মাদিবা'র জন্য
১০ ডিসেম্বর ২০১৩জোহানেসবার্গের রাস্তায় রাস্তায় মানুষ গান গাইছেন, নাচছেন অথবা শোক করছেন৷ কোথাও তিল ঠাঁই নেই৷ বৃষ্টি উপেক্ষা করে জাতীয় পতাকা হাতে সবাই ছুটছেন এফএনবি স্টেডিয়ামের দিকে৷ কেননা তাদের প্রিয় মাদিবার স্মরণসভা সেখানে৷
স্টেডিয়ামের গেট খোলার অনেক আগে থেকে শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন স্টেডিয়ামের বাইরে৷ তাদেরই একজন মার্কেটিং এর ছাত্র মাতলহঙ্গোনোলো মোথোয়াগায়ে৷ তিনি বললেন, মাদিবা না থাকলে এই দিনটি দেখার সৌভাগ্য তার হত না৷ তিনি কারাভোগ করেছেন বলেই আজ তাদের মুক্তি মিলেছে৷ একটি স্বাস্থ্যবিমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী রোহান লেয়ার্ড বললেন, ‘‘তাঁর মতো নেতা বিশ্বে আর একটিও নেই৷''
দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের প্রতি সম্মান জানাতে সোমবার বিশেষ অধিবেশন বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্টে৷ এই অধিবেশনে আমন্ত্রণ জানানো হয় দেশটির সর্বশেষ শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্ককে৷
আজ থেকে ২০ বছর আগে ঠিক এই দিনটিতেই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ম্যান্ডেলা৷ এফএনবি স্টেডিয়ামের আজকের স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন৷ ছিলেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক তিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন ও জিমি কার্টার৷ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী, কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ১০০ দেশের সাবেক ও বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানেরা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন৷ এছাড়া কয়েকটি দেশের রাজা, রানি, পুরোহিতও যোগ দেন স্মরণ সভায়৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রের জ্ঞানী-গুণী বিশিষ্টজনেরাও এসেছিলেন৷ সেইসাথে স্ত্রী গ্রাসা ম্যাচেল, সাবেক স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলা এবং তিন কন্যা, ১৮ জন নাতি-নাতনি এবং তাদের ১২ ছেলে-মেয়ে যোগ দেন স্মরণ অনুষ্ঠানে৷
স্পোর্টস একাডেমির কর্মকর্তা শাহিম ইসমাইল বললেন, ‘তিনি ঈশ্বর প্রদত্ত, ঈশ্বরই তাঁকে গ্রহণ করেছে৷ আমরা কখনোই তাঁকে স্মরণ করতে ভুলব না৷'
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জেকব জুমা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ সহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান৷ শোক জানান তাঁর পরিবারের সদস্যরা৷ নোবেল জয়ী ডেসমন্ড টুটু ম্যান্ডেলাকে ‘জাদুকর' হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতির চিত্র পাল্টে দিয়েছেন তা অবিশ্বাস্য৷
২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের সমাপনী অনুষ্ঠান দেখতে জোহানেসবার্গের এই এফএনবি স্টেডিয়ামেই শেষবারের মতো হাজির হয়েছিলেন ম্যান্ডেলা৷ স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৯৫ হাজার৷ প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানাতে আসা সব মানুষকে অবশ্য এই স্টেডিয়ামে ঠাঁই দেওয়া সম্ভব না৷ তাই জোহানেসবার্গেরই অন্য তিনটি স্টেডিয়ামে বসানো হয়েছে বিশালাকৃতির টেলিভিশন পর্দা৷ এতে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষ সরাসরি দেখতে পেলেন এফএনবি স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠান৷
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এই মহানায়ক মৃত্যুবরণ করেন গত ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ৯৫ বছর বয়সে৷ এরপর ১০ দিনের শোক-শ্রদ্ধা আর স্মরণ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানটি হল আজ৷
বুধবার থেকে তিন দিন সকাল-সন্ধ্যা ম্যান্ডেলার মরদেহ রাখা হবে প্রিটোরিয়ার ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ে৷ এরপর আরও কয়েক দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ১৪ ডিসেম্বর শনিবার প্রিটোরিয়া থেকে মরদেহ নেওয়া হবে ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের কুনু গ্রামে৷ নিজের এই জন্মস্থানেই রোববার সমাহিত করা হবে দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের প্রিয় মাদিবাকে, চিরবিদায় নেবেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এই মহান নেতা৷
এপিবি/জেডএইচ (এপি,এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)