1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানব পাচারে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৮ জুন ২০১৭

মানব পাচার সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে৷ মার্কিন সরকারের ‘ট্র্যাফিকিং ইন পারসন' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌন ও শ্রম ক্ষেত্রে মানব পাচার বিষয়ে তদন্ত কমে গেছে৷

https://p.dw.com/p/2fZDm
ছবি: AFP/Getty Images

বাংলাদেশে মানব পাচারবিরোধী কাজে সক্রিয় মানবাধিকার কর্মী এবং অ্যাক্টিভিস্টরা মনে করেন, বাংলাদেশে মানবপাচার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ছে৷ আইন প্রয়োগে অস্বচ্ছতা ও অদক্ষতা ছাড়াও দারিদ্র্যের সুযোগ নিচ্ছে পাচারকারীরা৷

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভিক্টিমস অফ ট্র্যাফিকিং অ্যান্ড ভায়েলেন্স প্রোটেকশন অ্যাক্ট' অনুযায়ী, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়  মানবপাচার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর পাঁচটি ধাপে টিআইপি প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে৷ প্রতিবেদনে মানব পাচার মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের উদ্যোগ ও সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর ১৮৮টি দেশের র‌্যাংকিং করে থাকে৷

তাদের র‌্যাংকিংয়ের মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা পাচারের শিকার হন, তাদের প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ গ্রহণকারী দেশগুলো স্থান পায় প্রথম ধাপে (টায়ার ওয়ান)৷ পাচার রোধে সব উদ্যোগ না নিতে পারলেও উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণকারীদের স্থান হয় দ্বিতীয় ধাপে৷ ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয় ধাপে৷

নাসিমা খাতুন, যশোরের আইনজীবী

তবে ২০১৬ সালে এসে বাংলাদেশের অবস্থান নেমে গেছে৷ টায়ার টু থেকে বাংলাদেশ টায়ার টু'র পর্যবেক্ষণ তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ মার্কিন সরকারের বিধান অনুযায়ী, যেসব দেশ মানদণ্ড অর্জনের চেষ্টা করছে, কিন্তু কার্যকর ক্ষেত্রে তার পর্যাপ্ত প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়, তারা এই তালিকায় স্থান পায়৷ এইসব দেশে উল্লেখযোগ্য হারে মানুষ পাচারের শিকার হয় এবং পাচারের নানা পন্থা থাকে৷ বাংলাদেশের অবস্থান এই পর্যবেক্ষণ তালিকায় নেমে এসেছে৷

২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে যৌন ও শ্রম ক্ষেত্রে মানব পাচার বিষয়ে তদন্তের পরিমাণ কমে যাওয়াকে বাংলাদেশের অবস্থান নেমে যাওয়ার যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তাদের দাবি, মানবপাচার রোধে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে না বাংলাদেশ৷ আগের বছরের তুলনায় পাচারের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে৷

গত বছর বাংলাদেশ সরকার ১২২টি যৌন ও ১৬৮টি শ্রম সংক্রান্ত মানব পাচারের ঘটনা তদন্ত করে৷ অন্যদিকে ২০১৫ সালে যৌন সংক্রান্ত ১৮১টি ও শ্রম সংক্রান্ত ২৬৫টি পাচারের ঘটনা তদন্ত করা হয়৷ গত বছর এসব অপরাধে শাস্তির ঘটনা ছিল তিনটি, যা ২০১৫ সাল থেকে চারটি ও ২০১৪ সাল থেকে ১৫টি কম৷

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘‘পর্যবেক্ষকদের মতে, এসব ক্ষেত্রে শাস্তির ঘটনা খুবই বিরল৷ তদন্তের জন্য সরকার সুনির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত জনবল না দেয়া ও তাড়াহুড়ো করে মামলা শেষ করার প্রবণতার কারণে এবং প্রায় ক্ষেত্রেই যথেষ্ট প্রস্তুতির অভাবে বিচারকাজ কোনো ইতিবাচক ফল দিতে পারেনা৷''

‘বাংলাদেশে মানবপাচার রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘‘বিদেশগামী শ্রমিকদের কাছ থেকে উচ্চ হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে৷ সরকার ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ'কে ক্রমাগতভাবে বিদেশগামী শ্রমিকদের ওপর উচ্চ হারে ফি ধার্য করার সুযোগ দিচ্ছে, যা শ্রমিকদের দারিদ্র্য ও পাচারের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷''

প্রতিবেদনে অনুযায়ী, মানব পাচার রোধে বাংলাদেশ আগেরবারের তুলনায় কোনো পদক্ষেপ বৃদ্ধি করেনি৷ গত বছরের তুলনায় মানবপাচারের শিকারদের পুনবার্সন যথাযথ ছিল না৷ কয়েকটি এনজিও জানায়, অযত্নের কারণে কয়েকজন পুনরায় পাচারের শিকার হয়েছে৷

মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাস্তবিক অর্থেই বাংলাদেশে মানব পাচার রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ মানবপাচারের মামলাগুলোর তদন্ত, অপরাধীদের আটক এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার আইনি পদক্ষেপ খুবই দুর্বল৷ ফলে মানবপাচার বন্ধ হয় না৷  সরকার মুখে মানবপাচার রোধে অনেক পদক্ষেপের কথা বললেও বাস্তবে তার ফলাফল হতাশাব্যঞ্জক৷''

তিনি বলেন, ‘‘মানবপাচার, বিশেষ করে নারী ও শিশু পাচারের ঘটনায় রিসিভিং কান্ট্রির দায় বা দায়িত্ব আছে৷ তাদের সহায়তা ছাড়া এটা বন্ধ করা যায় না৷''

বাংলাদেশের নারী ও শিশু পাচারের একটি বড় রুট যশোর সীমান্ত৷যশোর জেলায় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হয়ে নারী ও শিশু পাচার রোধে কাজ করেন অ্যাডভোকেট নাসিমা খাতুন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গ্রামাঞ্চলে ডিভোর্সের শিকার নারী  ও তাদের ছেলে-মেয়ে এবং পোশাক  কারখানায় কাজ করা নারীরা পাচারকারীদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়৷ পাচারকারীরা তাঁদের দারিদ্র্যের সুযোগ নেয়৷ যাঁরা ডিভোর্সের শিকার হন, তাঁদের বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়৷ সঙ্গে তাঁদের শিশু সন্তানও পাচার হয়৷ অন্যদিকে পোশাক কারখানায় কর্মরত নারীসহ দরিদ্র তরুণীদের প্রেমের ছলে, বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়৷''

নাসিমা খাতুন বলেন, ‘‘পাচার কমছে না৷ চলতি মাসেই ৩১ জনকে ফেরত এনেছি আমরা৷ তাঁদের মধ্যে ২১ জনই  মুম্বাই থেকে এবং বাকিরা কলকাতা থেকে ফেরত আসেন৷ এই নারীদের বয়স ১৫ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এরা প্রধানত আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে পাচার হয়৷ ফলে ফিরে মামলা করতে চায় না৷ আর যদি মামলা হয়, তাহলে আসামিরা জামিনে ছাড়া পেয়ে পাচারের শিকার পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য করে৷ তাছাড়া আদলতের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে মামলা ঝুলে থাকে৷ পুরো যশোরে মানব পাচারের মামলার বিচারের জন্য মাত্র একটি আদালত আছে৷ এটাও কোনো আলাদা কোর্ট নয়৷ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত৷ আমার হাতেই আছে ৬০টি মামলা৷''

মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন৷ তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বে ২ কোটি মানুষ পাচারের শিকার৷ এটি জননিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি৷ মানবপাচার রোধে সব দেশকে এগিয়ে আসার আহ্বানু জানান তিনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য