মাদ্রাসা শিক্ষকদের রাজনীতি কি নিষিদ্ধ হচ্ছে?
২ অক্টোবর ২০১৮জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আইনের খসড়া যাচাই-বাছাই কমিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে উত্থাপন করা হবে৷ এরপর মন্ত্রিসভা খসড়া অনুমোদন করলে সংসদে বিল উত্থাপনের প্রশ্ন আসবে৷
জানা গেছে, ১৯৭৮ সালের মাদ্রাসা শিক্ষা অর্ডিন্যান্সকে আইনে রূপান্তরের পাশাপাশি তা ‘যুগোপযোগী' করা হচ্ছে৷ কারিগরি ওমাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগেরসহকারী সচিব মো. আব্দুল খালেক গত ১৭ সেপ্টেম্বর আইনের সারসংক্ষেপসহ চূড়ান্ত করা খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছেন৷ এর আগে গত বছরের এপ্রিলে প্রথম খসড়া পাঠানো হয়৷
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আইন ২০১৮-এর খসড়ার চতুর্থ পরিচ্ছেদের বিবিধ বিভাগের ২৯ ধারায় মাদ্রাসা শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলী উল্লেখ করা হয়েছে৷
২৯। মাদরাসা শিক্ষকগণের চাকরির শর্তাবলী
১. কোনো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মাদ্রাসার একজন চাকুরে নিম্নলিখিত চাকরির সাধারণ শর্তাবলী দ্বারা আবদ্ধ থাকবেন, যথা
ক) তিনি কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ, সহায়তা দান বা যোগদান করতে পারবেন না৷ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার গণঅন্তোষ সৃষ্টি করতে পারবেন না৷ জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে শত্রুতা, বা বিভেদ সৃষ্টি হয় কিংবা জনশান্তি বিঘ্নিত হয়, এমন কোনো কাজে জড়িত হতে পারবেন না৷
খ) কোনো শিক্ষক , কর্মচারী স্থানীয় সরকার পদ্ধতির কোনো নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিতে, প্রভাব সৃষ্টি করতে কিংবা প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না৷
২. উপধারা (১)-এর বিধানের শর্তাবলী ভঙ্গজনিত কারণে কর্তৃপক্ষ শর্ত ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে চাকরি হতে অপসারণের ব্যবস্থাসহ শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে৷
৩.উপধারা (২)-এর অধীন কর্তৃপক্ষের আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট আপিল করতে পারবেন৷ চেয়ারম্যান যে ধরনের আদেশ দান করবেন, সেই ধরনের আদেশ চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে৷
২০১৭ সালের এপ্রিলে শিক্ষামন্ত্রনালয়ের মাদ্রাসা শাখা থেকে এই আইনের খসড়া পঠানোর পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি যাচাই বাছাই কমিটি এ নিয়ে কাজ করে৷ আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভায় তোলার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে৷ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খসড়া আইনে মাদ্রাসা শিক্ষকদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ আমরা এটা নিয়ে বসবো৷''
প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি৷ তিনি বলেন, ‘‘খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আমার কাছে এসেছে৷ সেটা দেখছি৷ এই খসড়া নিয়ে আজ(মঙ্গলবার) একটি বৈঠক আছে৷ তার আগে আমি এ নিয়ে কিছু বলতে পারবো না৷''
মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড নিয়ে এই আইন হলেও এ ব্যাপারে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ছায়েফ উল্লাহ কিছু জানেন না বলে ডয়চে ভেলে'র কাছে দাবি করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকার আইন করছে৷ আইনে কী হচ্ছে আমি জানি না৷ এটা আমাদের বিষয়ও না৷ সরকার কী আইন করবে, কী করবে না এটা আমার জানার বিষয় না৷'' তিনি এ ব্যাপারে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে যোগাযোগের পরমর্শ দেন৷
এরপর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনিও এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘ওটা একটা নতুন আইন হচ্ছে৷ অর্ডিন্যান্স পরিবর্তন করে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড আইন হচ্ছে৷ এটা মাদ্রসা শিক্ষা বোর্ডের বিষয়৷ তারা বলতে পারবেন৷''
এ নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা হয় ঢাকার উত্তর বাড্ডা ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন মোল্লার৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই প্রস্তাবিত আইন নিয়ে এখনো আমাদের কোনো মতামত চায়নি সরকার৷ তাই এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য বরতে চাই না৷ নতুন একটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছে৷ আমরা সেটা অনুযায়ী চলছি৷ সেখানে অনুমোদনপ্রাপ্ত মাদ্রাসার শিক্ষকরা রজনীতি করতে পারবেন কী পারবেন না, তা নিয়ে কিছু বলা হয়নি৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এখনো তো কোনো আইন করে বলা হয়নি যে, মাদ্রাসার শিক্ষকরা রাজনীতি করতে পারবেন না৷ বহু মাদ্রাসার শিক্ষক রাজনীতি করছেন৷ তাঁরা এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন৷ তাঁরা বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতা৷ এখন বহু জনপ্রতিনিধি আছেন মাদ্রাসার শিক্ষক৷ যদি সরকার এ ব্যাপারে কোনো আইন করে বা কোনো ফোরামে আলোচনার জন্য তোলে, তখন মতামত দেয়া যাবে৷ এখন মতামত দেয়া বাস্তবভিত্তিক হবে না৷''
মাদ্রাসা শিক্ষকদের রাজনীতি করা দোষের হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ কেউ তো আমাকে জিজ্ঞেস করে রজনীতি করবে না বা রাজনীতি ছাড়বে না৷''
প্রস্তাবিত মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আইন ২০১৮-এর খসড়ায় মোট ৪৩টি ধারা৷ এরমধ্যে শুধু ২৯ ধারায়ই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির সাধারণ শর্তাবলীতে শিক্ষকদের রাজনীতিতে অংশগ্রণ না করার প্রসঙ্গ এসেছে৷