার বিরুদ্ধে মানুষ মিছিল করেছে৷ ইউরোপের অনেক দেশে এটা মানছে না৷ মানুষকে আসলে কতদিন বন্দি রাখা যায়৷ মানুষ এটা মানতে চায় না৷ 

একেক সময় একেক ধরনের সিদ্ধান্তে কি করোনার বিস্তৃতি বেড়েছে?

কিছুটা তো বেড়েছেই৷ কারণ, রোগটা তো মারাত্মক ছোঁয়াচে৷ মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে, ইচ্ছেমতো চলাফেরা করে, তাহলে তো বাড়ার ঝুঁকি থাকবেই৷ আমাদের পরপর দু'টি ঈদ গেল, গরুর হাট গেল, সেখানে তো স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই৷ এসব কারণেই তো বাড়ছে৷

আর কী করা উচিত ছিল, যেটা সরকার করেনি?

আমাদের সরকার তো যতটুকু পেরেছে চেষ্টা করেছে৷ প্রথমদিকে হয়তো আরেকটু কড়াকড়ি করতে পারতো৷ আসলে মানুষের বিপক্ষে তো কিছু করা যায় না৷ সবচেয়ে বড় কথা, জনগণ যদি তার দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে কী করা? সরকার বা প্রশাসন বলেন, তারা যে জোর করে মানাবে সেটার চেষ্টা কিন্তু শুরুতে ছিল৷ পরের দিকে তারাও সেটা করেনি বা করতে পারেনি৷ কারণ, আইন যদি প্রয়োগ করতে হয়, তাহলে নিরাপত্তা বাহিনীর সাহায্য নিতে হবে৷ সেক্ষেত্রে পুলিশ, র‌্যাব বা সেনাবাহিনী, বিজিবি তাদের কিন্তু অনেক লোক আক্রান্ত হয়েছে৷ অনেক পুলিশ সদস্য মারা গেছেন৷ ফলে তাদের মধ্যেও ভয়ভীতি বা শৈথিল্য ভাব এসে গেছে৷ ফলে প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল বা রয়ে গেছে, যার জন্য আমাদের এগুলো সফল হয়নি৷

করোনা মোকাবেলায় সরকারি উদ্যেগগুলো কতটা সফল বা ব্যর্থ?

সফল মানে যে শতভাগ সফল সেটা বলা যাবে না৷ আবার ব্যর্থ মানে যে পুরোপুরি ব্যর্থ সেটাও বলা যাবে না৷ বলা যায়, অনেকটা সফল, অনেকটা ব্যর্থ৷ জনগণের মধ্যে সহনশীলতা ভাব৷ আর জনগন মনে করে করোনা থাকবে৷ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই জীবন-জীবিকা চালিয়ে যেতে হবে৷ 

সরকার সবকিছু খুলে দিয়ে জীবন, নাকি জীবিকাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে?

দু'টোই সমস্যা৷ আপনার জীবনই যদি না বাঁচে তাহলে কার জন্য করবেন৷ আমাদের দেশে অনেক লোককে দেখেছি, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশেও আমি দেখেছি, যারা মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছে, আমরা তো করোনা বুঝি না, আমরা তো না খেয়ে মরছি৷ বিশেষ করে যারা নিম্ন আয়ের লোক তারা বলে, এটা আমাদের রোগ না, এটা বড়লোকের রোগ৷ ফলে জনগণের বিশাল একটা অংশ এ ব্যাপারে উদাসীন৷ তাদের জন্য পেট বাঁচানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ৷ বর্তমানে ২৫-৩০ জেলায় বন্যা হচ্ছে, মানুষ তো পানিবন্দি৷ দূষিত পানি খাচ্ছে৷ গৃহপালিত পশুর সঙ্গে একসঙ্গে থাকছে৷ তারা স্বাস্থ্যবিধি কী মানবে? তারা তো পেটের জ্বালায় অস্থির৷ ফলে তাদের মধ্যে তো করোনার কোনো চিন্তাই নেই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য